স্ক্রাবিং বা এক্সফোলিয়েশন এই শব্দগুলো এখন আমাদের কাছে বেশ পরিচিত। বহু বছর আগে থেকেই নারীদের শরীরের সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য তারা বিভিন্ন রকমের ঘরোয়া বডি স্ক্রাব ব্যবহার করতেন। তখনকার যুগে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই রূপচর্চা করা হতো। এখন তো আমাদের কাছে বিভিন্ন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট আছে, যেগুলো দিয়ে খুব সহজেই ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়। যত্নের অভাবে বডির স্কিন নিষ্প্রাণ বা রুক্ষ-শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ত্বকের যত্ন নিতে ময়েশ্চারাইজেশনের সাথে সাথে বডি স্ক্রাবিং করতে হবে। চলুন জেনে নেই সুন্দর, কোমল ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে হলে কীভাবে শরীরের ত্বক ও হাত-পায়ের যত্ন নিতে হবে।
বডি স্ক্রাব কী ও কেন প্রয়োজন?
সাধারণত বিভিন্ন এক্সফোলিয়েটরের মাধ্যমে বডির উপরের লেয়ারে জমে থাকা ডেড সেলস ও ময়লা পরিষ্কার করে ব্রাইট, স্মুথ এবং ক্লিন করে তোলাকেই বডি স্ক্রাবিং বলা হয়ে থাকে। সাধারণত সুগার কিংবা সল্ট আর অয়েল দিয়ে বেইজ মিক্সার বানানো হয়। বডি ওয়াশের ক্ষেত্রে আমাদের অনেকের মাঝেই একটা ধারণা কাজ করে যে সবচেয়ে বেশি ময়লা হয় ফেইস, হাত ও পা। আর শরীর যেহেতু কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকে, তাহলে ময়লা হবার চান্স তেমন নেই! আসলেই কি তাই? হাত, পা, ফেইস এগুলো তো পরিষ্কার করতেই হয়, কিন্তু পুরো শরীরের ত্বকও ভালোভাবে ক্লিন করতে হবে।
বডি স্ক্রাবের কি আসলেই দরকার আছে?
আমাদের বডিতে নতুনভাবে সেল তৈরি হতে থাকে, আর ডেড সেলস উপরের লেয়ারে জমতে থাকে। প্রতিটি কোষের তো সেলফ লাইফ আছে, নির্দিষ্ট সময় পরে সেটা মৃতকোষে পরিণত হয়, এটি প্রাকৃতিক বিষয়। এর সাথে বাইরের ধুলো ময়লা, ত্বকের সিবাম, সানস্ক্রিন এগুলো একসাথে জমে গিয়ে রোমকূপগুলোকে বন্ধ করে দেয়। পরিষ্কার না করলে খুব সহজেই ব্রেক আউটস, একনে, র্যাশ এগুলো হতে পারে। সেই সাথে ত্বক হয়ে যায় নিষ্প্রাণ।
তাই শুধুমাত্র হাতের কাছে থাকা সোপ ব্যবহার করে কোনোমতে শাওয়ার নিলে বডি স্কিন প্রোপারলি ক্লিন হয় না! এতে বডি স্কিন রাফ ও ফ্ল্যাকি হয়ে যায়। ইরিটেশন, ইচিং, একজিমা, বাম্প, স্পট, পিগমেন্টেশনসহ বিভিন্ন ধরনের স্কিন রিলেটেড প্রবলেমও হতে পারে। আর এক্সফোলিয়েশনের মাধ্যমে বডির স্ট্রেস রিডিউস হয়, ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে বডি স্ক্রাবের দরকার কতটা! তবে রেগুলার স্ক্রাবিং করা যাবে না!
প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে বডি এক্সফোলিয়েশন
প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে বডি এক্সফোলিয়েশনের কাজটা খুব সহজেই করা যায়। যেমন-
সুগার ও সী সল্ট
শুরুতেই জেনেছি এই দুইটি উপাদান বডি স্ক্রাবের বেইজ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সেনসিটিভ ও ড্রাই স্কিনের জন্য সুগার আর অয়েলি স্কিনের জন্য সী সল্ট বেশ ভালো এক্সফোলিয়েটর। তবে বেশি হার্শ হলে কিন্তু সেটা স্কিনে মাইক্রো কাট করতে পারে, তাই খেয়াল রাখবেন।
কফি, কোকোয়া
কফিবিন স্কিন সেল রিজেনারেশনে সাহায্য করে, স্কিনে টাইটেনিংয়ে ভূমিকা রাখে। আর কোকোয়াতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, মিনারেলস, ভিটামিনস যেগুলো ত্বকের ইনফ্ল্যামেশন ও প্রিম্যাচিউর এজিং সাইন কমাতে হেল্প করে। পাশাপাশি স্কিনটোনকে ইমপ্রুভ করে ব্রাইট লুক দেয়।
দারুচিনি
এটি বেশ কার্যকর স্ক্রাবিং এজেন্ট হিসাবে। যাদের প্রচন্ড ড্রাই আর রাফ স্কিন, সেই সাথে বডি স্কিনে একনে এবং একজিমার সমস্যা, তাদের জন্য উপযোগী। এটি ডেড সেলস ক্লিনের পাশাপাশি ব্লাড সার্কুলেশন বাড়িয়ে দেয়, আরও অনেক বেনিফিট আছে।
ওটমিল, নাট অ্যান্ড সীড
এই তিনটি উপাদান খুবই পরিচিত। কারণ এগুলোর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ময়েশ্চারাইজিং প্রোপার্টিজ ড্রাই ও ড্যামেজড স্কিনের জন্য বেস্ট সল্যুশন হিসাবে কাজ করে। বিভিন্ন ধরনের বাদাম, সীড অয়েল এগুলো ত্বকের যত্নে অতুলনীয়।
অ্যালোভেরা জেল ও ফলের মিশ্রণ
যারা বডি স্ক্রাব করতে একদম মাইল্ড, সফট ও জেন্টল ইনগ্রেডিয়েন্টস চান, তাদের জন্য এটি বেস্ট। অ্যালোভেরা জেলের সাথে স্ট্রবেরি, কিউয়ি বা দানাদার ফল ব্লেন্ড করে শরীরের ত্বকে ম্যাসাজ করে নিন। এটি আপনার স্কিনের ডালনেস কমানোর পাশাপাশি ডিপলি ক্লিন করবে।
ক্লে মাস্ক
মুলতানি মাটি, ডিটক্স ক্লে মাস্ক এগুলো খুব জেন্টলি ডেড সেলস ক্লিন করে ফেলে। আর ত্বকে ভিজিবল এনলার্জ পোরস থাকলে সেটারও সল্যুশন দেয়।
বডির স্কিনের নিষ্প্রাণ লাগলে ট্রাই করুন হোমমেড বডি স্ক্রাব
এতক্ষণ ধরে যত ইনগ্রেডিয়েন্টস নিয়ে লিখেছি তা দিয়ে সহজেই বাসায় বডি স্ক্রাব বানাতে পারেন। তবে দানাদার পেস্ট বানাবেন, এমনভাবে মিক্স করবেন না যাতে সব উপাদান একদম মিশে যায়। আবার স্কিনে হার্শ ফিল হয়, এমন বিডস যেন না থাকে সেটাও খেয়াল রাখবেন।
১) কফি এবং সুগার
- ১/৪ কাপ করে কফির গুঁড়ো এবং সুগার
- ২ টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল
- ৩টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল
এই সব উপাদান মিশিয়ে দানাদার একটি পেস্ট বানান, ২ মিনিট ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।
২) কোকোনাট অয়েল এবং সুগার
- ১/৪ কাপ সুগার
- ১/২ কাপ কোকোনাট অয়েল
ভালো করে মিশিয়ে দানাদার পেস্ট বানিয়ে পায়ে ও শরীরে মালিশ করুন ২ মিনিট। এরপর শাওয়ার জেল দিয়ে গোসল করে নিন।
৩) জোজোবা অয়েল, মুলতানি মাটি ও অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
- ৩ ফোঁটা জোজোবা অয়েল
- ২ ফোঁটা সুইট অরেঞ্জ অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
- ৩/৪ চামচ মুলতানি মাটি
ভালোভাবে উপাদানগুলো মিশিয়ে শরীরে ম্যাসাজ করে নিন, এরপর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন, দেখবেন বডির স্কিনের নিষ্প্রাণ ভাব অনেকটাই কমে আসছে।
৪) মধু, লেবু ও সুগার
- ১ টি লেবু
- ২ টেবিল চামচ সুগার
- ১ টেবিল চামচ মধু
বডির স্কিন নিষ্প্রাণ দেখালে এগুলো দিয়ে দানাদার মিশ্রণ বানিয়ে বডিতে ২ মিনিট ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। ব্যস, স্কিন হবে গ্লোয়িং ও ময়েশ্চারাইজড।
সতর্কতা
এগুলো ফেইসে অ্যাপ্লাই করবেন না, আমাদের বডির ত্বকের থেকে মুখের ত্বক অনেকটাই পাতলা। তাই DIY স্ক্রাবগুলো মুখের ত্বকে লাগালে সেটা হার্মফুল হতে পারে। ফেইসে মসলা বা চিনি/লবণ এগুলো ইউজ করলে স্কিন সেলস বার্নিং বা মাইক্রো কাটিং হতে পারে। বডি স্ক্রাবগুলো শরীরের ত্বকের জন্য প্রযোজ্য।
কীভাবে স্ক্রাবিং করতে হবে?
১) প্রথমে কুসুম গরম পানিতে একটি তোয়ালে ভিজিয়ে শরীর মুছে নিন। এতে স্কিন সফট হবে এবং স্ক্রাব ব্যবহার করা সহজ হবে। ড্রাই স্কিনে সরাসরি স্ক্রাবিং করবেন না!
২) তারপর সার্কুলার মোশনে জেন্টলি ম্যাসাজ করুন ১ মিনিট। জোরে প্রেশার দিয়ে ঘষবেন না। সহনীয়ভাবে ম্যাসাজ করবেন। পায়ের নিচ থেকে আস্তে আস্তে বডির উপরের দিকে ম্যাসাজ করবেন।
৩) ভালো করে কুসম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তারপর আপনার পছন্দসই বডি অয়েল বা লোশন লাগিয়ে নিন।
৪) সপ্তাহে এক বা দুইবার বডি স্ক্রাবিং করুন, রেগুলার করা যাবে না।
৫) আগে পায়ে কিংবা হাতে অল্প করে মেখে দেখুন অ্যালার্জি বা অন্য কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা।
যদি বাসায় বডি স্ক্রাব বানাতে ঝামেলা মনে করেন, তাহলে চিন্তার কোনো কারণ নেই। সাজগোজে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বডি স্ক্রাব। বডির স্কিন নিষ্প্রাণ দেখাচ্ছে, আগের মতো গ্লো নেই, এই সব সমস্যার সল্যুশন দিবে বডি স্ক্রাব। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাটারস্টক, সাজগোজ