মাদক ও মাদকাসক্তি | কারণ, লক্ষণ এবং নির্ণয়ের উপায় (পর্ব ০২) - Shajgoj

মাদক ও মাদকাসক্তি | কারণ, লক্ষণ এবং নির্ণয়ের উপায় (পর্ব ০২)

drug

গত পর্বে মাদক সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেয়েছেন। আজ জানবেন আপনার সন্তান কেন মাদক নেয়, লক্ষণ, মাদক নির্ণয় পরীক্ষা ইত্যাদি সম্পর্কে।

আপনার সন্তান কেন মাদক নিচ্ছে ?

(১) মাদকাসক্তির বড় কারণ হলো মাদকের সহজলভ্যতা।

(২) বন্ধুদের চাপে পড়ে অনেকে মাদক নিয়ে থাকে।

(৩) বাবা-মায়ের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেকে মাদক গ্রহণ করে থাকে।

(৪) অনেকের মাঝে মাদক নিয়ে স্মার্ট হওয়ার প্রবণতা থাকে যা তাকে ঠেলে দেয় মাদকের জগতে।

(৫) মানসিক সমস্যা যেমন: হতাশা, একাকীত্ববোধ, বিষণ্ণতার কারণে এসব  থেকে রেহাই পেতে মাদককে বেছে নেয় ।

(৬) এন্টি সোশ্যাল পারসোনালাটি, শৈশবে বিকাশে সমস্যা থাকলেও অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে ।

(৭) ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ায় মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে মাদক গ্রহণ করে ।

৮) পারিবারিক কারণেও আপনার সন্তান মাদকে জড়িয়ে পড়ে।

মাদক গ্রহণের ফলে একজন ব্যাক্তির মাঝে বিরাট শারীরিক ও আচরণগত পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তনগুলো একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন আপনার সন্তান মাদক নিচ্ছে কি না।

শারীরিক লক্ষণগুলো

(১) খাওয়ার প্রবণতা এবং ঘুমের সময়সীমার পরিবর্তন চলে আসলে। ওজন হঠাৎ করে বেড়ে গেলে বা কমে গেলে।

(২) চোখ লাল হয়ে থাকলে এবং চোখের মণি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় বা ছোট দেখালে ।

(৩) নাক দিয়ে প্রায়ই রক্ত পড়লে। সাধারণত কোকেইন বা নিঃশ্বাসের সাথে  গ্রহণ করতে হয় এমন মাদকের বেলায় এই লক্ষণ দেখা যায়।

(৪) চেহারা এবং পোশাকের পরিধান ও যত্নে অবনতি দেখা দিলে।

(৫) শরীরে এমন কোন ক্ষত বা কাটা ছেড়া দেখা গেলে যা সম্পর্কে তারা জানে না বা কীভাবে আঘাত পেলো তা আপনাকে বলতে না চাইলে।

(৬) তাদের মুখে বা শরীরে বা পোষাকে অদ্ভুত বা অপরিচিত কোন গন্ধ পেলে।

(৭) মাদকাসক্ত ব্যাক্তির চেহারায় কালো ছোপ ছোপ দাগ তৈরি হয় ।

আচরণগত পরিবর্তনগুলো

(১) যৌন ক্রিয়ায় অনীহা বা ক্ষমতা হ্রাস পেলে।

(২) ক্লাস বা অফিসে ঘনঘন যেতে না চাওয়া বা প্রতিষ্ঠানে কোন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া ।

(৩) কাজে অমনযোগী হলে, ব্যাক্তিগত শখ বা খেলাধুলায় আগ্রহ হারিয়ে ফেললে ।

(৪) তার সহকর্মী, শিক্ষক বা বন্ধুদের কাছ থেকে ঘনঘন নালিশ আসতে থাকলে ।

(৫) বাসায় রাখা টাকার হিসাব না মিললে। কারণ নেশার দ্রব্য কিনতে টাকা লাগে। তাই সাধারণত নেশার দ্রব্যের মুল্য পরিশোধের জন্য আপনার সন্তান টাকা , মুল্যবান সামগ্রী, অলংকার চুরি করতে পারে ।

(৬) পড়াশোনার নাম করে ঘনঘন টাকা চাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেলে ।

(৭) পরিবাররে সদ্যসদের সাথে ব্যবহারের পরিবর্তন আসলে। সাধারণত মাদকাসক্তির সময়গুলোতে তারা খিটখিটে মেজাজের হয়ে থাকে ।

(৮) বেশিরভাগ সময়ই একা থাকলে বা প্রাইভেসি সচেতন হয়ে পড়লে। বেশির ভাগ সময়ই রুমের দরজা বন্ধ রাখলে ।

(৯) অকারণে বিরক্তিবোধ করলে ।

(১০) অতিরিক্ত মিষ্টি খেতে আরম্ভ করলে ।

(১১) পুরনো বন্ধুদের পরিবর্তে নতুন নতুন বন্ধু চোখে পড়লে ।

(১২) ঘরে বা বিছানায় পাউডার জাতীয় জিনিস পাওয়া ।

(১৩) প্রায়ই কারো না কারো সাথে মারামারি বা ঝগড়া ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়া।

(১৪) সব সময় রুমে এবং শরীরে পারফিউম বা এয়ারফ্রেশনার ব্যবহার করা ।

(১৫) চোখের লাল ভাব কাটানোর জন্য ড্রপ ব্যবহার শুরু করলে ।

(১৬) অকারণে রেগে গেলে ।

আপনার সন্তানের মাঝে এধরনের শারীরিক ও আচরণগত পরিবর্তনের কয়েকটি লক্ষণ একসাথে থাকলে বুঝে নিবেন নিঃসন্দেহে সে একজন মাদকাসক্ত। এছাড়া ক্লিনিক্যালি কিছু পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় আপনার সন্তান মাদকাসক্ত কি না।

মাদকাসক্ত নির্ণয়ের জন্য সাধারণত রক্ত পরীক্ষা, মূত্র  পরিক্ষা এবং মাদকাসক্ত ব্যাক্তির চুল ও মুখের লালা পরীক্ষা করা হয় ।

মাদকাসক্ত ব্যাক্তি কখনোই তার মাদক গ্রহণের ব্যাপারটি স্বীকার করবে না। এমনকি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষাতেও সে নানা উপায়ে বাঁচার চেষ্টা করে থাকে। সাধারণত সরকারি বা বেসরকারিভাবে নিয়োগের ক্ষেত্রে এমপ্লোয়িদের  মধ্যে  কেউ মাদকাসক্ত কি না তা নির্ণয়ের জন্য যখন পরীক্ষা করা হয় সেক্ষেত্রে মাদকাসক্ত ব্যাক্তি নানান উপায়ে ড্রাগস টেস্ট থেকে উতরে ওঠার চেষ্টা করে। সে বিভিন্ন উপায় অবলম্বণ করে থাকে।

(১) মুত্র পরীক্ষার ক্ষেত্রে একজন মাদকাসক্ত ব্যাক্তি পরীক্ষার প্রায় তিন চার ঘন্টা আগে প্রচুর পানি পান করে থাকে এবং যতবার সম্ভব মুত্র ত্যাগ করে থাকে। এতে ইউরিনে বিদ্যমান মাদক শরীর থেকে বের হয়ে পড়ে ।

আবার অনেক ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত ব্যাক্তি তার নিজ্বস ইউরিন সরবরাহ না করে লিকুইড বা সিনথেটিক ইউরিন সরবরাহ করে থাকে যা কেমিক্যাল বাজারে পাওয়া যায়। অনেক সময় নিয়োগের ক্ষেত্রে মাদক নির্ণয় পরীক্ষায় নির্দিষ্ট মাদক দ্রব্যের উপস্থিতি আছে কি না তা পরীক্ষা করা হয়। এক্ষেত্রে একজন মাদকাসক্ত ব্যাক্তি যদি আগে থেকেই জানতে পারে কোন মাদকদ্রব্যের পরীক্ষা করা হবে সেক্ষেত্রে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। আবার অনেকে নিজ মুত্রে রাসায়নিক বস্তু ব্যবহার করে মুত্র ভেজাল করে থাকে যেন ইউরিনে মাদকের উপস্থিতি পাওয়া না যায় ।

(২) মাদকের উপস্থিতি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সন্দেহ ভাজন ব্যাক্তির চুল কেটে নেওয়া হয়। এবং চুল সাধারণত ১.৫ ইঞ্চি কেটে নেওয়া হয় মাথার সামনে অথবা পেছন থেকে। এই পরীক্ষায় পাশ হবার জন্য মাদকাসক্ত ব্যাক্তি তার চুল কেটে ছোট করতে পারেন। ফলে পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত চুল পাওয়া না গেলে বুক অথবা হাত থেকে লোম নেয়া হয় । সেক্ষেত্রে চুলের ফলিকলে মাদক ধরা পড়ে না। এছাড়াও কিছু কিছু মাদক রয়েছে যার ব্যবহারে কতদিন পর্যন্ত ফলিকলে বিদ্যমান থাকে তা জানা থাকলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব  হয়। আবার পরীক্ষার আগে চুল যদি হোয়াইট ভিনেগার , স্যালিসাইলিক এসিড , অয়াশিং পাউডার দিয়ে ধোয়া হয় তবে ফলিকলে মাদকের উপস্থিতি পাওয়া সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে বাজারে বিশেষ ধরণের শ্যাম্পু পাওয়া যায় যা দ্বারা চুল ধোয়া হলে চুলের ফলিকলে মাদকের উপস্থিতি বোঝা যায় না ।

(৩) মাদক  পরীক্ষার আর একটি মাধ্যম হলো মুখের লালা পরীক্ষা করা । এই পরীক্ষায় উতরে ওঠার বিশেষ কোন পদ্ধতি নেই। যদি না পরীক্ষার আধ ঘন্টা আগে মাদকাসক্ত ব্যাক্তি স্পাইসি খাবার খেয়ে থাকেন অথবা মাউথ অয়াশ ব্যবহার করে থাকেন।

(৪) রক্ত পরীক্ষার ক্ষেত্রেও তেমন কোন বিশেষ পদ্ধতি নেই তবে মাদকাসক্ত ব্যাক্তি পরীক্ষার কিছুদিন আগে এস্পিরিন গ্রহণ করলে পরীক্ষায় উতরে ওঠার সম্ভাবনা থাকে ।

মাদকাসক্ত ব্যাক্তি সবসময়ই চাইবে মাদক নির্ণয় পরীক্ষা থাকে উতরে জন্য সেক্ষত্রে যে বা যারা পরীক্ষা করবেন তাদেরকে এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে যেন মাদকাসক্ত ব্যাক্তি কোন অনৈতিক পন্থা অবলম্বণ না করেন।

ছবি – হেলথকেয়ার ডট কম

লিখেছেন – জোহরা হোসেন

মাদক ও মাদকাসক্তি: মাদক দেহে ও মস্তিষ্কে কীভাবে কাজ করে ? (পর্ব ১)

 মাদক ও মাদকাসক্তি: প্রভাব, করণীয় এবং চিকিৎসা (পর্ব ০৩)

19 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort