ত্বকের যত্নে কাঁচা দুধ | শুষ্ক,স্বাভাবিক ও তৈলাক্ত স্কিনের জন্য ১টিই উপাদান

ত্বকের যত্নে কাঁচা দুধ | ৩ ধরনের স্কিনের জন্য একটিই উপাদান

ত্বকের যত্নে কাঁচা দুধ- shajgoj.com

প্রাচীন মিশরের রাণী অপূর্ব সুন্দরী ক্লিওপেট্রার কাঁচা দুধে গোসলের গল্পতো কমবেশি অনেকেই শুনেছি আমরা। সৌন্দর্যচর্চায় কাঁচা দুধের ব্যবহার কিন্তু প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। কাঁচা দুধের ক্লিঞ্জিং, টোনিং আর ময়েশ্চারাইজিং প্রোপার্টি-এর কারণে আপনার ত্বকের ধরণ যেমনই হোক না কেন কাঁচা দুধ ব্যবহার করলে স্কিন-এ গ্লো ফিরে আসবেই। চলুন তাহলে এক নজরে দেখে নেয়া যাক, ত্বকের যত্নে কাঁচা দুধ আমাদের কিভাবে যাদুর পরশ ছোঁয়ায়!

ত্বকের যত্নে কাঁচা দুধের কার্যকারীতা

ত্বকের যত্নে কাঁচা দুধের কার্যকরীতা বলে শেষ করা যাবে না। তবুও আপনাদের সামনে ১০ টি কার্যকরী উপায় তুলে ধরলাম-

(১) ক্লিনজার হিসেবে 

অল্প একটু তুলো নিয়ে সেটা কাঁচা দুধে ভিজিয়ে পুরো মুখ আস্তে আস্তে মুছে নিন। তুলোতে যে কী পরিমাণ ময়লা উঠে আসবে, সেটা দেখে আপনি নিজেই অবাক হবেন। ক্লিনজার হিসেবে ত্বকের যত্নে কাঁচা দুধ আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে কার্যকরী উপাদান।

(২) ত্বকের আসল রঙ ফিরিয়ে আনতে

ত্বকের ত্বকের আসল রঙ ফিরিয়ে আনতে কাঁচা দুধ ও লেবুর রসের মিশ্রণ - shajgoj.com

অনেকেরই ময়লা জমে, বা রোদে পুড়ে গায়ের রঙ নষ্ট হয়ে যায়। দুই চা চামচ কাঁচা দুধে ১ চা চামচ লেবুর রস মিক্স করে পুরো মুখে, গলায়, হাতে, পায়ে লাগিয়ে আধঘণ্টার জন্য রেখে দিন। যদি আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয়, তাহলে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। আর যদি ত্বক শুষ্ক হয়, তাহলে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটায় মুখ ধুয়ে নিন। ত্বকের যত্নে কাঁচা দুধ নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের রঙে সামঞ্জস্যতা আসবে এবং উজ্জ্বল হবে।

(৩) শুষ্ক ত্বকের ডিপ ময়েশ্চারাইজার হিসেবে

যাদের স্কিন অনেক বেশি ড্রাই, তারা রাতে ঘুমোতে যাবার আগে একটা তুলোর বল কাঁচা দুধে ভিজিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ঠাণ্ডা পানির ঝাপটায় মুখ ধুয়ে নিন। এবার আপনার পছন্দের ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে উঠে নিজের নরম, কোমল আর দীপ্তিময় ত্বক দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাবেন!

(৪) রোদে পোড়াভাব দূর করতে

একটা পাতলা কাপড় কাঁচা দুধে ভিজিয়ে নিঙরে রোদে পোড়া স্কিন-এর (মুখ, গলা, হাত, পা) উপর আধ ঘণ্টার জন্য রেখে দিন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন ব্যবহারে রোদে পোড়াভাব আস্তে আস্তে কমতে থাকবে।

(৫) স্ক্রাব হিসেবে

চালের গুঁড়োর সাথে কাঁচা দুধ আর মধু মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে নিন। সপ্তাহে কমপক্ষে ২-৩ দিন এটা দিয়ে স্কিন-কে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করে স্ক্রাবিং করে নিন ১০ মিনিটের জন্য। স্কিন-এর ডেডসেলসগুলোকে দূর করে স্কিনকে আরো বেশি উজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত দেখাতে সাহায্য করবে।

(৬) উজ্জ্বল ত্বক পেতে

বেসন, একটুখানি কাঁচা হলুদ গুঁড়ো, কাঁচা দুধ মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে লাগাতে পারেন। ত্বকের কালচেভাব দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করবে।

(৭) ব্রণের দাগ দূর করতে

দুধ আর মধু একত্রে মিশিয়ে আধ ঘণ্টার জন্য লাগিয়ে রাখুন। আধঘন্টা পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। আস্তে আস্তে দাগ চলে যাবে।

(৮) ঠোঁটের কালচেভাব দূর করতে

ঠোঁটের কালচেভাব দূর করে কাঁচা দুধ - shajgoj.com

ঠোঁটের কালচেভাব দূর করতেও কাঁচা দুধের জুড়ি নেই। তুলোর বলে ৫ মিনিট ধরে কাঁচা দুধ নিয়ে ঠোঁট মুখে ভালো মানের লিপবাম অ্যাপ্লাই করুন।

(৯) দাগহীন ত্বক পেতে

দাগমুক্ত উজ্জ্বল ত্বক পেতে ৫/৬টা কাঠবাদাম আর কাঁচা দুধ ব্লেন্ড করে বা বেটে পেস্ট বানিয়ে নিন। মুখে অ্যাপ্লাই করুন, আধঘণ্টা পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। একদিন পরপর ব্যবহারে ধীরে ধীরে ত্বকের দাগ নির্মূল হয়ে উজ্জ্বল দীপ্তিময় ত্বকের দেখা পাবেন।

(১০) তারুণ্যদীপ্ত ত্বক পেতে

সুন্দর তারুণ্যময় ত্বক পেতে মুলতানি মাটির সাথে কাঁচা দুধ মিক্স করে ফেইসপ্যাক বানিয়ে নিন। একদিন পরপর আধঘণ্টার জন্য অ্যাপ্লাই করুন। যদি আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয়, তাহলে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। আর যদি ত্বক শুষ্ক হয়, তাহলে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটায় মুখ ধুয়ে নিন।

কাঁচা দুধে বিদ্যমান উপাদানসমূহ

কাঁচা দুধে থাকা উপাদানগুলো সৌন্দর্যচর্চায় কতটুকু কার্যকরী সেটাই এখন আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো।

১) ভিটামিন এ

অত্যাধিক শুষ্ক, রুক্ষ এবং ক্ষতিগ্রস্ত চামড়ায় নমনীয়তা ফিরিয়ে আনতে এবং নতুন ত্বকের কোষ গঠনে সহায়তা করে।

২) ভিটামিন ডি

কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে তুলে স্কিন এইজিং-এর প্রসেস-কে ধীর গতিতে নিয়ে যায়। ত্বককে ফ্রি র‍্যাডিক্যালের হাত থেকে রক্ষা করে এবং প্রিম্যাচিউর এইজিং হতে দেয় না। ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়িয়ে তুলে ত্বককে করে তোলে দাগমুক্ত আর প্রাণবন্ত।

৩) ভিটামিন বি৬

ত্বকের নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বককে সজীব রাখে।

৪) ভিটামিন বি ১২

ত্বককে দাগমুক্ত করে উজ্জ্বল করে তোলে। ত্বকের রঙের অসামঞ্জস্যতা দূর করে।

৫) বায়োটিন

অত্যাধিক শুষ্ক, ফেটে যাওয়া ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি দিয়ে সারিয়ে তোলে। ত্বককে পুনরোজ্জীবিত করে তোলে।

৬) প্রোটিন

ত্বকের কোষগুলো রিপেয়ার করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।

৭) ল্যাকটিক এসিড

ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি আর প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা দিয়ে ত্বককে রাখে তারুণ্যময় আর দীপ্তিময়।

৮) পটাসিয়াম

শুষ্ক ত্বকের চুলকানোর সমস্যা দূর করে।

৯) ক্যালসিয়াম

ত্বকের সবচেয়ে উপরের লেয়ার তৈরি করে। স্কিন-এর ইলাস্টিসিটি বাড়ায়, কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায়, ত্বককে ফ্রি র‍্যাডিক্যালের থেকে রক্ষা করে।

১০) ম্যাগনেসিয়াম

উজ্জ্বল, সমস্যামুক্ত, তারুণ্যে দীপ্তিময় ত্বক পেতে সাহায্য করে।

১১) সেলেনিয়াম

সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির কারণে ত্বকের যে ক্ষতি হয় সেটা রিপেয়ার করতে সাহায্য করে। ত্বককে করে তোলে নরম, কোমল আর তারুণ্যে দীপ্তিময়।

আপনি চাইলে আপনার পছন্দমতো প্রোডাক্ট কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে। আবার যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ার এ অবস্থিত সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি!

জানলেন তো, সুন্দর তারুণ্যময় ত্বক পেতে খুব বেশি দামী প্রোডাক্ট ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নেই। শুধু প্রয়োজন একটুখানি সময় আর কৌশল। কাঁচা দুধের নানান গুণতো আজ জানালাম। আরেক দিন অন্য কোন প্রাকৃতিক উপাদানের গুণাগুণ, ব্যবহারবিধি আর কার্যকারিতা নিয়ে লিখব।

Stay Beautiful, Stay Gorgeous!

 ছবি- সংগৃহীত: wikipedia

64 I like it
8 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort