সুন্দর কথা বক্তার ব্যক্তিত্ব তৈরি করে; সুবচন - Shajgoj

সুন্দর কথা বক্তার ব্যক্তিত্ব তৈরি করে; সুবচন

গুছিয়ে কথা বলতে না পারার অন্যতম কারণ হল খুব বেশি নার্ভাস বা বিচলিত হওয়া। আপনি কথা বলার আগেই ধরে নেন যে অন্যজন হয়তো কথাটা খারাপ ভাবে নিবে। অনেকে কখন কী বলে ফেলে তার নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনা। অনেকের আছে তোতলানোর স্বভাব। আবার কেউ কোন জায়গায় কী রকম ভাষাতে কথা বলতে হবে বুঝতে পারে না, তাই অনেকেই পেশাগত কাজে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে ফেলে।

কথার ধরনে মানুষের ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠে। চলুন জেনে নেই সুন্দর কথা বলার কিছু উপযোগী পরামর্শ।

  • পারতপক্ষে শ্রোতার মুখের দিকে কম তাকাবেন। পুরো ফোকাসটা নিজের কথায় দিন। আর নিজের মুখের এক্সপ্রেসনে কন্ট্রোল আনুন। এক্সপ্রেসন খুব খারাপ একটা জিনিস, আবার খুব ভালোও। আপনি ভালো কথা বলবেন কিন্তু এক্সপ্রেসন  ঠিক দিবেন না, আপনার কথা খারাপ ভাবে নিবে। আবার খারাপ কথা ভালো  এক্সপ্রেসন নিয়ে বলুন, কিছু মনেই করবে না।
  • যা বলতে চান সেটা আগে একটু ভেবে নিন , তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে স্পষ্ট করে বলুন। খেয়াল রাখবেন যা বলছেন তাতে যুক্তি আছে কতটা। আর একটা ব্যাপার অন্যকে তির্যক মন্তব্য না করে আপনার কথা বলুন।
  • বেশি করে বই পড়ুন। উচ্চারণ ঠিক করুন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলুন দেখবেন নিজের প্রতি আস্থা ও সাহস বাড়বে।
  • আপনি যে বিষয় কথা বলবেন সে বিষয়ের উপর আপনার জানা থাকতে হবে।
  • শুনতে হবে বেশি এবং বলতে হবে কম। তাই বলার আগে সচেতন হোন কখন, কাকে কী বলে ফেলেছেন। কথা বলার চেয়ে শোনার প্রতি বেশি মনোযোগী হোন। কারণ ভালো বক্তার চেয়ে ভালো শ্রোতা অন্যকে বেশি আকৃষ্ট করে। হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, যখন তুমি বলে ফেলেছো তখন তোমার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। অতএব তুমি তোমার জিহ্বাকে পাহারা দাও যেভাবে পাহারা দাও স্বর্ণ ও রোপ্যকে।
  • তোতলানো স্বভাব থাকলে তার জন্য হতাশ হবেন না। চেষ্টা এবং চিকিৎসায় এটি সময়ের সাথে চলে যায়। আর জন্য জনসম্মুখে কথা বলতে ভয় কাজ করলে তা দূর করার চেষ্টা করুন, কথা বলার সময় তোতলানো প্রবণতা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন। পত্রিকা পড়ুন, গান শুনুন এবং গান গাইতে হবে। এতে তোতলানো দূর হয়। দুশ্চিন্তা দূর করুন। কথা বলার সময় তাড়াহুড়া করা যাবে না, দৈনন্দিন জীবনে আপনার আশেপাশের মানুষের কথা মনোযোগ সহকারে শোনার চেষ্টা করুন। স্বাভাবিক কথা বলা ও তোতলানোর মধ্যে পরিষ্কার কোনো পার্থক্য নেই। এই অভিজ্ঞতা আপনার মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
  • গুছিয়ে কথা বলার প্রথম ধাপে কম কথা বলবেন, কম মানে হলো ঠিক যতটুকু প্রয়োজন বলার ভেবে নিবেন, বাড়তি কোনো কথা বলবেন না। খুব ইচ্ছা করলেও ২ লাইন বাড়িয়ে কথা বললে ঐটা অভ্যাস এ দাঁড়িয়ে যায়। এই প্র্যাকটিস চলতে থাকলে দেখবেন একসময় আপনি অনেক গুছিয়ে কথা বলা শিখে গেছেন।

এছাড়াও যা অবশ্যই করবেনঃ

  • সালাম দিয়ে কথা বলুন।
  • হাসি মুখে কথা বলুন।
  • প্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, পারিপার্শ্বিক পরিমণ্ডলে কথা বার্তায় আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা ত্যাগ করুন।
  • সম্মান রেখে বা শ্রদ্ধাপূর্ণ কথা বলুন।
  • বিনয় ও মমতাপূর্ণ কথা বলুন। আন্তরিক বিনয় সকল সৎ গুণের উৎস।
  • কৃতজ্ঞতাপূর্ণ কথা বলুন। যে মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারে না সে আসলে স্রষ্টার প্রতিও কৃতজ্ঞ নন। তাই প্রথম সুযোগেই অন্যের যেকোনো শুভ সংবাদে অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ জানাবেন।
  •  দৈনন্দিন কথায় নেতিবাচক কথা ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ নেতিবাচক কথা হতাশা সৃষ্টি করে এবং শূন্যতা তৈরি করে।
  •  বিতর্ক করবেন না। এর মানেই আরেক পক্ষকে হেয় করা। হেয় বা অসম্মান করে আসলে কখনও কারো হৃদয়কে জয় করা যায় না। বুদ্ধিমান মানুষ কখনও বিতর্কে লিপ্ত হয় না বরং তারা বুদ্ধিকে ব্যবহার করে বিতর্ক এড়ানোর জন্যে।
  • কোমল ভাবে কথা বলুন। এতে মানুষ আপনার কথায় মনোযোগ দিবে এবং মানবে।
  • বুঝে কথা বলুন, কাকে কী বলছেন। যেন হিতের বিপরীত না হয়।
  • কোরআনে আছে, তোমরা অনুমান করে কথা বলো না। কারণ অনুমান করে কথা বলা হচ্ছে জঘন্য মিথ্যাচার।
  • আমরা কৌতূহলী হবো কিন্তু কৌতূহল যেন অভদ্রতার পর্যায়ে না পড়ে।

একটি ভালো কথা এমন একটি ভালো গাছের মতো, যার শেকড় রয়েছে মাটির গভীরে আর শাখা-প্রশাখার বিস্তার দিগন্তব্যাপী, যা সারা বছর ফল দিয়ে যায়। একটু সচেতন প্রচেষ্টা চালালেই আপনার একটি সুন্দর কথা ঐ গাছটির মতো হতে পারে, শান্তি ও কল্যাণের বাহন হতে পারে।

লিখেছেনঃ সোহানা মোরশেদ

ছবিঃ গার্লিবিজ.কম

 

 

 

8 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort