মায়ের গর্ভ থেকেই একটি শিশুর বিকাশ শুরু হয়ে যায়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিকাশের স্তর অনুযায়ী এক এক বয়সে শিশু এক একটি কাজ করবে। প্রায় সব বাবা মা-ই সাধারণত বেশি নজর দেন শিশু কবে হামাগুড়ি দিলো, কখন হাঁটতে শিখলো, কখন কথা বলতে বা ডাকতে শিখলো এসব দিকে। এগুলো শিশুর শারীরিক বিকাশের অংশ। এর পাশাপাশি তার মানসিক বিকাশের দিকেও নজর দেয়া উচিত। আসুন জেনে নেই, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পাঁচটি ধাপ বা পর্যায় সম্পর্কে।
নিউবর্ন বা সদ্যজাত শিশুর বিকাশ
- শিশুর জন্মের প্রথম দুই মাসে শিশু সাধারণত বাহ্যিক সংবেদনে সাড়া দিতে শেখে
- এ সময় শিশু হাত উপরে নিচে বা পাশাপাশি নড়াচড়া করতে শেখে
- কাছের জিনিস দেখা বা কোনো শব্দ শুনতে পেলে চমকে যাওয়া বা স্থির হয়ে যাওয়া এ সময় স্বাভাবিক বৃদ্ধির লক্ষণ
- এই বয়সে শিশু কান্নার মাধ্যমে তার চাহিদা প্রকাশ করে
- তৃতীয় মাসের শুরুতে শিশু পরিচিত বা কাছের মানুষ দেখে হাসতে শেখে
ইনফ্যান্ট শিশুর বিকাশ
১। শিশুর এক বছর বয়স হতে হতেই শিশু অনেক নতুন জিনিস শিখে যায়। তিন থেকে ছয় মাস বয়সে শিশু পরিচিত চেহারা চিনতে শেখে। বিশেষ করে মা বাবাকে আলাদা করে চিনতে পারে এবং তাদের গলার আওয়াজে সাড়া দেয়।
২। এ সময় শিশুর ঘাড় শক্ত হয় এবং মাথা স্থির করতে শিখে। দুই হাত এক করতে পারে।
৩। কান্নার আওয়াজ ছাড়াও শিশু নানা রকম শব্দ করতে পারে।
৪। ছয় থেকে নয় মাস বয়সে শিশু কোনো সাপোর্ট ছাড়াই বসতে শেখে। ধরে দাঁড়া করালে বাউন্স করে বা হালকা লাফালাফি করে।
৫। কেউ নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয়। এই বয়সেই শিশুর কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ে।
৬। নয় থেকে বারো মাস বয়সে শিশু আঙ্গুল তুলে কোনো কিছু নির্দেশ করতে শেখে। কোনো জিনিস হাত দিয়ে তুলে মুখে দেয় এবং হামাগুড়ির চেষ্টা করে। কখনো কখনো ধরে ধরে দাঁড়াতেও শেখে।
টডলার বা হামাগুড়ি দেওয়ার বয়স
শিশুর এক থেকে তিন বছর বয়স পর্যন্ত টডলার স্টেজ। এই বয়সে শিশু একা একা দাঁড়াতে বা হামাগুড়ি দিতে পারে। কারো সাহায্য ছাড়াই হাঁটতে শেখে। শিশুদের ব্যক্তিত্বের ধরন কেমন হতে পারে তার শুরুটা হয় এ বয়স থেকেই। অর্থাৎ শিশু চঞ্চল বা সবার সাথে মিশতে পারে কিনা, চুপচাপ বা কথা একদম কম বলে কিনা এগুলো বিষয় প্রকাশ পেতে থাকে টডলার স্টেজ থেকেই। ছোট ছোট কদমে দৌড়ানো, হাত নেড়ে কাউকে বিদায় জানানো, ছবির বই দেখে অক্ষর ও ছবি চিনতে পারা, রঙ পেন্সিল বা ক্রেওন হাতে নিয়ে আঁকাআঁকির চেষ্টা করা, আধো বুলি থেকে শুরু করে ছোট ছোট বাক্য বলতে শেখা, এমনকি নির্দেশ পালন করতেও শিখে যায় এ বয়সেই।
প্রি-স্কুল পর্যায়
১। তিন থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর প্রি-স্কুল পর্যায়। এই বয়সে শিশুর সক্রিয় কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
২। এই বয়সে শিশু নিজের কাজ নিজে করতে শেখে যেমন নিজে নিজে জামা প্যান্ট পরা, জুতা পরা। জামার বোতাম লাগানো এবং সাইকেল চালাতে পারে।
৩। অর্থবহ বাক্য বলে সম্পূর্ণভাবে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। কখনও কখনও স্বাভাবিক প্রশ্নের বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরও দিতে পারে।
৫। চার থেকে পাঁচ বছর বয়সেই শিশুরা সাধারণত পটি ট্রেইনবা টয়লেট ব্যবহার করা শিখে যায় এবং একা একা ব্যবহার করতে পারে।
স্কুলের বয়স বা কৈশোর ও বয়ঃসন্ধি
১। ছয় থেকে সতেরো বছর বয়স হলো স্কুলে যাওয়ার বয়স। এই বয়সে শিশু আত্মনির্ভরশীল হতে শেখে এবং এ সময় তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গা তৈরি হয়।
২। এই বয়সের মধ্যেই শিশুর চলন-বলনসহ যাবতীয় সকল ক্ষমতার প্রকাশ ঘটে। তারা একজন পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন মানুষ হিসেবে জীবনের এই পর্যায়ে আত্মপ্রকাশ করে।
৩। বিভিন্ন রকম ইমোশন যেমন রাগ, দুঃখ, হতাশা, হিংসা, ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বিভিন্ন রকম আচার আচরণের মাধ্যমে শিশু তার মনের ভাব অর্থবহভাবে প্রকাশ করে।
৪। বয়ঃসন্ধিকাল হলো শিশুর বিকাশ হওয়ার নতুন এক পর্যায়। এই সময়ে শিশু বিভিন্ন রকম শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। এ সময় ছেলেমেয়েরা যেমন দ্রুত বড় হতে থাকে তেমনি তাদের চিন্তা চেতনায় আসে ব্যাপক পরিবর্তন।
৫। বয়ঃসন্ধির এ সময়ে ছেলেমেয়ে উভয়ের প্রজনন ক্ষমতা বিকাশ হতে থাকে বলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ হয়।
৬। এ বয়সের প্রাণচাঞ্চল্য ভেতরের সৃজনশীলতার বিকাশে অনেক বড় ভূমিকা রাখে।
ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠার এই যাত্রায় বড় ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় প্রতিটি শিশু। বিকাশের এই স্তরগুলির মধ্যে কোনোটি যদি প্রকাশ না পায় অথবা শিশুর আচার আচরণে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শিশুরা নরম মাটির মতো। তাদের যেভাবে ইচ্ছা গড়ে তোলা যায়। শুধু প্রয়োজন মানসিক বিকাশের জন্য সঠিক সময়ে সঠিক গাইডেন্স এবং শারীরিক বিকাশে সঠিক পুষ্টি। অথেনটিক বেবি প্রোডাক্টস কিনতে আপনারা চাইলে সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) থেকে কিনতে পারেন। অনলাইনে কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে।
ছবি: সাজগোজ