স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ফাস্ট ফুড কেন এড়িয়ে চলা প্রয়োজন?

স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ফাস্ট ফুড কেন এড়িয়ে চলা প্রয়োজন?

1 (4)

বন্ধুদের সাথে আড্ডা হোক অথবা কাছের মানুষদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া- পছন্দের রেস্টুরেন্টে যেয়ে ফাস্ট ফুড অর্ডার দিয়ে খাবার খেয়ে সময় কাটানোতেই এখন সবাই আনন্দ পায়। আর এই তালিকায় শুরুতেই থাকে বার্গার, হট ডগ, স্যান্ডউইচ, পরোটা, পিৎজা, চিকেন গ্রিল, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই, সফট ড্রিংকস, শিঙাড়া, সমুচা, চকলেট ইত্যাদি। এই খাবারগুলো ছোট বড় সবারই পছন্দের তালিকায় প্রথম স্থান দখল করে আছে। কিন্তু খাবারগুলো যতটা মজাদার, ঠিক ততটাই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অনেকের ক্ষেত্রেই এই খাবারগুলো খাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। আর এই প্রবণতা থেকেই শরীরের উপর পড়ে নানা নেতিবাচক প্রভাব, বাড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এই স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ফাস্ট ফুড কেন এড়িয়ে চলা প্রয়োজন জানাবো আজকের আর্টিকেলে।

ফাস্ট ফুড কী?  

ফাস্ট ফুড (Fast Food) অর্থ যে খাবারগুলো দ্রুত তৈরি করা যায়। সাধারণত বাড়ির অন্যান্য খাবারের তুলনায় এ ধরনের খাবারগুলো তৈরি করতে সময় কম লাগে। রেস্টুরেন্ট, হোটেল বা ক্যাফেতে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয়ের জন্য ফাস্ট ফুড বানানো হয়। বর্তমানে ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার করলেই খাবার চলে আসে হাতে। এখন আমাদের সবাইকেই সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে হয়। আর আধুনিক এই জীবনযাপনে দ্রুত, সহজ, সস্তা ও মুখরোচক হওয়ায় ফাস্ট ফুডও বেশ শক্তভাবেই শিকড় গেড়ে নিয়েছে। তবে ফাস্ট খাবারে ফাস্ট অর্থাৎ দ্রুত ক্ষুধা মিটলেও অতিরিক্ত তেল দিয়ে বানানো এ ধরনের খাবারগুলো মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়।

ফাস্ট ফুড খাওয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকি

এ ধরনের খাবারে কেন আসক্তি তৈরি হয়?

জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুড তৈরিতে ব্যবহার করা হয় প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট, চিনি, লবণ ও আজিনোমোটো (মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট) নামে এক ধরনের উপাদান। এই উপাদানগুলোর কারণে খাওয়ার পর আমাদের মস্তিষ্ক ফাস্ট ফুডে আসক্ত হয়ে পড়ে। অতি মাত্রায় ফাস্ট ফুড খেলে ডোপামিন হরমোন (শরীরে তৃপ্তি সৃষ্টিকারী হরমোন) নির্গত হয়। যার কারণে বারবার এ ধরনের খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে।

ফাস্ট ফুডে কী কী স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে?

এ ধরনের খাবারগুলো বেশি সুস্বাদু হওয়ার কারণ হচ্ছে এসব খাবারে প্রচুর সুগার ও ফ্যাট (শর্করা ও চর্বি) থাকে। সবচেয়ে কম থাকে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি (যেমন- ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবার)। অল্প সময়ে হাতে পৌঁছায় বলে মুখরোচক এসব খাবারের চাহিদা বেশি থাকে। নিয়মিত ফাস্ট ফুড খেলে যে ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে-

  • ফাস্ট ফুডে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন হতে পারে
  • ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়
  • বিষণ্ণতার ঝুঁকি বাড়ায়
  • দাঁতের ফাঁকে এসব খাবার আটকে থেকে ক্যাভিটির সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে
  • এসব খাবারে থাকা ফ্যাট এলডিএল কোলেস্টেরলের (ব্যাড কোলেস্টেরল) মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে
  • এ ধরনের খাবারে থাকা উচ্চ মাত্রার লবণ, টেস্টিং সল্ট ও কৃত্রিম রঙ উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
  • ওজন বেড়ে যায়, সেই সাথে বাড়ে ওবেসিটির সম্ভাবনাও
  • হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
  • ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়
  • ফাস্ট ফুডে থাকা ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান শরীরে প্রবেশ করায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কিডনিও

ওজন বৃদ্ধি

নিয়মিত ফাস্ট ফুড খাওয়ায় কত ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে তার কিছুটা আমরা জানলাম। আমরা যতটুকু ধারণা করি, এই খাবার নিয়মিত খাওয়ার ফল আসলে তার চেয়েও ভয়াবহ। শুধু বড়রা নয়, ছোটদের জন্যও সমানভাবে এই খাবারগুলো ক্ষতিকর। আমরা সময় বাঁচাতে শিশুদের হাতে এ খাবারগুলো তুলে দিচ্ছি। সত্যি বলতে সময় কিছুটা বাঁচলেও আদতে আমরা আসলে তাদের বেশ ক্ষতিই করছি। উপরে আলোচিত বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ফাস্ট ফুড যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ফাস্ট ফুড কীভাবে এড়িয়ে চলবেন?

আমাদের বিজি লাইফে ইজি সল্যুশন হওয়ায় দিন দিন ফাস্ট ফুডের চাহিদা বাড়ছে। তবে এর লাগাম টেনে না ধরলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে অসুস্থতা আরও বেশি জেঁকে ধরবে। তাই যতটা সম্ভব এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কীভাবে ফাস্ট ফুড এড়িয়ে হেলদি খাবার খাওয়া যায় সে বিষয়ে আপনাদের কিছু পরামর্শ দিচ্ছি-

১) বাইরে যাওয়ার আগে ব্যাগে অথবা বাড়িতে থাকলে ফ্রিজে কিছু ফল, টক দই বা বাদাম রাখতে পারেন। এতে ঘরে থাকলে বা বাইরে যাওয়ার পর ক্ষুধা লাগলে দোকান থেকে স্ন্যাকস বা ফাস্ট ফুড না কিনে এগুলোই খেতে পারেন। এতে ক্ষুধাও মিটবে, শরীর পুষ্টিও পাবে।

২) ব্যাগে সব সময় এক বোতল পানি ক্যারি করুন। এতে পিপাসা মেটাতে সফট বা এনার্জি ড্রিংকস কিনে খেতে হবে না।

৩) খাবার তালিকায় মুরগীর মাংস, ডিম, মাছ, চিজ, টক দই ও দুধের মতো প্রোটিন রাখার চেষ্টা করুন। এতে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকবে।

স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে খাদ্য তালিকায় প্রোটিন রাখুন

৪) সকালের খাবারে যেন ফাইবার যুক্ত থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। এ ধরনের খাবারে পেট দীর্ঘ সময় ভরা থাকে। এতে ফাস্ট ফুড খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে।

৫) টিভি বা কম্পিউটারের সামনে বসে অথবা ফোনে কথা বলার সময় স্ন্যাকস খাওয়ার অভ্যাস কমিয়ে আনুন।

৬) শিশুদের স্কুলের টিফিনে ঘরে বানানো নাস্তা দিন।

ফাস্ট ফুডের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে কমবেশি আমরা জানলেও মেনে চলি খুব কম। ভাবি, একদিন খেলে কিছুই হবে না। এই ভাবনাটাই ধীরে ধীরে প্রতিদিনের তালিকায় যুক্ত হয়ে যায়। এক সময় এই ফাস্ট ফুড খাওয়ার নেশা থেকে বের হওয়া যায় না। সেই সাথে শরীরে বাসা বাঁধতে থাকে নানা ধরনের অসুখ। তাই সময় থাকতে সচেতন হওয়া খুবই জরুরি। ফাস্ট ফুড যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন, সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

SHOP AT SHAJGOJ

     

    ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক

    5 I like it
    2 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort