সন্তান যৌন হয়রানির শিকার | কিভাবে বুঝবেন, কী ব্যবস্থা নিবেন?

সন্তান যৌন হয়রানির শিকার | কিভাবে বুঝবেন, কী ব্যবস্থা নিবেন?

সন্তান যৌন হয়রানির শিকার - shajgoj

আমি আজ পর্যন্ত এমন কোন বাংলাদেশী নারীর দেখা পাই নি যিনি কোন না কোনভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন নি। তবে নিকৃষ্টের চাইতেও নিকৃষ্ট হচ্ছে শিক্ষাঙ্গনে এ ধরণের ঘটনাগুলো। সেই প্রেক্ষাপট থেকেই আজকের আলোচ্য বিষয় সন্তান যৌন হয়রানির শিকার সম্পর্কে।

গুরুসমীপে ছাত্রী কন্যাসম“- এই আপ্তবাক্য এখন সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা এমনই অসভ্য, বর্বর পশুতে পরিণত হয়েছি যে আমাদের চোখে ছাত্রীরাও ভোগ্যবস্তু। ভিকারুন্নিসার প্রাক্তন শিক্ষক পরিমল জয়ধরের কথা আমরা সবাই জানি। এ ধরনের পরিমল ঘরে ঘরে লুকিয়ে আছে। ছোটবেলার আরবি শেখানো হুজুর, নাচের শিক্ষক, আর্ট টিচার- এদের মাধ্যমে যৌন হয়রানি খুব কমন একটা ঘটনা। এ ধরনের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা যেটি হয়, যে নির্যাতিত হচ্ছে সে বুঝতে পারে না, কাউকে বলতেও পারে না এবং এই নির্যাতন ভয়াবহ মানসিক বৈকল্যের সৃষ্টি করে। আদরের নামে জড়িয়ে ধরা, শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়া, অশালীন আলাপ করা – এগুলো সবই অহরহ ঘটছে এই আপনার আমার শিশুদের সাথেই। সন্তান যৌন হয়রানির শিকার হলে করণীয় কী আছে চলুন তবে তাই জেনে নেই!

সন্তান যৌন হয়রানির শিকার হলে অ্যাকশন স্টেপ

শিক্ষাঙ্গনে সন্তান যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে তা বুঝতে কিছু উদাহরণ

১)তুমি ভাল নম্বর পেতে চাও? আমাকে প্লিজড করো, বাকিটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না“। এটি সরাসরি নোংরা ইঙ্গিত! ভালো নম্বর পেতে দরকার ভালো পড়াশোনা। শিক্ষককে অন্য কোনভাবে প্লিজড করা যায় না।

২)তোমার গ্রেড কিভাবে কী করা যায় এটা নিয়ে কথা বলতে হবে। সন্ধ্যের পর রুমে এসো“। এমন ওড টাইমে আপনাকে একা রুমে ডাকা হলো যা, একেবারেই ঠিক না।

৩)বাহ! তোমাকে তো দারুণ সুন্দর লাগছে দেখতে! ক্লাস শেষ হলে চলো কফি খেতে যাই” শিক্ষকের কাজ পড়ানো, আপনার রূপের প্রশংসা করা না!

৪)তুমিতো নিউলি ম্যারিড, তাই না? হাজবেন্ডের পারফর্ম্যান্স কেমন?” আপনার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলাচ্ছে, যা একেবারেই ঠিক না।

এরকম কোটি কোটি উদাহরণ দেয়া যায়। স্টাডি ট্যুরে গিয়ে বদমায়েশি করে এমন  নরাধমও বিস্তর আছে।

সন্তান যৌন হয়রানির শিকার হলে অ্যাকশন স্টেপস কী হবে?

(১) সন্তানকে একা না রাখা। শিক্ষকের সামনে কাউকে না কাউকে বসিয়ে রাখা।

(২) যে ঘরে সন্তান পড়ছে সেখানে সিসিটিভি লাগানো, শিক্ষককে তা জানানো এবং সেটা মনিটর করা। জ্বি, অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যৌন হয়রানি সত্ররকতায় সিসি ক্যামেরা - shajgoj.com

(৩) সন্তানের সাথে সরাসরি এসব বিষয়ে কথা বলা। তাকে “খারাপভাবে স্পর্শ” করছে কিনা এ সম্পর্কে বোঝানো। নির্যাতিত হলে সে যেন না লুকায় এই আশ্বাস তাকে দেয়া।

(৪) এবার আসি স্কুল কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেনে যৌন হয়রানির কথা ইনবক্সে লিখেছেন বহু নারী। এক্ষেত্রে কার্যকর উপায় হচ্ছে সেফটিপিন থেরাপি। কোনরকম স্পর্শ না করে শুধু তাকিয়েও যৌন হয়রানি করা যায়। এক্ষেত্রে পাল্টা তাকিয়ে এবং সরাসরি জিজ্ঞাসা করে (কি দেখেন?) বদমায়েশটাকে হতভম্ব করে দেয়া যায়।

(৫) একটা প্রশ্ন প্রায়ই থেকে যায়, আর তা হলো- “শিক্ষক-ছাত্রী যদি পারস্পরিক সম্মতিতে কিছু করে“? এর উত্তর হচ্ছে, দু’জন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষ পারস্পরিক সম্মতিতে অনেক কিছুই করতে পারেন, এটি বেআইনী নয়। তবে এ সম্পর্ক যদি শিক্ষাঙ্গনের ভেতরে, ছাত্রী-শিক্ষক সম্পর্ক বজায় থাকা অবস্থায় হয় (ছাত্রীটি সরাসরি ক্লাস করছে শিক্ষকের) তবে সেটি নিয়ে কর্তৃপক্ষ চাইলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিতে পারেন। আর এতে যদি শিক্ষক দ্বারা ছাত্রীকে ফুঁসলানোর ঘটনা ঘটে, তাহলে এটি পরিষ্কার যৌন হয়রানির ঘটনা। ছাত্রীর চাইতে শিক্ষকের দোষ বেশি কারণ তিনি শিক্ষক, ছাত্রী ভুল করলেও তিনি ভুল করতে পারেন না।

(৬) শুরুতেই জানিয়ে দিন, আপনি নিরীহ নন। তার কোন আচরণ পছন্দ না হলে চোখে চোখ রেখে শক্তভাবে বলে দিন সে যেন সীমা অতিক্রম না করে। গ্রেডের ভয় পাবেন না, গ্রেড আপনার আত্মসম্মানের চেয়ে বড় নয়।

যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ফোনে ভয়েজ রেকর্ড - shajgoj.com

(৭) চেষ্টা করুন সলিড প্রমাণ রাখতে। মোবাইলে বদমাশটির ভয়েস রেকর্ড করুন, টেক্সটগুলো রেখে দিন।

(৮) রুমের ভেতরে একা পেয়ে আপনাকে জাপটে ধরলে সোজা চোখ, গলা বা অণ্ডকোষে আঘাত করুন। দরজা আটকানো থাকলে আরো ভালো, পিটিয়ে শয়তানটার হালুয়া টাইট করে দিন। মনে রাখবেন, সে এটা কাউকে বলতে যাবে না।

(৯) আপনার ক্ষেত্রে উল্টো স্ট্রাটেজি, আপনার চেপে যাওয়াটাই ওর অস্ত্র। নির্যাতিত হলে লুকোবেন না। অফিশিয়াল কমপ্লেন করুন, মামলা করুন।

(১০)আমার চাকুরি চলে যাবে, প্লিজ মাপ করে দাও এবারের মতো“- এসব কথায় গলে যাবেন না। আপনি ছেড়ে দেয়া মাত্র সে আপনার নামে কুকথা ছড়াবে।

(১১) এবার আসি সমাজের কথায়- “থাক, বদনাম হবে। বিয়ে-শাদিতে সমস্যা হবে। চেপে যা, মা“- এমন ক্ষেত্রে ভাবুন যে আপনার বোনের বা মেয়ের হবু স্বামী যদি ওর এরকম একটা অন্যায়ের শিকার হবার কথা শুনে বিয়ে থেকে পিছিয়ে যায়, বরং খুশি হোন যে এরকম একটা নপুংশকের হাতে পরিবারের মেয়েকে তুলে দিচ্ছেন না।

যে সমাজ ভিকটিমকেই অসম্মান করে তাদের কথা ভুলে যান। এই সমাজকে ভেঙেচুরে গড়বার কাজটা এই আপনারই হাতে। আপনার সন্তান যৌন হয়রানির শিকার হয়ে ভিকটিম হলে উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদ করুন, আপনার সন্তানের পাশে দাঁড়ান।

বাঁচিতে বাঁচিতে প্রায় মরিয়াছি, এবার সব্যসাচী,
যা হোক একটা দাও কিছু হাতে, একবার মরে বাঁচি!

বিদ্রোহী কবি সেই কবে ডাক দিয়েছেন, প্রিয় নারী, আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?

জাগো গো বাঘিনী!

 

ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; ইমেজেসবাজার.কম, সরটিঅ্যাপারিস.কম

1 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort