ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাজিয়ে নিন আপনার নাইট টাইম স্কিন কেয়ার রুটিন

ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাজিয়ে নিন আপনার নাইট টাইম স্কিন কেয়ার রুটিন

5-6

সারাদিনের সকল কাজ শেষ করে যখন আমরা ঘরে ফিরি কিংবা যারা ঘরের হাজারটা কাজ শেষ করে বিশ্রাম নিতে বসি, তখন আমাদের শরীরও কিন্তু রিলাক্সিং মোডে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে আমরা যখন ঘুমাতে যাই তখন আমাদের স্কিনের সেলগুলো নিজ থেকে রিপেয়ার হওয়া শুরু করে। এজন্যই আমরা রাতের বেলার ঘুমকে বিউটি স্লিপ বলে থাকি। কিন্তু যদি আমরা আমাদের ত্বকের বিশেষ করে মুখের ত্বকের যত্ন না নেই তাহলে ত্বক নিঃশ্বাস নিতে পারে না, ফলে ধীরে ধীরে আমাদের ত্বক হয়ে পড়ে নিস্তেজ ও মলিন। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই স্কিন কেয়ার করতে হবে। ত্বকের ধরন অনুযায়ী নাইট টাইম স্কিন কেয়ারের রয়েছে কিছু ধাপ। আজকে সেগুলো নিয়েই আলোচনা করবো।

ত্বকের ধরন অনুযায়ী নাইট টাইম স্কিন কেয়ার 

ড্রাই স্কিন 

ড্রাই স্কিনে খুব তাড়াতাড়ি এজিং সাইনস অর্থাৎ রিংকেলস দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে স্কিনের ইলাস্টিসিটি লুজ হয়ে যায়। যার কারণে চামড়া ঝুলে যায়। তাই ড্রাই স্কিনের জন্য দরকার প্রয়োজন অনুযায়ী যত্নের।

ডাবল ক্লেনজিং

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই স্কিন প্রোপারলি ক্লিন করে ময়েশ্চারাইজড করে নিতে হবে। আর ড্রাই স্কিনকে সব সময় হাইড্রেটেড রাখা উচিত। তাই ডাবল ক্লেনজিং করলেও খেয়াল রাখতে হবে ক্লেনজিং প্রোডাক্টগুলো যেন স্কিনের জন্য স্যুইটেবল হয়। দিনের বেলা সানস্ক্রিন বা মেকআপ ব্যবহার করলে অবশ্যই রাতে ডাবল ক্লেনজিং মেথড ফলো করতে হবে। প্রথম ধাপে ক্লেনজার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে অয়েল বেজড ক্লেনজার। কটন প্যাডে ক্লেনজার নিয়ে প্রথমে স্কিন ক্লিন করে নিন। এবার ফোম বা ওয়াটার বেজড ক্লেনজার দিয়ে ফেইস আরও একবার ক্লিন করে নিতে হবে।

সোডিয়াম সালফেট, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল (যেমন- ট্রাইক্লোজান), প্যারাবেন, অ্যালকোহল জাতীয় উপাদানগুলো ত্বক শুষ্ক করে দেয়। তাই যে ক্লেনজারে এসব উপাদান আছে সেগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন, সিরামাইড, অ্যালোভেরা, হানি, রাইস এক্সট্র্যাক্টের মতো উপাদানগুলো আছে কিনা দেখে ক্লেনজার সিলেক্ট করলে ভালো হয়। কারণ এই উপাদানগুলো স্কিন হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।

ত্বক পরিষ্কার তো করা হলো! এরপরে আসে টোনিং এর পালা। টোনিং এর ক্ষেত্রে ভালো হাইড্রেটিং টোনার ইউজ করতে হবে, যাতে স্কিন ভালোভাবে রিহাইড্রেট হতে পারে, একই সাথে ফেইসের পোরস টাইটেনিং করবে এবং পরের ধাপের জন্য স্কিনকে প্রিপেয়ার করবে। ড্রাই স্কিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ময়েশ্চারাইজিং। ত্বক পর্যাপ্ত ময়েশ্চারের অভাবে শুষ্ক হয়ে যায়। তাই স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখতে ভালো মানের একটি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।

কম্বিনেশন স্কিন

কম্বিনেশন স্কিন নিয়ে আমাদের প্রায়ই ঝামেলায় পড়তে হয়। কারণ এ ধরনের স্কিনের কিছু অংশ ড্রাই আবার কিছু অংশ অয়েলি হয়ে থাকে। স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস কেনার আগে তাই খুব কেয়ারফুলি প্রোডাক্ট বাছাই করতে হবে।

সানস্ক্রিন কিংবা মেকআপ ব্যবহার করলে অবশ্যই রাতে ঘুমানোর আগে ডাবল ক্লেনজিং করতে হবে। প্রথমে যথারীতি অয়েল বেজড ক্লেনজার ও পরে মাইল্ড একটি ওয়াটার বেজড ক্লেনজার ব্যবহার করতে হবে। জেল ওয়াশ বা ফোমিং ক্লেনজারগুলো এক্ষেত্রে ভালো কাজ দেয়।

টোনার

টোনিং এর ক্ষেত্রে আপনি প্রাকৃতিক হোমমেইড টোনারও ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- গোলাপ জল, জিঞ্জার মিন্ট টোনার। এতে স্কিন থাকবে হাইড্রেটেড এবং সতেজ ফিল হবে। কম্বিনেশন স্কিনের ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে অ্যালোভেরা জেল খুব কার্যকর। আপনি চাইলে বাজার থেকে কেনা অ্যালোভেরা থেকে জেল সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরা জেল কিছুক্ষণ লাগিয়ে অপেক্ষা করে, এরপর একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যুক্ত খুব লাইট একটা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিলেই শেষ আপনার নাইট টাইম স্কিন কেয়ার। বর্তমানে সব ধরনের স্কিনেই স্যুট করবে এমন টোনারও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কম্বিনেশন স্কিনের জন্য সেগুলোও বেছে নিতে পারেন।

অয়েলি স্কিন

অয়েলি স্কিনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, এ ধরনের স্কিন সব সময় খুব তেলতেলে থাকে, যা খুব সহজেই ধুলোবালি শুষে নিয়ে মুখের পোরসগুলো ক্লগড করে দেয়। তাই অয়েলি স্কিনের ক্ষেত্রে স্কিনকে সবসময় ক্লিন রাখা খুব জরুরী।

তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রেও ডাবল ক্লেনজিং আবশ্যক। অয়েলি স্কিনে অনেকেরই অয়েল বেজড ক্লেনজার স্যুট করে না। এ ধরনের ত্বকের জন্য একটি সেইফ অপশন হচ্ছে মাইসেলার ওয়াটার। প্রথমে মাইসেলার ওয়াটার দিয়ে ক্লিন করে পরে ওয়াটার বেসড ক্লেনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। আর অয়েলি স্কিনে যেহেতু একনে সমস্যা বেশি হয় সেহেতু স্যালিসাইলিক অ্যাসিড যুক্ত ক্লেনজার ত্বকের জন্য ভালো একটি অপশন।

টোনার আপনার ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই যে কোনো ত্বকের ক্ষেত্রেই টোনিং খুবই  গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। টোনিং এর পর আসে ময়েশ্চারাইজিং। অয়েলি স্কিনে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হয় খুবই লাইট ওয়েট এবং ওয়াটার বেইজড ফর্মুলাযুক্ত। ময়েশ্চারাইজার ভারী হলে অয়েলি স্কিন আরও তেলতেলে হয়ে যায় কিংবা একনে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

নাইট টাইম স্কিন কেয়ার রুটিনে সিরাম

আপনি রাতে নিয়মিত ক্লেনজিং, টোনিং এবং ময়েশ্চারাইজিং এর পাশাপাশি স্কিনের প্রয়োজন অনুযায়ী সিরাম বা নাইট ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- স্পট ট্রিটমেন্ট কিংবা পিম্পলের জন্য  নির্দিষ্ট কোনো সিরাম, বা ভিটামিন সি অথবা নিয়াসিনামাইড। যেহেতু প্রত্যেকের ত্বক ভিন্ন, তাই আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী স্কিন কেয়ার রুটিনকে সাজিয়ে নিতে পারেন।

চোখের যত্ন

চোখ আমাদের ত্বকের যেকোনো অংশের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল। তাই চোখের যত্নও হবে একটু আলাদা। ত্বকের ধরন যেমনই হোক না কেন, রাতে ঘুমানোর আগে চোখের যত্নে আপনি আই ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।মনে রাখবেন, ফেইসের জন্য যে ক্রিম ব্যবহার করছেন সেটা কিন্তু চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল রিমুভ করবে না। ক্রিম ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে চাইলে একটি আলু কিংবা শসার রসকে কটন প্যাডে নিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ রেখে দিতে পারেন। এতে চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূর হবে এবং রিল্যাক্সড ফিল করবেন।

ঠোঁটের যত্ন

ঠোঁটের যত্নে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের লিপবাম। রাতে ঘুমানোর আগে লিপবাম লাগাতে পারেন। এতে ঠোঁট সফট থাকবে। আর সপ্তাহে ১/২ বার চিনির সাথে মধু মিশিয়ে হালকা এক্সফোলিয়েট করতে পারেন। এতে ডেডসেলস দূর হয়ে ঠোঁট হবে মসৃণ।

ঠোঁটের যত্ন

কখন করবেন নাইট টাইম স্কিন কেয়ার? 

অনেকে ভাবেন নাইট টাইম স্কিন কেয়ার মানে রাতে বিছানায় যাওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে ক্লিনিং, টোনিং বা ময়েশ্চারাইজিং ইউজ করা। আমরা এই ভুলটি প্রায়ই করি। এমন হলে স্কিন কেয়ারে যা যা ব্যবহার করেছিলেন, তার প্রায় সবটাই বালিশে লেগে যাবে। তাই নাইট টাইম স্কিন কেয়ার করবেন বিছানায় যাওয়ার ঠিক বিশ থেকে ত্রিশ মিনিট আগে। ততক্ষণে আপনার স্কিনে ইউজ করা প্রোডাক্টগুলো ভেতরে অ্যাবজর্ব হয়ে যাবে।

এইতো জেনে নিলেন, স্কিন টাইপ অনুযায়ী কীভাবে ও কখন নাইট টাইম স্কিন কেয়ার করতে হবে। এবার নিয়মিত স্কিন কেয়ার করে ইয়াংগার লুকিং স্কিন পেতে পারেন আপনিও। স্কিন ও হেয়ার কেয়ারের জন্য অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে আপনারা সাজগোজের কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র‍্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার এ অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন।

 

ছবিঃ সাজগোজ

97 I like it
8 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort