হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি | ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থায় হবু মায়ের প্রয়োজন একটু বাড়তি যত্ন!

হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি | ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থায় হবু মায়ের প্রয়োজন একটু বাড়তি যত্ন!

doctor

প্রেগনেন্সি মেয়েদের জীবনের খুব জটিল ও জরুরী সময়। সাধারণত সুস্থ, সবল, জটিলতাহীন প্রেগনেন্সি পিরিয়ড সকল হবু মায়ের কাম্য। একজন নারী যখন গর্ভধারণ করেন তখন তাকে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। এই সকল স্বাস্থ্য সমস্যা যদি গর্ভবতী মা এবং গর্ভের সন্তানের জীবন নাশের সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দেয়, তখনই তাকে হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি বা ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা বলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা সন্তান জন্মদানের সময় যত এগিয়ে আসে তত বাড়তে থাকে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে মায়েদের গর্ভধারণের আগের থেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে সৃষ্টি হয়। হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি বা ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা কেন হয় এবং এক্ষেত্রে করণীয়গুলো কী কী সেগুলোই আমরা জেনে নিবো আজকের আর্টিকেলে।

হাই রিস্ক প্রেগনেন্সির কারণসমূহ

১) কোনো মায়ের যদি গর্ভধারণের আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, কিডনি সমস্যা, হেপাটাইটিস জাতীয় রোগ থেকে থাকে তাহলে গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। তিনি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মা হিসাবে বিবেচিত হবেন।

২) অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতা গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এর ফলে প্রি-একলাম্পসিয়া, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, মৃত সন্তান প্রসব এমনকি সিজারিয়ান এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে স্থুল মায়েদের সন্তানদের হার্টের সমস্যা নিয়ে জন্ম নেয়ার সম্ভাবনা ১৫% বৃদ্ধি পায়।

৩) গর্ভে একের অধিক সন্তান বা টুইন প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে গর্ভকালীন ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটাও হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি এর মধ্যে ধরা হয়। এক্ষেত্রে অপরিনত শিশুর জন্ম বা সময়ের আগে জন্ম নেওয়ার হার বৃদ্ধি পায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে টুইন বা ট্রিপলেট প্রেগনেন্সি ৩৭ সপ্তাহের আগেই ডেলিভারি হয়ে যায়।

৪) মায়ের বয়স হাই রিস্ক প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৮ বছর বয়সের কম বা ৩৫ বছর বয়স এর বেশি বয়সে সন্তান ধারণ করতে গেলে গর্ভকালীন জটিলতা অনেক বেড়ে যায়।

৫) প্ল্যাসেন্টা বা গর্ভফুল সঠিক অবস্থানে না থেকে নিচের দিকে বা জরায়ু মুখের কাছে থাকলে তাকে প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়া বলে। এক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় হালকা থেকে ভারি রক্তপাত হয়ে থাকে। যদি প্ল্যাসেন্টার অবস্থান ঠিক না থাকে তবে সেক্ষেত্রেও অনেক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়।

৬) আগে যদি মিসক্যারেজ, বাচ্চার হার্টবিট না আসা, ব্লিডিং, মৃত সন্তান প্রসবের মতো হিস্ট্রি থাকে, পরবর্তী গর্ভাবস্থা বা আবার যখন কনসিভ করবেন সেটা হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি হিসাবে ট্রিটেড হবে।

ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থার লক্ষণ কী কী?

  • ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং
  • বার বার কন্ট্রাকশন বা জরায়ুর সংকোচন প্রসারণ
  • ভ্যাজাইনাতে ব্যথা ও জ্বলুনি হওয়া
  • তলপেটে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া
  • বাচ্চার নড়াচড়া কমে যাওয়া
  • প্রচন্ড মাথাব্যথা
  • চোখে ঝাপসা দেখা
  • পায়ে বা শরীরে হটাত করে পানি আসা বা মুখ ফুলে যাওয়া

হাই রিস্ক প্রেগনেন্সিতে হবু মায়ের যত্ন

একটি গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের দেশে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ। যদি কোন গর্ভবতী মা হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি হিসেবে চিহ্নিত হন, তাহলে মা এবং তার চিকিৎসক মিলে প্রসবপূর্ব চেকআপের একটি রুটিন বা ছক করে নিতে হবে। তাতে যা যা থাকতে পারে,

১) রুটিন চেকআপ ছাড়াও বাড়তি চেকআপ, টেস্ট এবং আল্ট্রাসাউন্ড।

২) স্বাস্থ্যকর একটি ডায়েট চার্ট মেনে চলা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনমতো ব্যায়াম করা।

৩) হাই রিস্ক প্রেগনেন্সির লক্ষণ সম্পর্কে নিজে জানা এবং পরিবারের সকল সদস্যকে এ সম্পর্কে অবহিত করা।

৪) সকল ধরনের জরুরী অবস্থার জন্য মানসিক ও আর্থিকভাবে প্রস্তুত থাকা।

৫) হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি মায়ের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপ দূর করার উপায় বের করা এবং চাপ মুক্ত থাকা।

৬) চিকিৎসকের মূল লক্ষ্যই হল মা এবং শিশুর সার্বিক সুস্থতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাই সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা।

৭) যেকোনো সমস্যায় যেকোনো সময় চিকিৎসককে জানাতে দ্বিধা বা ভয় না করা।

৮) খুব বেশী রিস্কি প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে দরকার হলে ঘরে বা হাসপাতালে বেড রেস্টে থাকতে হতে পারে।

প্রেগনেন্সিতে রিস্ক কমানোর উপায়

  • ওজন ঠিক রাখতে হবে, কিন্তু ওজন কমাতে যেয়ে আন্ডার ওয়েট হওয়া যাবে না
  • স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েট মেনে চলতে হবে এবং তাতে অবশ্যই তাজা ফলমূল এবং সবজি থাকতে হবে
  • পরিমিত ঘুম এবং বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে
  • কফি বা ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে
  • গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে

গর্ভাবস্থায় সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও যদি পূর্বে কোনো রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপ, জন্ডিস, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি থাকে তবে সে সম্পর্কে চিকিৎসককে জানাতে হবে। এই সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা ব্যায়াম করতে হবে, তবে বেড রেস্ট দিলে সেই ইন্সট্রাকশন ফলো করবেন। প্রতিটি প্রেগনেন্সি-ই আলাদা, তাই আপনার শারীরিক কন্ডিশন বুঝে ডাক্তার চিকিৎসা দিবেন।

হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি মানেই যে গর্ভস্থ বাচ্চা বা মায়ের জীবন নাশের ঝুঁকি আছে, এমনটা ভেবে আতংকিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এর মানে এই যে কোনো মেডিকেল কন্ডিশন বা অন্য কোনো কারণে গর্ভকালীন জটিলতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে থাকতে হবে। অনেক হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি-ই কোনো প্রকার জটিলতা ছাড়াই শেষ হয় এবং সুস্থ সবল শিশুর জন্ম হয়। এই ধরনের প্রেগনেন্সিতে মায়ের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। তাই হবু মায়ের পাশাপাশি পরিবারের বাকি সদ্যস্যদেরও উচিত এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা এবং সময় থাকতেই সাবধান হয়ে যাওয়া।

SHOP AT SHAJGOJ

    ছবি- সাটারস্টক

    3 I like it
    0 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort