আইসোলেশন কিভাবে মানুষকে করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচায়?

আইসোলেশন কিভাবে মানুষকে করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচায়?

isolation

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সাধারণ জনগণকে এই ভাইরাস থেকে দূরে রাখতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, আইসোলেশন (isolation) বা কোয়ারেন্টিন (quarantine) করতে বাধ্য করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে যাতায়াত সীমিত বা বন্ধ করতে পুরো দেশই লক ডাউন করে দিয়েছে প্রশাসন। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত এসেছে। এই ভাইরাসের বিস্তার এড়ানোর জন্য কার্যকরী একটি পদক্ষেপ হচ্ছে আইসোলেশন! করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সোশ্যাল ডিসট্যান্স বা সামাজিক দূরত্ব, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন এই শব্দগুলো বারবারই শোনা যাচ্ছে, তাই না? চলুন আমরা আজকে জেনে নেই আইসোলেশন কী, কখন আইসোলেশনে থাকা প্রয়োজন এবং এটা কিভাবে মানুষকে করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদে রাখে!

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আইসোলেশন কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

আইসোলেশন কী এবং কখন আইসোলেশনে থাকা প্রয়োজন? 

এতদিনে আপনারা জেনে গিয়েছেন যে, করোনা ভাইরাসের ফলে সৃষ্ট কোভিড-১৯ অত্যন্ত ছোঁয়াচে। কারোও শরীরে যদি করোনা ভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং কোভিড-১৯ টেস্ট পজিটিভ আসে, তবে তাকে ফরমাল বা প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এর মেয়াদকাল ১৪ দিন, তাই এই সময়টা চিকিৎসক এবং নার্সদের তত্ত্বাবধানে রোগীকে হাসপাতালে থাকতে হয়। সেখানে ডাক্তার এবং নার্সরাও নিজেদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ পোশাক পরে সেবা দিয়ে থাকেন।

এসময়ের মধ্যে আলাদা কক্ষে রেখে রোগীকে কিছু ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়। তার যদি শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তাকে এমন ওষুধ দেওয়া হয় যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা করে। এই ভাইরাসটির প্রাথমিক পর্যায় হচ্ছে ইনকিউবেশন অর্থাৎ ভাইরাসটি নিজেকে ধীরে ধীরে বাহকের শরীরে প্রতিষ্ঠিত করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিকটিমের শরীরে নিজে নিজেই এই রোগটির অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায় এবং রোগী সুস্থ হতে শুরু করে! অনেকসময় আই সি ইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে তাকে বিশেষ চিকিৎসা নিতে হতে পারে। তবে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত পরিবার থেকে অবশ্যই শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে। করোনা ভাইরাস পজিটিভ ব্যক্তির শারীরিক লক্ষণ পর্যবেক্ষণ ও সঠিক সেবা পাওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে থাকা প্রয়োজন।

কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের পার্থক্য কী?  

কোয়ারেন্টিন হলো করোনা ভাইরাসের হালকা উপসর্গ যাদের দেখা দিয়েছে বা ঝুঁকি আছে, তাদের অন্য কারো সঙ্গ রোধ করার পদ্ধতি! আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন আলাদা দুইটা শব্দ। করোনা ভাইরাসের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার পরপরই কিন্তু তার উপসর্গ দেখা দেয় না। কেননা এটা তার মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। সে নিজেও বুঝে উঠতে পারে না যে সে এই ভাইরাসে আক্রান্ত! কিন্তু এই সময়ে সে অন্যজনকেও সংক্রমিত করে দিতে পারে। তাই করোনা আক্রান্ত দেশ ঘুরে আসার পর বা সাসপেক্টেড রোগীর সাথে মেলামেশা করলে সেই ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। এখানেও সময়সীমা ১৪ দিন। এসময় বাইরে বের হতে ও সামাজিক মেলামেশা করতে নিষেধ করা হয়। সেই সাথে মেনে চলতে হয় স্বাস্থ্যবিধি!

এই সময়ে কী কী করা উচিত?

যেহেতু ভাইরাসটি খুব দ্রুতই ছড়িয়ে যাচ্ছে, তাই এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এমন খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়া সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং জ্বর আসছে কি না সেটা খেয়াল রাখতে হবে। আমরা অনেকেই জানি, ভিটামিন সি শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়ায়। লেবু, টমেটো, রসুন, মালটা, বেরি জাতীয় ফল, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি খাদ্য তালিকাতে রাখুন। আর উপসর্গ দেখা মাত্রই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কাশি ও জ্বর হলে পরিবারের সবার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, আলাদা কক্ষ ও জিনিসপত্র ব্যবহার করা অর্থাৎ নিজেকে কিছুদিনের জন্য এক ঘরে করে রাখায় হচ্ছে এই ভাইরাস প্রতিরোধের কার্যকর উপায়! আইসোলেশনে থাকাকালীন চিকিৎসকই পরামর্শ দিবেন যে আক্রান্ত ব্যক্তির কোন ওষুধগুলো নেওয়া উচিত।

আইসোলেশন কিভাবে মানুষকে করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচায়?

আমরা অনেকেই জানি, করোনা ভাইরাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে। অর্থাৎ আশেপাশে কেউ হাঁচি বা কাশি দিলে বা ভাইরাস সংক্রমিত কোনো জায়গায় হাত দেয়ার পর মুখে হাত দিলে তা শরীরে প্রবেশ করতে পারে। কাশি ও জ্বরের সাথে শরীরে ব্যথা, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হলে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। কিন্তু এর আগের থেকেই কিন্তু সে ঐ ভাইরাসটি বহন করে আসছিলো এবং সামাজিক যোগাযোগে সে অন্য জনকেও আক্রান্ত করছে। আর এভাবেই মহামারী আকারে ভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তার হয়।

যদি আপনার মধ্যে এই ধরনের লক্ষণ থাকে, কোয়ারেন্টিনে থাকুন। আর ভাইরাস শনাক্ত হওয়া মাত্রই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আইসোলেশনে চলে যেতে হবে। এর ফলে আপনার থেকে এই রোগের জীবাণু অন্য কারো মধ্যে ছড়িয়ে যাবে না এবং আপনার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা পাবেন। আর এভাবেই করোনা ভাইরাস থেকে আপনি বাঁচতে পারবেন আর আপনার আপনজনকেও সুরক্ষিত করতে পারবেন। এখন আমাদের করণীয় হচ্ছে, ভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে বাইরের পৃথিবীর সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া!

তাহলে, আইসোলেশন সম্পর্কে বেসিক বা সাধারণ তথ্যগুলো জানা হয়ে গেলো। এই সময়ে আতংকিত না হয়ে সচেতন হোন। বেশি করে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন এবং হাত পরিষ্কার রাখুন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত অনেক ব্যক্তিই কিন্তু সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। জানুন, বুঝুন ও সময় থাকতেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।

 

ছবি- সংগৃহীত: guim.co.uk

8 I like it
1 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort