ফর্সা ও দাগবিহীন ত্বক পেতে ঘরে বসেই ব্লিচ কিভাবে করবেন?

ফর্সা ও দাগবিহীন ত্বক পেতে ঘরে বসেই ব্লিচ কিভাবে করবেন?

clear skin

ফর্সা ও দাগবিহীন ত্বক পেতে কে না চায়? কিন্তু আয়নায় তাকালেন, সবার আগে চোখ চলে গেল ব্রণের দাগটির দিকে অথবা কালো ছোপটি দৃষ্টি কেড়ে নিল। এক আধ দিন রোদে ঘুরেছেন? ব্যাস মুখ, হাত-পায়ের পাতার ত্বক দেখে নিজেই নিজেকে চিনতে পারছেন না, কিন্তু কয়েকদিন পরই হয়ত বা একটা ফাংশান আছে, এখন কি হবে? এমনটা আমাদের সবার সাথেই কখনো না কখনো হয়েছে। কিন্তু তাই বলে কি বাইরে যাব না? ব্রণের দাগটাকে রয়ে যেতে দেব? না, তা নিশ্চয়ই কেউ চান না।

অনেকেই সস্তা ফেয়ারনেস ক্রিম বা কেমিকাল ব্লিচ এর সাহায্যে করতে চান সব সমস্যার সমাধান। পরিচিত কেউ কোন cosmetic ব্যবহার করে ফল পেল, চোখ কান বন্ধ করে কোন কিছু চিন্তা না করে কিনে ফেললেন সেই ক্রিমটি। মনে রাখবেন একজনের ত্বকে যেটা কাজ করেছে আপনার ত্বকে সেটা কাজ নাও করতে পারে; আর অধিকাংশ রঙ ফর্সাকারী, দাগ দূর করার ক্রিমেই কিছু ক্ষতিকর উপাদান থাকে, যেমন পারদ, ক্লোরিন ভিত্তিক ব্লিচিং এজেন্ট। উন্নত দেশে এসব উপকরণ হয় নিষিদ্ধ, নয়ত খুবই moderately ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমাদের উপমহাদেশে তার কোন বালাই নেই। ফর্সা ও দাগবিহীন ত্বক পেতে তথাকথিত হারবাল ব্লিচ এর উপাদানগুলো একটু পড়ে দেখবেন তো, ওতে আসলে হারবাল কী কী আছে? সাত দিনে ফর্সা ও দাগবিহীন ত্বক পান – এমন চটকদার ডায়লগ দিয়ে আর অজ্ঞতাকে পুঁজি করে এরা চুটিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। আর যারা এর ফাঁদে যারা পা দিচ্ছেন তারা ফ্রী পাচ্ছেন ক্যান্সারের ঝুঁকি, র‍্যাস, অ্যালার্জি ইত্যাদি।

কিন্তু যদি চান তবে এই সমস্যাগুলোর সমাধান নিজেই করতে পারেন খুব সহজেই। এর জন্য চাই শুধু একটু সময় আর ধৈর্য। আজ আপনাদের শেখাব ঘরে বসেই ব্লিচ করার কিছু পদ্ধতি, যা নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনি সহজেই পাবেন রোদেপোড়া ছোপ, ব্রণের জেদি দাগ থেকে মুক্তি।

ফর্সা ও দাগবিহীন ত্বক পেতে ঘরে বসেই ব্লিচ

শুষ্ক ত্বকের জন্য

ফর্সা ও দাগবিহীন ত্বক পেতে হলুদ, লেবু ও দুধের মিশ্রণ - shajgoj.com

১. আধা চা চামচ দুধের সর বা দুধ, এক চিমটি হলুদ গুঁড়া (কাঁচা হলুদ ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন), এক চা চামচ লেবুর রস (তাজা রস ব্যবহার করবেন) নেবেন। সব উপকরণ একত্রে মিশিয়ে ত্বকে লাগান এবং পনের মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

২. আধা চা চামচ মধু, দুই ফোটা বাদাম তেল (এর বদলে তিলের তেল ব্যবহার করতে পারেন), এক চা চামচ লেবুর রস, এক চিমটি হলুদ গুঁড়া, আধা চা চামচ বেসন মিশিয়ে ত্বকে লাগান, পনের মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

৩. এক চা চামচ লেবুর রস, এক চিমটি হলুদ গুঁড়া, আধা চা চামচ তাজা টমেটোর রস, আধা চা চামচ বেসন মিশিয়ে ত্বকে লাগান, ত্বকের উপর প্যাকটি পুরো শুকিয়ে যাবার আগেই ধুয়ে ফেলুন।

দ্রষ্টব্য

দুধের সরের বদলে দুধ ব্যবহার করতে পারেন। আর চানা ডালের বেসনের বদলে মসুর ডাল বাটাও ব্যবহার করতে পারেন।

সাধারন ত্বকের জন্য

ফর্সা ও দাগবিহীন ত্বক পেতে হলুদ, লেবু ও বেসনের মিশ্রণ - shajgoj.com

১. এক চা চামচ লেবুর রস, এক চিমটি হলুদ গুঁড়া, আধা চা চামচ বেসন মিশিয়ে ত্বকে লাগান। পনের মিনিট পর ত্বক ধুয়ে পরিস্কার করে ফেলুন।

২. একটি ছোট আলুর অর্ধেক বেটে নিন, এর সাথে আধ চিমটি হলুদ গুঁড়া যোগ করে মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

৩. এক চা চামচ লেবুর রস, এক চিমটি হলুদ গুঁড়া, আধা চা চামচ তাজা টমেটোর রস মিশিয়ে মুখে লাগান। তরল মিশ্রণটি শুকিয়ে গেলে আবার লাগান। এভাবে তিন-চার বার কাজটি করুন। পনের মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য

ফর্সা ও দাগবিহীন ত্বক পেতে মুলতানি মাটি ও লেবুর মিশ্রণ - shajgoj.com

১. আধা চা চামচ মুলতানি মাটির সাথে এক চা চামচ লেবুর রস, এক চিমটি হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।

২. এক চা চামচ লেবুর রস, এক চিমটি হলুদ গুঁড়া, আধা চা চামচ তাজা টমেটোর রস মিশিয়ে মুখে লাগান। তরল মিশ্রণটি শুকিয়ে গেলে আবার লাগান। এভাবে তিন চার বার করুন। পনের মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

৩. এক চামচ আলুর রসের সাথে আধ চামচ লেবুর রস যোগ করুন, তরল মিশ্রণটি মুখে লাগান, শুকিয়ে গেলে আবার লাগান। এভাবে তিন চার বার করুন পুরো কাজটি। বিশ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।

দ্রষ্টব্য

তৈলাক্ত ত্বকে বেসন ব্যবহার করলে তেমন কোন ফল পাবেন না। আর আজকাল আসল মুলতানি মাটি পাওয়াই যায় না। যদি মুলতানি মাটি না পান এর বদলে চালের গুঁড়া ব্যবহার করবেন, এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপকারী।

সেনসিটিভ বা সংবেদনশীল ত্বকের জন্য

যাদের ত্বক সেনসিটিভ তারা উপরে উল্লিখিত ব্লিচগুলো ব্যবহার করবেন না। সেনসেটিভ স্কিন এর ক্ষেত্রে নিচের ব্লিচগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

১. এক চামচ চালের গুঁড়া নিন। তাতে আধা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগান। দশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

২. চালের গুঁড়া এক চামচ, এক চামচ আলুর রস নিন। উপকরণ দুটি একত্রে মিশিয়ে মুখে লাগান। বিশ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।

৩. এক কাপ চাল পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পানি ঘোলা হয়ে গেলে সেই পানি মুখে লাগান। মুখ ধুয়ে ফেলার দরকার নেই।

দ্রষ্টব্য

সেনসিটিভ ত্বকে যেকোনো কিছু লাগানোর আগে চিবুকে বা গলায়ে একটু লাগিয়ে দেখুন। যদি জ্বালা করে তবে মুখে লাগাবেন না। আপনারা যদি লেবুর রস ব্যবহার করতে না পারেন তবে শুধু চালের গুঁড়াও লাগাতে পারেন।

ঘরে বসে ব্লিচ করার সময় সতর্কতা

১. সাত দিনে দুইবার এর বেশি এগুলো ব্যবহার করবেন না। খুব বেশি ব্রণ যুক্ত ত্বকেও ব্যবহার করবেন না। এগুলো ব্রণের দাগ দূর করতে বা হালকা করতে পারে। তাই পুরো মুখে ব্যবহার না করে শুধু দাগ ছোপের উপরে ব্যবহার করতে পারেন।

২. ব্লিচ করার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন। তারপর মুখ ফেইসওয়াস দিয়ে ধুয়ে নিন, তারপর ব্লিচ করুন।

৩. এখানে যে উপায়গুলো বলা হয়েছে সবগুলোই কার্যকরী, কিন্তু মনে রাখবেন এগুলো মাস্ক না। সুতরাং ত্বকে যতক্ষণ উপকরণগুলো রাখতে বলা হয়েছে ততক্ষণই রাখবেন।

৪. যদি ত্বকে খুব বেশি জ্বালা করে তবে ব্লিচ ধুয়ে ফেলুন। পরের বার থেকে লেবুর রস, হলুদ এগুলোর পরিমান কমিয়ে দিন।

৫. লেবুর রস, হলুদ আলুর রস ও টমেটোর রস ত্বকে ব্লিচ হিসেবে কাজ করে। মেলামিন কমায় ও দাগ দূর করে। কিন্তু এগুলো খুবই এসিডিক হয় যা সবার স্কিনে  মানাতে নাও পারে। তাই ব্যবহার করার আগে গলায় বা চিবুকে লাগিয়ে পরীক্ষা করে নিন।

৬. হলুদ গুঁড়ার বদলে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। না পারলে স্কিনকেয়ার এর জন্য হলুদ আলাদাভাবে সংরক্ষণ করুন। রান্নাঘর থেকে নেবেন না।

৭. হলুদ ও লেবুর রস ত্বকের সংবেদনশীলতা বাড়ায়। এতে করে ত্বকে রোদ লাগলে ত্বক পুড়ে যেতে পারে। তাই ব্লিচ রাতে করুন আর বার ঘণ্টার মধ্যে রোদে না যাওয়ার চেষ্টা করুন।

৮. এই ব্লিচগুলো হাতে পায়ে ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো হাত-পায়ের ত্বক উজ্জ্বল করবে। আর সেক্ষেত্রে চাইলে লেবুর রস বা হলুদ বেশি নিতে পারেন।

ফর্সা ও দাগবিহীন ত্বক পেতে ঘরে বসেই ব্লিচ কিভাবে করবেন তা তো জানা হয়ে গেলো। এখন চলুন দেখে নেওয়া যাক কিছু প্রডাক্ট যেগুলো ফর্সা ও দাগবিহীন ত্বক পেতে খুবই কার্যকরী। প্রডাক্টগুলো পাওয়া যাবে শপ সাজগোজ-এ।

সাধারন সতর্কতা

১. নিয়মিত ব্লিচ ব্যবহার করলে কোনভাবেই SPF 30 সানস্ক্রিন ব্যবহার না করে বাইরে যাবেন না।

২. যাদের মুখে অতিরিক্ত ব্রণ আছে তারা এগুলো ব্যবহার করবেন না। ব্রণ ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করে দূর করার চেষ্টা না করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

৩. রুপচর্চায় লেবু, হলুদ যারা নিয়মিত ব্যবহার করেন তারা কোনভাবেই সাবান ব্যবহার করবেন না। মৃদু ফেইসওয়াস ব্যবহার করুন।

৪. কোন ভাবেই রাসায়নিক ব্লিচ ব্যবহার করবেন না। এগুল ত্বককে বুড়িয়ে দেয়। নিয়মিত রাসায়নিক ব্লিচ বা রঙ ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহার করলে চল্লিশের কোঠায়ে পৌছে আফসোস করতে হবে। রাসায়নিক ব্লিচ এর মত এই natural ব্লিচ এর কোন side effects নেই।

৫. রোদে পুড়ে গেলে যত তাড়াতাড়ি পারেন ব্যবস্থা নিন। ট্যান একবার বসে গেলে দূর করা কঠিন হয়ে যায়।

এই নিয়মগুলো মেনে চলে ধৈর্য ধরে নিয়মিত ব্যবহার করলে অবশ্যই ফর্সা ও দাগবিহীন ত্বক পাওয়া সম্ভব। মনে রাখবেন কেমিকাল ব্লিচ, ফেয়ার পলিশ এগুলো আধা ঘণ্টায় ঝকঝকে ত্বক দিলেও পরে পস্তাতে আপনাকে হবেই। এমন কী parlour পরিচিত হলে তারাও বলে এগুলো ব্যবহার করা ঠিক নয়। এর চেয়ে বরং নিয়মিত একটু ত্বকের যত্ন নিন, এসব বিপদজনক procedure এর দরকারই পড়বে না।

ছবিঃ সংগৃহীত – গার্লসলি.কম, সাটারস্টক

15 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort