শিশুর শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে কী করে বুঝবেন?

শিশুর শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে কী করে বুঝবেন?

3

মানব দেহের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য যত রকম পুষ্টি প্রয়োজন তার মধ্যে আয়রন অন্যতম। জন্মের পর প্রথম পাঁচ বছরে শিশুর সব রকম বিকাশের মূল ভিত্তি স্থাপন হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অনেক শিশুর দেহে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। কিন্তু আয়রনের অভাব কেন হয় এবং কোন ধরনের শিশুদের মাঝে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়? কীভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান এ সমস্যায় ভুগছে কিনা? শিশুর শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে কিনা, এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতেই আজকের এই লেখা।

শিশুর জন্য আয়রন কেন জরুরি?

আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রাখে। এই হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে সারা শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে। এটি শরীরের পেশীতে অক্সিজেন জমা রাখে এবং পরবর্তীতে কোষের জন্য নির্ধারিত কার্যক্রম গতিশীল রাখতে সাহায্য করে। বাড়ন্ত শিশুর স্নায়ুবিক ও মানসিক বিকাশের জন্যও আয়রন জরুরি। শিশুর শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় আয়রন কম থাকলে আয়রনের ঘাটতিজনিত রোগ দেখা দেয়। আয়রনের ঘাটতির ফলে মূলত যে রোগগুলো হয় তার মধ্যে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া প্রধান। আয়রনের অভাবজনিত কারণে যে রক্তশূন্যতা হয় তাকে আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া বলা হয়।

শিশুর শরীরে আয়রনের ঘাটতি

আয়রনের অভাবে ঝুঁকিতে যারা

  • যে সমস্ত শিশু নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্মগ্রহণ করে অথবা কম ওজন নিয়ে জন্মায়
  • এক বছর বয়সের আগেই শিশুকে গরু বা ছাগলের দুধ পান করালে
  • বুকের দুধ পানকারী শিশুকে ৬ মাস বয়সের পর আয়রন সমৃদ্ধ খাবার না দিলে
  • শিশুদের ফর্মুলা দুধ দিলে
  • নিয়মিত শিশুদের আয়রনহীন খাবার যেমন সুজি, বার্লি, চালের গুঁড়া, টিনজাত শিশু খাদ্য ইত্যাদি খাওয়ানো হলে
  • যেসব শিশু দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া বা কৃমির সংক্রমণে ভোগে
  • যে সমস্ত শিশু অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী হয়
  • শিশু গর্ভে থাকাকালীন সময়ে মা যদি আয়রনসমৃদ্ধ খাবার না খায় তাহলে জন্মগতভাবেই শিশুর দেহে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়

আয়রনের অভাবের লক্ষণ

  • খুব স্বল্প পরিমাণ আয়রনের অভাবেও শিশুর স্বাভাবিক দৈনন্দিন কার্যকলাপে ব্যাঘাত ঘটতে পারে
  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আয়রনের অভাবে রক্তশূন্যতা না হওয়া পর্যন্ত লক্ষণ প্রকাশ পায় না
  • ক্লান্তি, অবসাদ ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়
  • স্বল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠে
  • হাত পা বেশিরভাগ সময় ঠান্ডা থাকে
  • শরীরের চামড়া ফ্যাকাসে হয়ে যায়
  • বুকে ব্যথা, ঘন ঘন শ্বাস ফেলা বা হার্টবিট দ্রুত হয়ে যায়
  • জিহ্বায় ঘা দেখা দেয়
  • হাত ও পায়ের নখ ভঙ্গুর হয়ে যায়

অ্যানিমিয়া

প্রতিরোধে করণীয়

শিশুকে যদি ফর্মুলা দুধ বা কৌটার দুধ দিতেই হয় তাহলে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন আয়রন সমৃদ্ধ হয়। আর যদি শিশু শুধু বুকের দুধই পান করে সেক্ষেত্রে মা আয়রনযুক্ত খাবার খেলেই শিশুর চাহিদা অনেকাংশেই পূরণ হয়। বুকের দুধ পান করছে এমন শিশুর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন এবং আয়রন সাপ্লিমেন্ট দিতে হবে। গর্ভে আট মাস সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই যে সব শিশু জন্মগ্রহণ করে তাদেরকে প্রি-ম্যাচিউর বেবি বলে। এই সব শিশুদের জন্মের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই বুকের দুধের পাশাপাশি আয়রন সাপ্লিমেন্ট দেয়া যায়। এই সাপ্লিমেন্ট এক বছর বয়স পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দিতে হবে।

শিশুর ছয় মাস বয়স থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে তা যেন অবশ্যই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার হয়। শিশুর রোজকার খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার যেন থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ ভিটামিন সি দেহে আয়রন শোষণ করতে সাহায্য করে। এছাড়া শিশুকে কৃমিমুক্ত রাখতে ২ বছর বয়সের পর শিশুকে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।

শিশুর শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণে যত খাবার

মাংস ও পোল্ট্রি জাতীয় খাবার

এ ধরনের খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। শিশুর আয়রন ঘাটতি পূরণে এ খাবারগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এ জাতীয় খাবার রান্নার পূর্বে অবশ্যই সমস্ত চর্বিযুক্ত অংশ সরিয়ে ফেলতে হবে। খুব ভালোভাবে রান্না করতে হবে যেন শিশু সহজে হজম করতে পারে।

ডিমের কুসুম

ডিমের কুসুম একটি উচ্চ মাত্রার আয়রন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। এছাড়াও এতে রয়েছে আরো অনেক পুষ্টি উপাদান। শিশু এমনিতে কুসুম খেতে না চাইলে কাস্টার্ড বা পুডিং বানিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।

আয়রনের ঘাটতি পূরণে খাবার

লাল চালের ভাত

শিশুকে লাল চালের ভাত খাওয়ানো যেতে পারে। লাল চালে শুধু আয়রন নয়, পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন বি থাকে।

মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলু আয়রনের ভালো উৎস। আলু সিদ্ধ করে হাতে চটকিয়ে শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে।

সি ফুড বা বিভিন্ন রকম সামুদ্রিক মাছ

আয়রন ঘাটতি পূরণে এ খাবারগুলোও শিশুর জন্য সহায়ক। তবে অনেক শিশুরই সামুদ্রিক মাছে এলার্জি থাকতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

বাদাম ও শস্যবীজ

বিভিন্ন রকম বাদাম, শুকনো বীজ যেমন মিষ্টি কুমড়োর বীজ, সূর্যমূখীর বীজ, তিল ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে।

সবুজ শাক সবজি

বিভিন্ন রকম সবুজ শাক সবজি বিশেষ করে পালং শাক, ব্রকলি ইত্যাদি আয়রনে ভরপুর। সাথে খাদ্য তালিকায় টমেটোও রাখা যায়। টমেটো সালাদের পাশাপাশি ঘরে স্যুপ বা সস বানিয়েও শিশুকে দেওয়া যায়।

শিশুর জন্মের পর থেকেই সে সঠিক পরিমাণে আয়রন পাচ্ছে কিনা সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বয়স বাড়ার সাথে সাথে আয়রন পাবে এমন খাবারে শিশুকে অভ্যস্ত করা উচিত।

 

ছবিঃ সাটারস্টক

12 I like it
2 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort