সতীত্ব ও সতীচ্ছদ পর্দা | হাইমেন নিয়ে বোকার স্বর্গে বাস করছেন না তো?

সতীত্ব ও সতীচ্ছদ পর্দা | হাইমেন নিয়ে বোকার স্বর্গে বাস করছেন না তো?

সতীত্ব আর হাইমেন নিয়ে ভুল দূর করুন - shajgoj

সতীত্ব ও সতীচ্ছদ পর্দা নিয়ে আমরা স্বচ্ছ ধারণা রাখি না। গতকাল সতীত্ব নিয়ে আলোচনা করছিলাম এবং একজন বলেছিল যে, কোন নারীর সতীত্ব আছে কি নেই, সেটা প্রমাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে এই ধারনার উপর ভিত্তি করে যে, “প্রত্যেক নারীরই তার প্রথম সহবাসের সময় রক্তপাত হয়ে থাকে”। আমি নিশ্চিত যে অধিকাংশ-ই (নারী ও পুরুষ) এই মনোভাব পোষণ করে থাকে অথচ এটা একটা চরম ভুল ধারণা। ‘প্রথম সহবাস কালীন রক্তপাত’ দ্বারা নারীটির সতীত্ব প্রমাণ করা যায় কিনা বা সতীত্বের যথার্থতা কে তুলে ধরে কি না, এটার সপক্ষে আমি এই আর্টিকেলটি তুলে ধরছি, যাতে করে আমাদের তরুণ যুব সমাজ (ছেলে ও মেয়ে) নারীর প্রথম মিলনে রক্তপাত সম্পর্কিত বিষয়ে শিক্ষিত হতে পারে ও সঠিক ধারণা লাভ করতে পারে।

কথা হচ্ছিল “নারীর সতীত্ব সম্পর্কে প্রচলিত মিথ” কে নিয়ে, কেন অধিকাংশ নারীরই প্রথম মিলনে ব্লিডিং হয় না…

সতীত্ব ও সতীচ্ছদ পর্দা বা হাইমেন নিয়ে আমাদের অবস্থান

আমাদের দেশ এবং ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান সহ আফ্রিকার অনেক দেশ (নাইজেরিয়া এবং আরও অনেক জাতি স্বত্বা) গুলোতে এই মিথ টা ব্যাপক প্রচলিত যে, আপনি যে কোন নারীর সতীত্ব আছে কিনা সেটা প্রমাণ করতে পারবেন, যদি তার প্রথম মিলনে রক্তপাত হয়। জানেন কি, এই প্রচলিত ধারনার মধ্যে এক বিন্দু সত্য নেই? সব নারীর ই প্রথম সহবাসে রুক্তপাত হয়না, এবং কেন হয়না, সে বিষয়ে আমি এই পোস্টে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেব। কেনই বা কিছু নারীর প্রথম মিলনে রক্তপাত হয়, আর কেনই বা কিছু নারীর আদৌ হয় না, সেটা বুঝতে গেলে আমাদের এটা সবার নারীর প্রজনন অঙ্গর একটি অংশ হাইমেন, যাকে আমরা বাংলায় সতীচ্ছদ পর্দা বলে জানি, সেটার গঠন সম্পর্কে জানতে হবে। চলুন জেনে নিই এ নিয়ে।

সতীচ্ছদ পর্দা বা হাইমেন

হাইমেন বা সতীচ্ছদ এক ধরনের পর্দা, যেটা যোনিমুখের সামনে অবস্থান করে যে পর্দা সর্বদাই পুরো যোনিমুখকে ঢেকে রাখে না বা ব্লক করে না। জেনে রাখুন, সব নারীরই সতীচ্ছদ থাকে না। হাইমেন বা সতীচ্ছদ পর্দা এক নারী থেকে আরেক নারীর ভিন্ন হয়ে থাকে। ঠিক যেমন সকল নারীদের উচ্চতা এবং ওজন, দৈহিক গঠনভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, তেমনি নারীর হাইমেনের গড়ন ও আকৃতিও বিভিন্ন রকম হয়। কারো হাইমেন অনেক পুরু, কারো বা খুব পাতলা, কারো বা প্রাকৃতিক ভাবেই কোন হাইমেন নেই। কোন কোন নারীর স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হাইমেন, কারো বা হাইমেন এতই ছোট যে সেটি যোনিমুখের অতি সামান্য অংশ কে ঢেকে রাখতে সক্ষম (যে কারনে সেই ক্ষুদ্র হাইমেন প্রথম মিলনে আদৌ কোন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেনা)।

সতীচ্ছদ পর্দা বা হাইমেন অপসারিত হয় কখন?

দৈহিক বৃদ্ধির সাথে সাথে হাইমেন নিজে থেকেই অপসারিত হয় বা ছিড়ে যায়। অধিকাংশ নারীর ক্ষেত্রেই, হাইমেন আপনা-আপনি ভাবে অপসারিত হয়ে থাকে, যেমন ব্যায়াম করলে, বাইসাইকেল চালালে, এমন কি ঘোড়ায় চড়লেও। হাইমেন বা সতীচ্ছদ নামের পর্দা যে কোন ভারী কাজ করলেও আপনা থেকেই ছিঁড়ে যেতে বা উধাও হয়ে যেতে পারে, এমন কি নাচানাচি করলে কিংবা মাসিক চলাকালীন সময় ট্যাম্পুন ব্যবহার করলেও। বিশেষ করে যাদের হাইমেন প্রাকৃতিক ভাবেই পাতলা বা ছোট বা উভয়ই, তাদের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে হাইমেনেরও অপসারিত হবার প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই যে নারীর হাইমেন ছোট ও পাতলা, তাঁর ক্ষেত্রে প্রথম যৌনমিলনে রক্তপাত হবার সম্ভাবনা খুবই কম।

সতীচ্ছদ পর্দার ধরণ - shajgoj.com

 

সতীত্ব ও সতীচ্ছদ পর্দা নিয়ে কুসংস্কার দূর করুন

যার হাইমেন একবার আপনা হতেই ছিড়ে গেছে বা অপসারিত হয়েছে তার প্রথম বারের মিলনে কখনই রক্তপাত হবে না। এ বিষয়ে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল কর্তৃক প্রদত্ত ফলাফলও অত্যাশ্চার্যজনক, প্রায় ৬৩% মহিলার ই প্রথম বারের যৌনমিলনে কোন রকম রক্তপাত হবে না। এছাড়াও, যে সব নারীদের রক্তপাত মিলনের ফলে হয় নি, তাদের একটা অংশ কিন্তু পুরু হাইমেন এর অধিকারী, বিশেষত কম বয়সী মেয়ে বা কিশোরীরা (যারা মোট জনসংখ্যার অল্প একটা স্থান দখল করে)। যেহেতু হাইমেন বয়ঃবৃদ্ধির সাথে দৈহিক বৃদ্ধির সাথে সাথে আপনা থেকেই অপসারিত হয়, তাই ১৬ বছরের একজন নারীর রক্তপাতের সম্ভাবনা, ২৫ বছর বয়সী নারীর চেয়ে অনেক বেশী। সময়ের সাথে একজন মেয়ে যখন আইনগত সম্মতি প্রদানের বয়সের দিকে এগিয়ে যায় অথবা সেই বয়সি হয় অর্থাৎ ১৮, ২০ বা ২২ বছর বয়সী হয়, সেই মেয়ের হাইমেনের অধিকাংশ অংশের কিন্তু আপনা থেকেই অস্তিত্বহীন হবার কথা। মানে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে যে, এই মেয়েটির প্রথম মিলনে আদৌ কোন প্রকার রক্তপাত হবার সম্ভবনা খুবই কম। উল্ল্যেখ্য যে, কোন নারী শারীরিক ভাবে কর্মঠ হয়ে থাকে অথচ ক্ষুদ্র অথবা পাতলা হাইমেন এর অধিকারী হয়ে থাকে, তার প্রথম বারের মিলনে রক্তপাত নাও হতে পারে। তাই সতীত্ব ও সতীচ্ছদ পর্দা নিয়ে কুসংস্কার দূর করুন।

অধিকংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেসব নারীর প্রথম সহবাসে রক্তপাত হয়েছে, তাদের সাথে জোর বা জবরদস্তির সাথে যৌনকার্য সংঘটিত হয়েছিল। যদি কোন নারী যথেষ্ট পরিমানে উত্তেজিত না থাকে বা শিথিল না থাকে বা যৌনমিলনের জন্য শারীরিক ও মানসিক ভাবে তৈরী না থাকে, সে ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গী যদি তার ওপর জোরপূর্বক সহবাস ঘটায়, সেই পুরুষটি মূলত সেই নারীর শরীরের অভ্যন্তরে ক্ষতের সৃষ্টি করে যা থেকে রক্তপাত হয়। অদ্ভুতভাবে অধিকাংশ লোকেরই এটাই ধারণা যে, নারীর প্রথম মিলনে রক্তপাত হওয়াই স্বাভাবিক, অথচ কেউ এটা বোঝে না যে, রক্তপাত হচ্ছে নারীর উপর জোরপূর্বক যৌনমিলনকৃত আঘাতেরই ফলাফল এবং যেটা প্রথম মিলনপূর্বক হাইমেন ছিড়ে যাবার কারনে আদৌ নয়, বরং সেই নারী টি যথেষ্ট পরিমানে কামার্ত বা উত্তেজিত ছিলনা বা শিথিল ছিল না, ফলত সেই কারনে পুরুষ অঙ্গদ্বারা তারও অভ্যন্তর ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল। আর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হাইমেন ছিড়ে রক্তপাতের ঘটার সংখ্যাও ভীষণ কম।

সবকিছুর শেষে বলতে চাই যে, নারীর সতীত্ব নির্ধারন করার কোন “আসলি” উপায় বাস্তবে নেই। রক্তপাতের সাথে সতীত্বের কোন সম্পর্কই নেই- বরং এর সম্পর্ক সেই নারীর হাইমেনের গঠনের সাথে, যে হাইমেনের গঠন জন্মের পর থেকেই এক নারী হতে আরেক নারীর দেহে ভিন্ন হয়ে থাকে। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের গবেষণা লব্ধ ফলাফলে জানা গেছে যে, মাত্র ৩৭% নারী প্রথম মিলনে রক্তপাতের অভিজ্ঞতা লাভ করে। তাহলে আপনি বলুন, আমাদের কেন আমাদের এই স্পর্শকাতর বিষয়ে এত সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ন? সারা পৃথিবী তেই, নারী তার ‘প্রথম মিলনে রক্তপাত’ নামক প্রচলিত ধারনার কারনে লাঞ্চিত, নির্যাতিত, অসম্মানিত এমনকি হত্যাকান্ডের শিকার হন…(যেহেতু অধিকাংশ নারী ও পুরুষেরই ধারণা যে, প্রথম যৌনমিলনে রক্তপাত-ই নারীর সতীত্ব ও সতীচ্ছদ পর্দা অক্ষত থাকার চিহ্ন বা প্রমাণ)। যে সব নারীর প্রথম মিলনে রক্তপাত হয়না, তারা হয় তালাকপ্রাপ্ত হন, অথবা অযাচিত সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ক্রমাগত পারিবারিক সহিংসতা আর নির্যাতনের শিকার হন এমন কি পারিবারিক সম্মান বজায় রাখার স্বার্থে খুন (অনার কিলিং)পর্যন্ত হন। আমাদের এই শিক্ষা টি অবশ্যই থাকতে হবে যে, সকল নারীরই প্রথম মিলনে রক্তপাত নাও হতে পারে; কারন সব নারী পুরু সতীচ্ছদ পর্দা/ হাইমেনের অধিকারী নন, অনেকেরই জন্মগত ভাবেই কোন সতীচ্ছদ পর্দা নেই এবং এই ধারণা বা শিক্ষাটি আসলে অনেক নারীর জীবন কেই রক্ষা করবে।

 

ছবিঃ সংগৃহীত – সাজগোজ.কম

380 I like it
55 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort