মেকআপ জগতে ব্রোঞ্জার ও কনট্যুর বেশ পরিচিত দুটি নাম। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা শুধু নাম জানলেও এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তেমন কিছু জানেন না। ফলে প্রোডাক্ট সিলেকশনে ভুল হয়ে যায়। আবার অনেকে ভাবেন দুটোর কাজ বোধহয় একই। অথচ এ দুইয়ের মাঝে আছে বেশ কিছু পার্থক্য। আজকের আর্টিকেলে আমরা ব্রোঞ্জিং vs কনট্যুরিং সম্পর্কে জানবো।
ব্রোঞ্জিং vs কনট্যুরিং
ফেইসের ট্যান ভাবটাকে এনহ্যান্স করার জন্য ব্রোঞ্জিং করা হয়। ব্রোঞ্জিং এর মাধ্যমে একটি সানকিসড লুক পাওয়া যায়। ব্রোঞ্জিং করলে আমাদের ফেইসে একটি ন্যাচারাল ওয়ার্ম ভাব আসে এবং লুক হয়ে ওঠে হেলদি ও গ্লোয়ি। যারা একটু ওয়ার্ম আন্ডারটোন পছন্দ করেন তারা এটি করতে পারেন। ব্রোঞ্জার সাধারণত স্কিনটোনের চেয়ে দুই শেইড ডার্ক চুজ করতে হয়। স্কিন টাইপের উপর ব্রোঞ্জারের তেমন কোনো প্রভাব নেই। তবে স্কিন যদি নরমাল/অয়েলি হয়, সেক্ষেত্রে পাউডার ব্রোঞ্জার ব্যবহার করুন। আর স্কিন ড্রাই হলে ক্রিম বেইজড ব্রোঞ্জার চুজ করতে পারেন।
ফাউন্ডেশন দেয়ার পর স্কিন দেখতে একদম ফ্ল্যাট লাগে। এ সময় ফেইসে কোনো শেইপও থাকে না। আমাদের ফেইসের ন্যাচারাল শ্যাডো ঢেকে যায় ফাউন্ডেশন দেয়ার পর। কনট্যুরিং ফেইস ফিচারকে শার্প করে। একেক ধরনের ফেইস শেইপের জন্য একেক ধরনের কনট্যুরিং করতে হয়। আমরা আমাদের ফেইসের যে এরিয়া হাইড বা শার্প করতে চাই, যদি ডাবল চিন ঢাকতে চাই, তার সবই করতে পারি এর মাধ্যমে।
ফেইসের কোথায় কোন প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই করতে হয়?
ব্রোঞ্জার অ্যাপ্লাই করতে হয়-
- ফোরহেডে
- চিকবোনে
- জ লাইনে
- গলার দু পাশে যেখানে সূর্যের আলো পড়ে
- কলার বোন বা বিউটি বোনে
কনট্যুর অ্যাপ্লাই করতে হয়-
- চিকবোনের ঠিক নিচে
- কপালের একদম উপরে (হেয়ার লাইনের কাছে)
- জ লাইনের নিচে
- নাকের দুই সাইডে
ফেইসে একটি থ্রি বা ই শেইপ ক্রিয়েট করে নিলে প্লেসগুলো বোঝা সহজ হবে।
কোনটির ব্যবহার কখন?
ব্রোঞ্জিং
পাউডার ব্রোঞ্জিং করার জন্য ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাইয়ের পর লুজ পাউডার দিয়ে সেট করে নেয়া ভালো। এতে ব্রোঞ্জিং এর ফিনিশিং ভালো আসবে।
কনট্যুরিং
কনট্যুরিং করতে হয় বেইজ মেকআপ কমপ্লিট করার পর। অর্থাৎ ফেইসের ফিচার শার্প করার জন্য ফাউন্ডেশনের পর কনট্যুরিং করতে হবে। সাধারণত চিকবোনের ঠিক নিচে, কপালের একদম উপরে (হেয়ার লাইনের কাছে), জ লাইন, নাকের দুই সাইডে কনট্যুরিং করতে হয়। কনট্যুরিং এর ক্ষেত্রে ক্রিম বা পাউডার দুটোই ব্যবহার করা যায়।
যে তিনটি বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি-
১) ফোরহেডে ব্লেন্ডিং এর সময় ব্রাশ হেয়ার লাইনের দিকে ব্লেন্ড করতে হবে। নিচের দিকে নামা যাবে না।
২) জ লাইনে ব্লেন্ড করতে হবে গলার নিচের দিকে।
৩) নোজ এরিয়া ব্লেন্ড করার সময় একটি চিকন ব্রাশ ইউজ করতে হবে।
ইনিশিয়াল ব্লেন্ডিং কমপ্লিট হলে ভালোভাবে খেয়াল করুন ফেইসে কোনো হার্শ লাইন আছে কিনা অথবা কোথাও কোনো প্রোডাক্ট লেগে আছে কিনা। এমন কিছু থাকলে আবার ব্লেন্ডিং করে নিন।
ব্রাশের ব্যবহার
১) যে কোনো ধরনের ব্রাশ দিয়েই ব্রোঞ্জার ব্লেন্ড করা যায় না। স্কাল্পটিং ব্রাশ দিয়ে ব্রোঞ্জার ব্লেন্ড করতে হয়।
২) কনট্যুরিং করার জন্য অ্যাঙ্গেলড কনট্যুর ব্রাশ পাওয়া যায়। সেটি দিয়েই ব্লেন্ড করতে হয়।
ফর্মুলা
ব্রোঞ্জার ও কনট্যুর দুটোই স্কিন থেকে ডার্ক শেইডের হয়। গ্লিটার থাকার কারণে ব্রোঞ্জার সাধারণত হালকা শাইনিভাব ক্রিয়েট করে। ব্রোঞ্জারের পাউডার ফর্ম বেশি জনপ্রিয়। তবে কিছু কিছু ব্র্যান্ডের ক্রিমি ফর্মুলার ব্রোঞ্জারও পাওয়া যায়। কনট্যুর সাধারণত ম্যাট ফিনিশের হয়। কনট্যুরিং এ অবশ্য ক্রিমি ফর্মুলা বেশি জনপ্রিয়।
ব্রোঞ্জারের পরিবর্তে কনট্যুর বা কনট্যুরের পরিবর্তে ব্রোঞ্জার কি ব্যবহার করা যাবে?
প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেয়া কিছুটা কঠিন। সাধারণত দুটো প্রোডাক্ট আলাদা আলাদাভাবে ইউজ করতে হয়। তারপরও খুব ওয়ার্ম টোনের এবং খুব বেশি শাইনি ব্রোঞ্জার না হলে সেটা কনট্যুর হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে ওয়ার্ম টোনের কনট্যুরও কখনো কখনো ব্রোঞ্জারের বিকল্প হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে খুব অল্প পরিমাণ প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে।
মেকআপ ট্রেন্ডে ব্রোঞ্জিং ও কনট্যুরিং
মেকআপের দুটো গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ ব্রোঞ্জিং ও কনট্যুরিং। তবে ২০১৬ সাল থেকে ব্রোঞ্জিং এর চেয়ে কনট্যুরিং বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই ট্রেন্ডে কিছুটা বদল আবার দেখা গিয়েছে ২০২২ সাল থেকে। এ সময় কনট্যুরিং এর চেয়ে ব্রোঞ্জিং এর ট্রেন্ড বেশি দেখা গিয়েছে। ব্রোঞ্জিং এর মাধ্যমে ট্রেন্ডি সফট ডিউয়ি গ্লোয়ি লুক খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। তবু কনট্যুরিং এর ট্রেন্ড যে কমে গিয়েছে তা কিন্তু নয়। বর্তমানে কম প্রোডাক্ট ইউজ করে সফট ও ন্যাচারাল লুকটাই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে।
ব্রোঞ্জিং vs. কনট্যুরিং নিয়ে বেসিক ইনফরমেশন তো জানা হলো। আশা করছি, এ দুইয়ের মধ্যে কনফিউশন কিছুটা হলেও ক্লিয়ার হয়েছে। অথেনটিক মেকআপ প্রোডাক্ট, স্কিন ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট পাওয়া যাবে সাজগোজে। সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক