ছোট্ট শিশু। তাকে ঘিরে আমাদের কত ভালো লাগা, কত প্রত্যাশা, কত দুশ্চিন্তা! শিশুর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত তার জন্য মায়ের দুধই যথেষ্ট, বাড়তি এক ফোঁটা পানির ও প্রয়োজন নেই, একথা তো আমরা সবাই জানি। ছয় মাস বয়সের পর থেকে শিশুর প্রথম শক্ত খাবার দেওয়া শুরু করতে হবে। শিশুর জীবনের প্রথম বছরের অন্যতম মাইলস্টোন হলো সলিড খাবার শুরু করা।
শিশুর প্রথম শক্ত খাবার এর জন্য সে প্রস্তুত কি?
যদি শিশু সাপোর্ট ছাড়া বসতে পারে, ঘাড় পুরোপুরি সোজা রাখতে পারে, বড়দের খেতে দেখলে খাওয়ার জন্য হা করে আগ্রহ প্রকাশ করে, তাহলেই বুঝতে হবে বাচ্চা সলিড খাওয়া শুরু করার জন্য প্রস্তুত। খাওয়াতে হবে অবশ্যই বসিয়ে। অনেকেই শিশুকে শুইয়ে খাওয়াতে চান যেটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এতে choking hazard, সহজ বাংলায় খাবার গলায় বেঁধে যাওয়ার ভয় থাকে। যারা নতুন এবং প্রথমবার মা হয়েছেন তারা এসময় খুব দুশ্চিন্তায় থাকেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় অনেক বেশি দুশ্চিন্তায় বাচ্চা না খেলে বা কম খেলে হতাশ হয়ে বাচ্চাকেই বকেন। অনেকে শর্টকাট খুঁজে বাচ্চাকে ব্লেন্ড করে স্পুন ফিডারে খাবার দিয়ে দেন। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এর প্রতিক্রিয়া কিন্তু খুব প্রীতিকর না।
নিজের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা আর সীমিত জ্ঞান থেকে বলছি, বাচ্চাকে খাওয়া নিয়ে বকা শুরু করলে বাচ্চা অনাগ্রহে পরে মুখ খোলাই বন্ধ করে দেয় এবং ফিডারে নয়, খাওয়াতে হবে পরিষ্কার বাটি চামচে, আর ধৈর্য সহকারে।
প্রথম সলিড দেয়া যায় এমন কিছু সহজ খাবারের রেসিপি দিচ্ছি।
খিচুড়ি
প্রথম সলিড হিসেবে একটি আদর্শ খাবার হতে পারে খিচুড়ি। খুবই সাধারন একটি খাবার হলেও এর পুষ্টিগুণ অনেক, বাচ্চার প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাটস সব থাকে খিচুড়িতে।
উপকরণ
- পোলাও/বাসমতী /সাধারণ ভাতের চাল – ১ কাপ
- মসুর/মুগ ডাল – ১ কাপ
- ১ টেবিল চামচ ভোজ্য তেল
- লবণ (স্বাদ অনুযায়ী), যদি আপনি NO SUGAR NO SALT TILL 1 YEAR ফর্মুলা মানতে চান তাহলে লবণ দিবেন না।
- ছোট করে টুকরো করা সবজি (গাজর, আলু, মিষ্টিকুমড়া, পেঁপে, লাউ যা হাতের কাছে থাকে)
- মাছ/মাংস (যেটা হাতের কাছে থাকে)
- হলুদ, জিরা, ধনিয়া গুড়া (১/৩ চা চামচ করে)
- ১টা ছোট পেঁয়াজ কুঁচি,
- ৩-৪ কোয়া রসুন,
- এলাচ (ঐচ্ছিক)
রান্নার প্রণালি
মাছ/মাংস অল্প পানিতে ঢেকে সিদ্ধ করে কাঁটা/হাড় ছাড়িয়ে নিন। হাঁড়িতে তেল গরম করে তাতে এলাচ,পেঁয়াজ আর রসুনকুচি হালকা লালচে করে ভেজে নিন, তারপর ধোয়া চাল-ডাল অল্প আঁচে ভেজে তাতে সবজিগুলো আর মাছ/মাংস দিয়ে হলুদ, ধনিয়া, জিরা গুঁড়ো আর লবণ দিয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ গরম পানি দিয়ে ঢেকে রান্না করুন। প্রেশারকুকারে রান্না করলে আরো ভালো, তাতে সময় বাঁচে আর ঢাকা অবস্থায় রান্না হয় বলে পুষ্টিগুণও বজায় থাকে। নামানোর আগে গন্ধের জন্য আস্ত একটা কাঁচামরিচ আর ২ ফোঁটা ঘি দিতে পারেন (ঐচ্ছিক)। ডাল ঘুঁটনি দিয়ে ঘুঁটে নিন।
পরিজ
পরিজ (Porridge) একটি সহজপাচ্য স্বাস্থ্যকর খাবার। বানানো ও একদম সহজ। দুধ জ্বাল দিয়ে তাতে ওটস মিশিয়ে মিনিট তিনেক নাড়বেন, নামিয়ে চটকানো কলার সাথে মিশিয়ে খাওয়াবেন।
ফ্রুট/ভেজিটেবল পিউরি
আপেল, নাশপাতি, মিষ্টি আলু, গাজর, কলা, মিষ্টিকুমড়া, পাকা পেঁপে জাতীয় ফল/সবজি টুকরো করে কেটে অল্প পানিতে ঢেকে সিদ্ধ করে তারপর ভালো করে ডাল ঘুঁটনি দিয়ে ঘুঁটে ম্যাশ করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে ফ্রুট/ভেজিটেবল পিউরি। বানানো সহজ আর অনেক পুষ্টিকর খাবার।
পুডিং
উপকরন
- ১টা ডিমের সাদা অংশ (কুসুমসহ পুরো ডিম সাধারণত ১০ মাস-১ বছরের পর দেয়াই ভালো)
- ১ কাপ দুধ (পানি মিশিয়ে পাতলা করা)
- চিনি, লবণ (ঐচ্ছিক)
- ২ ফোঁটা ভ্যানিলা এসেন্স (ঐচ্ছিক)
- ঘি/মাখন/তেল
রান্নার প্রণালি
একটি পাত্রে সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে খুব ভালো করে ফেটিয়ে নিন। চুলার আঁচ কমিয়ে একটি প্যানে ১/৩ চা চামচ ঘি/বাটার/তেল ঢেলে তাতে দুধ ডিমের মিশ্রণ ঢেলে দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে থাকুন, এক-দেড় মিনিটের ভিতর মিশ্রণটি থকথকে হয়ে গেলেই নামিয়ে ফেলুন। একটু ঠাণ্ডা হলে খাওয়ান। বাচ্চা আরেকটু বড় হলে বড়দের মত ভাপে জমিয়ে ক্যারামেল করা পাত্রে পুডিং বানাতে পারেন, অথবা মাইক্রোওয়েভেও চটজলদি দুই মিনিটেই পুডিং তৈরি হয়ে যায়।
হোমমেইড সিরিয়াল
উপকরণ
- ৩০০ গ্রাম পোলাও এর চাল
- ৩০০০ গ্রাম নাজিরশাইল চাল
- ভুট্টা ১০০ গ্রাম
- গম ১০০ গ্রাম
- মুগ ডাল ১০০ গ্রাম
- মসুর ডাল ১০০ গ্রাম
- বুটের ডাল ১০০ গ্রাম
- কাঠবাদাম ৫০ গ্রাম
- পেস্তাবাদাম ৫০ গ্রাম
- আখরোট ৫০ গ্রাম
প্রস্তুত প্রণালি
সব উপকরণ ভালোভাবে ধুয়ে পারলে রোদে শুকিয়ে মেশিনে ভাংগিয়ে চুলায় অল্প আঁচে হালকা করে টেলে ঠাণ্ডা হলে এয়ারটাইট কনটেইনারে সংরক্ষণ করতে হবে। শিশুকে দুধ দিয়ে রান্না করে খাওয়ানো যাবে। দুধ ফুটলে তাতে পরিমাণ মত সিরিয়াল ঢেলে দিয়ে ৫-৬ মিনিট রান্না করতে হবে, রান্নার সময় মিশ্রণ ক্রমাগত নাড়তে হবে। এটাও শিশুর জন্য খুব পুষ্টিকর একটি খাবার।
তাছাড়াও বড়দের সব খাবার ও অল্প অল্প করে শিশুকে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। সে যতটুকু নিজ আগ্রহে খায় ততটুকুই খাওয়ান।
সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
ছবিঃ সংগৃহীত – সাটারস্টক