হেয়ার কালার করার আগে আলাদাভাবে চুলের যত্ন নিতে হবে কি?

হেয়ার কালার করার আগে আলাদাভাবে চুলের যত্ন নিতে হবে কি?

2 (2)

চুলকে পছন্দের রঙে রাঙাতে অনেকেই পছন্দ করেন। হেয়ার কালার করলে ফেইসে ডিফারেন্ট একটি লুক আসে। কেউ হয়তো পার্লারে যেয়ে হেয়ার কালার করেন, কেউবা ঘরে বসেই। তবে কালার যেভাবেই করা হোক না কেন, তার আগে মানতে হবে কিছু নিয়ম। কারণ নিয়ম না মেনে কালার করলে চুল হয়ে উঠবে রুক্ষ ও শুষ্ক। কিন্তু হেয়ার কালার করার আগে নিয়ম মানা কেন জরুরি অথবা কীভাবে যত্ন নিতে হয় তা নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন থাকে। এসব কনফিউশন ক্লিয়ার করার জন্যই আজকের আর্টিকেল। চলুন তাহলে আজ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

হেয়ার কালার করার আগে চুলের যত্ন

চুলে রঙ করতে যাওয়ার আগে অনেকেই ভাবেন, ‘চুলে ভালো করে তেল লাগিয়ে শ্যাম্পু করে নেই। এতে চুল ঝরঝরে থাকবে এবং কালার ভালোভাবে বসবে।’ আসলেই কি তাই? হেয়ার কালার করার কত সময় আগে তেল লাগানো বা শ্যাম্পু করা উচিত, কোন প্রোডাক্টগুলো ইউজ করা যাবে আর কোনগুলো নয়, এগুলো নিয়ে কনফিউশন যেন বাড়তেই থাকে। আজ এসব নিয়েই বিস্তারিত জানাবো আপনাদের।

শ্যাম্পু করার সঠিক সময়

হেয়ার কালার করার ঠিক আগ মুহুর্তে শ্যাম্পু করা উচিত নয়। এতে ন্যাচারাল অয়েল ধুয়ে যায় এবং চুল ড্রাই হয়ে হেয়ার ব্রেকেজ হতে পারে। তার মানে এই নয় যে আপনি অয়েলি, গ্রিজি বা ময়লা চুলেই কালার করে ফেলবেন! সাধারণত চুল কালার করার ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা আগে শ্যাম্পু করা উচিত। এই সময়ের মধ্যে স্ক্যাল্পে কিছু ন্যাচারাল অয়েল তৈরি হবে, যা হেয়ার স্ট্র্যান্ডকে সুরক্ষিত রাখবে। এতে এক্সেস হেয়ার ফল, স্ক্যাল্প ড্যামেজ ও ইরিটেশনের প্রবলেম প্রিভেন্ট হবে।

হেয়ার কালার করার আগে চুলের যত্ন

চুল শ্যাম্পু করার সঠিক পদ্ধতি

১। চুল ধোয়ার জন্য ক্ল্যারিফাইয়িং শ্যাম্পু ইউজ করুন। এতে স্ক্যাল্পে প্রোডাক্ট বিল্ড আপ হবে না।

২। শ্যাম্পু করার পর হাইড্রেটিং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।

৩। চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালোভাবে শ্যাম্পু করুন।

একটি কথা আপনাদের জানিয়ে রাখি। চুল কালার করার আগে যে প্রোডাক্টগুলো আপনি ব্যবহার করছেন, কালার করার পর সেই একই প্রোডাক্ট ব্যবহার করা নাও যেতে পারে। কালার প্রোটেক্ট করবে এমন প্রোডাক্ট তখন ইউজ করতে হবে। হেয়ার কালার করার আগে কোন প্রোডাক্টগুলো ইউজ করা যাবে এবং কোনগুলো নয়, সেগুলো সম্পর্কে চলুন এখন জেনে নেয়া যাক।

চুলে রঙ করার আগে যে প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করা যাবে

ক্ল্যারিফাইয়িং শ্যাম্পু

কালার করার ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা আগে চুল ক্ল্যারিফাইয়িং শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই শ্যাম্পু স্ক্যাল্পে থাকা অয়েল, সিরাম ভালোভাবে ক্লিন করে। শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।

প্রি-কালার ট্রিটমেন্ট

ড্যামেজ হেয়ারে কালার ভালোভাবে বসতে চায় না। তাই চুল হেলদি রাখার জন্য হেয়ার কালার করার এক সপ্তাহ আগে প্রি-কালার ট্রিটমেন্ট হিসেবে ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন। এতে চুল ড্যামেজ হওয়ার হাত থেকে সুরক্ষিত থাকবে।

হেয়ার কালার করার আগে চুলের যত্ন

নন-অয়েলি প্রোডাক্টস

যদি আপনি সিরাম ও স্প্রে ব্যবহার করেন, তবে তা যেনো লাইটওয়েট ও নন-অয়েলি হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এতে স্ক্যাল্প গ্রিজি হবে না। এতে কালার ভালোভাবে বসবে।

ডাই রিমুভারস

আপনার চুলে যদি আগে থেকেই কালার করা থাকে এবং সেই কালার চেঞ্জ করে নতুনভাবে কালার করাতে চান, তখন ডাই রিমুভারস ইউজ করতে পারেন। তবে হুট করে চুলে ডাই রিমুভারস ব্যবহার করবেন না। ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন হেয়ার এক্সপার্ট বা স্যালুনে এ সম্পর্কে বিস্তারিত ভালোভাবে জেনে নিন।

যা ইউজ করা যাবে না

তেল

হেয়ার কালার করার আগে চুল পরিষ্কার রাখা জরুরি। তাই অনেকেই চুলে তেল দিয়ে শ্যাম্পু করার কথা ভাবেন। এই কাজটি মোটেও করা যাবে না। সাধারণত চুল কালার করার সপ্তাহখানেক আগে অয়েল ট্রিটমেন্ট করা উচিত।

হেয়ার স্টাইলিং প্রোডাক্টস

চুল কালার করার আগে জেল, হেয়ার স্প্রে ও সিরাম দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এগুলো স্ক্যাল্পে প্রোডাক্ট বিল্ড আপ করে দিতে পারে। এতে চুলে ঠিকমত কালার স্টে করে না। তাই কালার ট্রিটমেন্ট করাতে চাইলে অন্তত সপ্তাহখানেক আগে এগুলো ব্যবহার করা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন।

হেয়ার স্টাইলিং প্রোডাক্টস

ড্রাই শ্যাম্পু

ড্রাই শ্যাম্পু আসলে কালারিং প্রসেসে কোনো ব্যাঘাত ঘটায় না। তবে এটা চুলের টেক্সচার চেঞ্জ করে দিতে পারে। তাই হেয়ার কালার করার আগে ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

এই তো জানিয়ে দিলাম চুল কালার করার আগে কোন প্রোডাক্ট ইউজ করবেন আর কোনগুলো নয়, সে সম্পর্কে। তবে আগে যেভাবেই যত্ন নিন না কেন, চুল কালার করার পরও কিন্তু বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। চলুন তাহলে হেয়ার কালার স্টে করার জন্য কী করবেন, সে সম্পর্কে এখন জেনে নেওয়া যাক।

কালারড হেয়ারের যত্ন

১। যতবেশি চুলে শ্যাম্পু করবেন তত দ্রুত হেয়ার কালার ফেইড হয়ে যাবে। তাই রেগুলার শ্যাম্পু ব্যবহার করার পরিবর্তে কালার প্রোটেকশন শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।

২। চুল কালার করা হলে আরো বেশি ভঙ্গুর হয়ে যায়, সেই সাথে হেয়ার কালার ফেইড হতে থাকে। এই সমস্যা কমানোর জন্য চুল কন্ডিশনড রাখা জরুরি। তাই যতবার শ্যাম্পু করবেন ততবার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এছাড়া সাপ্তাহিক হেয়ার কেয়ার রুটিনে অ্যাড করুন অয়েল ট্রিটমেন্ট। এটি চুলের রুক্ষতা কমাতে সাহায্য করে।

৩। সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন হিট স্টাইলিং প্রোডাক্টস এড়িয়ে যেতে। কারণ হিটের কারণে কালার করা চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। চুলে হিট দিয়ে কোনো স্টাইল করতে চাইলে অব্যশই হিট প্রোটেকশন স্প্রে ব্যবহার করুন। এটি হিটের কারণে হেয়ার ড্যামেজ হওয়া রোধ করবে।

৪। কালারড হেয়ার ঝলমলে ও সিল্কি করতে নিয়মিত হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। পছন্দমত প্যাক ঘরেই তৈরি করতে পারবেন। চলুন কিছু হেয়ার প্যাক সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

কালারড হেয়ারের জন্য হেয়ার প্যাক
কলা ও মধুর হেয়ার প্যাক

কালার করা চুলের শাইনিভাব ধরে রাখতে এবং চুল সফট রাখতে এই প্যাকটি বেশ কার্যকর। একটি বা দুটি পাকা কলা (চুলের লেন্থ অনুযায়ী) ভালোভাবে ম্যাশ করে নিন। এবার তাতে টকদই, নারিকেল তেল ও এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। চুলে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এবার কালার ট্রিটেড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।

কলা ও মধু দিয়ে হেয়ার প্যাক

ডিমের কুসুম ও ভিটামিন ই দিয়ে তৈরি প্যাক

কালারড হেয়ারের জন্য ভিটামিন ও প্রোটিনের প্রয়োজন রয়েছে। ডিমের কুসুমে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ফ্যাট- যা চুলের জন্য বেশ উপকারী। ভিটামিন ই হেয়ার গ্রোথ করতে সাহায্য করে। একটি ডিমের কুসুমের সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে নিন। চাইলে ১/২ ফোঁটা অ্যাসেনশিয়াল অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। প্যাকটি চুলে অ্যাপ্লাই করে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি কালারড হেয়ারের রুক্ষতা দূর করে চুলকে ঝলমলে ও সিল্কি করে তুলবে।

কালারড হেয়ারের জন্য অয়েল ট্রিটমেন্ট

অলিভ ও কোকোনাট অয়েল

হেয়ার সফট ও স্মুথ করতে অলিভ ও কোকোনাট অয়েল বেশ কার্যকর। চুলে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করার সাথে সাথে ড্যামেজ কমিয়ে করে তোলে হেলদি। দুটো তেল ভালোভাবে মিশিয়ে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন। আধা ঘন্টা পর চুলে শ্যাম্পু করে নিন।

 

কালার করা চুলের যত্ন কীভাবে নিতে হবে, সেটা তো আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু হেয়ার কালার করার আগে কী কী যত্ন নেয়া দরকার সেটা অনেকেই জানেন না। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দিলাম আজকের আর্টিকেলে। এবার নিশ্চয়ই হেয়ার কালার করার আগে কীভাবে চুলের যত্ন নিবেন তা নিয়ে আর কনফিউশন থাকবে না। অথেনটিক হেয়ার কেয়ার, স্কিন কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ণ মল্লিকা, ওয়ারীর র‍্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম  থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।

ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক

2 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort