বিয়ের পরে শ্বশুর-শাশুড়ি ছেড়ে আলাদা থাকতেই হবে? - Shajgoj

বিয়ের পরে শ্বশুর-শাশুড়ি ছেড়ে আলাদা থাকতেই হবে?

885900_756274021101373_27563698149608364_o

ছেলে-মেয়ে যখন ছোট থাকে তখন বাবা-মায়ের হাত ধরে সে প্রথম মাঠিতে পা দিয়ে হাঁটা শুরু করে । মা-বাবা দুইজনের মধ্যে যে যখন সময় পান তখন তাদের সেই সময়টুকু নিজেদের বিশ্রামকে বাদ দিয়ে ছেলে-মেয়েদেরকে দেন। কখনও তাদের লেখা পড়া করান, কখনও ছেলে-মেয়েদের সাথে খেলা করেন।

পরিবারের স্বচ্ছলতা থাকলে কখনও ছেলে-মেয়েদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অথবা স্বামী-স্ত্রী ছাড়া ওই শহরে আর কেউ থাকে না এই সব নানাবিধ কথা চিন্তা করে মা তার পেশাগত ভবিষ্যত ত্যাগ করেন। অনেক সময় খুব ভালো পেশায় থাকা সত্ত্বেও ছেলে-মেয়েদের জন্য সেটা ত্যাগ করেন।

[picture]

এই ছেলে-মেয়ে যখন বড় হয়, মেয়ে বিয়ের পর নিজের শ্বশুড় বাড়ি আর ছেলে চাকরী শুরু করে। যখন স্বাবলম্বী হয়ে যায় তখন তাকেও মা-বাবা বিয়ে দিয়ে তার নিজের পরিবারের ব্যবস্থা করে দেন। এরপর মা-বাবার অফুরন্ত সময় থাকে হাতে। তাইতো তারা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এই সময়টা তাদের ছেলে-মেয়েদের সন্তানের সাথে কাটাতে চান। সেটাও কোন সমস্যা নয় ।

সমস্যাটা হয় তখনই যখন মা-বাবা ছেলের বাড়িতেই শুধু তাদের থাকার অধিকার মনে করেন । কারণ ছেলের বউ তাদের আত্মীয় না তাই অন্যের ভুল ধরাটা অনেক সহজ হয়। আবার মেয়েটির নিজের বাবা-মা না হওয়ার কারণে সেও বুঝতে পারে না – কী তাদের পছন্দ, কী তাদের অপছন্দ! তাই সে ভুল করে ফেলে আর শ্বশুর-শ্বাশুড়ী সেই ভুলটাকে খুব বড় করে দেখেন। তাদের এই বড় করে দেখার কারণে বউ নামক মানুষটা আরও বড় বড় ভুল করতে থাকে। বাড়তে থাকে সংসারে অশান্তি। এই সময় তারা যদি বউ এর ভুলকে বড় করে না দেখেন এবং নিজের সন্তানের ভুল উপেক্ষা করার মত করেই বউকে একটু সময় দেন, তাহলে তাদের চাওয়া-পাওয়া মেয়েটা বুঝতে পারে এবং সেক্ষেত্রে সমস্যা বাড়ে না। একসময় বউটি শ্বশুর-শ্বাশুড়ীকে তার বাবা-মায়ের জায়গায় বসিয়ে ফেলে। তাদের মধ্যে একটা আত্মীক সম্পর্ক গড়ে উঠে।

এখন আসি, ছেলেদের ক্ষেত্রে। সব ছেলেই তার মা-বাবকে খুব ভালো করে জানে এবং চেনে, কারণ তার জন্ম উনাদের থেকেই। তাই বউয়ের উপর মা-বাবার নির্ভরতা সে চাইলে কমাতে পারে। মা-বাবার ঔষুধ পত্র থেকে শুরু করে তাদের চাহিদার দিকে সে নিজেই যদি খেয়াল করে তাহলে বউয়ের উপর, অর্থাৎ পরের বাড়ীর মেয়েটির উপর তাদের নির্ভরতা অনেকাংশে কমে যেতে পারে। কিন্ত ছেলেরা বিয়ের পর মনে করে তার পরিবারের সব দায়িত্ব শুধুমাত্র এই বউ নামক পরের বাড়ির মেয়েটির। ছোটবেলা থেকেই আমরা সবাই এই প্রবাদ শুনে বড় হয়েছি, মা এর চেয়ে বেশী সন্তানকে যে ভালোবাসে সে হল ডাইনী । তাহলে নিজের সন্তানের চেয়ে কীভাবে পরের বাড়ির একটা মেয়ে তাদেরকে বেশী ভালোবাসতে পারবে? যদি কোনও বউ সেটা দেখায় তাহলে প্রবাদ অনুযায়ী ওই মেয়েকে (বউ) ডাইনী বলার কথা। কিন্ত তাকে তখন ডাইনী বলা হয় না। বরং সে যখন তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর চাওয়া-পাওয়া বুঝতে পারে না, তাদেরকে ঠিকমত যত্ন নিতে পারে না, তখন ছেলেকে নয় ওই মেয়েকেই ডাইনী বা খারাপ বউ বলা হয়। এই সুযোগের সৎ ব্যবহার করেন কিছু আত্মীয়। তখন ছেলেটির সংসারই শুধু ভাঙ্গে না মেয়েটির সংসার এবং তার ছোটবেলার পুতুল খেলার সংসারের যে স্বপ্ন এবং আনন্দ সেটাও ভেঙ্গে যায়। আর এইভাবেই আমরা হারিয়ে ফেলছি পরিবার প্রথা ।

আসুন আমরা আর একটু সহনশীন হই। নতুন যে মেয়েটি আপনার বাড়ীতে এসেছে তাকে একটু সময় এবং তার ভুলগুলিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে তাকে কাছে টেনে নিন। দেখবেন আপনারা যেমন শান্তিতে থাকবেন একই সাথে আপনার সন্তানও শান্তিতে থাকবে । আর নতুন প্রজন্ম পাবে দাদা-দাদীর আদর।

লিখেছেন – রোকসানা হাবীব লুবনা, বামিংহাম (ইংল্যান্ড)

মডেল- পুনম ও তার শাশুড়ি

3 I like it
2 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort