মেকআপের মাস্ট হ্যাভ প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে ফাউন্ডেশন অন্যতম। স্কিনটোন ইভেন আউট করে ফ্ললেস ও লং লাস্টিং মেকআপ লুক ক্রিয়েট করতে এই প্রোডাক্টটি ছাড়া চলেই না! তবে নিজের জন্য পারফেক্ট ফাউন্ডেশন সিলেক্ট করতে গেলে অনেকেই কনফিউজড হয়ে যান। একে তো মার্কেটে ফাউন্ডেশনের এত ভ্যারাইটি, তারপর দেখা যায় কখনো হয়তো ফাউন্ডেশনের শেইড স্কিনটোনের সাথে ম্যাচ করে না, আবার কখনো স্কিনটোনের সাথে ম্যাচ করলেও ফাউন্ডেশনের ফর্মুলা স্কিন টাইপের সাথে স্যুট করে না।
তবে চিন্তা নেই! আপনাদের সব কনফিউশন দূর করতে আজকের ফিচারে জানাবো কীভাবে আপনারা খুব সহজে নিজের জন্য পারফেক্ট ফাউন্ডেশন চুজ করতে পারেন সে সম্পর্কে।
বেস্ট কোয়ালিটির ফাউন্ডেশন কীভাবে চিনবেন?
এখন মার্কেটে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ডিফারেন্ট প্রাইস রেঞ্জের ফাউন্ডেশন অ্যাভেইলেবল রয়েছে। সাধারণত হাই কোয়ালিটির ফাউন্ডেশনগুলোর কিছু কমন ফিচারস থাকে, যেগুলো হলো-
- ইজিলি ব্লেন্ড হয়ে যায়
- প্রোপার কভারেজ দেয়
- ফ্ললেস ফিনিশিং দেয়
- লং লাস্টিং হয়
নিজের জন্য পারফেক্ট ফাউন্ডেশন সিলেকশন
অনেকেই মনে করেন ফাউন্ডেশন কেনার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র স্কিনটোনই ম্যাটার করে। হ্যাঁ, নিজের জন্য সঠিক ফাউন্ডেশন চুজ করার ক্ষেত্রে স্কিনটোনের সাথে ম্যাচ করে কেনা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে এর পাশাপাশি আরো কিছু বিষয় আপনাদের কনসিডার করতে হবে। সেগুলো হলো-
১) স্কিন টাইপ ও স্কিন কনসার্ন
যেকোনো ফাউন্ডেশন কেনার আগে নিজের স্কিন টাইপ ও স্কিন কনসার্নগুলো সম্পর্কে ক্লিয়ার আইডিয়া রাখার ট্রাই করুন। কারণ একেক ধরনের স্কিন টাইপ ও স্কিন কনসার্নের জন্য ফাউন্ডেশনের ফর্মুলা ডিফারেন্ট হয়ে থাকে। তাই আপনি যদি এগুলো না জেনে র্যান্ডম কোনো ফাউন্ডেশন পারচেজ করেন, তাহলে সেটি আপনার স্কিনে স্যুট নাও করতে পারে। তাই অবশ্যই আগে নিজের স্কিন টাইপ জানুন এবং কোনো স্কিন কনসার্ন, যেমন: একনে, পিগমেন্টেশন, ফাইন লাইনস আছে কিনা তা দেখে নিন।
২) ফাউন্ডেশনের ফর্মুলা ও কনসিসটেন্সি
যদি নিজের জন্য বেস্ট ফাউন্ডেশনটি বেছে নিতে চান, তাহলে ফাউন্ডেশনের ফর্মুলা ও কনসিসটেন্সি সম্পর্কে নলেজ থাকা কিন্তু মাস্ট! স্কিন টাইপের উপর ভিত্তি করে চার ধরনের ফর্মুলার ফাউন্ডেশন পাওয়া যায়।
লিকুইড ফাউন্ডেশন
লিকুইড ফাউন্ডেশন ওয়াটার বেইজড হওয়ার কারণে এটির কনসিসটেন্সি বেশ থিন বা পাতলা হয়ে থাকে। এটি খুবই লাইটওয়েট হওয়ায় স্কিনে একদমই হেভি ফিল হয় না। তাছাড়া এটি খুব দ্রুত স্কিনে ব্লেন্ড হয়ে যায়। লিকুইড ফাউন্ডেশনের ফর্মুলা অয়েল ফ্রি হওয়ার কারণে এটি সাধারণত পোরস ক্লগ করে না। তাই যদি আপনার স্কিন টাইপ অয়েলি, সেনসিটিভ কিংবা একনে প্রন হয়, তাহলে নিশ্চিন্তে এটি বেছে নিতে পারেন।
ক্রিম ফাউন্ডেশন
ক্রিম ফাউন্ডেশনকে অয়েল বেইজড ফাউন্ডেশন বলা হয়। এটির কনসিসটেন্সি কিছুটা হেভি ও টেক্সচার ক্রিমি হয়ে থাকে। ক্রিম ফাউন্ডেশনে ময়েশ্চারাইজিং প্রোপার্টিজ থাকে বলে এটি অ্যাপ্লাই করলে স্কিনে ড্রাইনেস ফিল হয় না। তাছাড়া স্কিনে আলাদা গ্লোও দেখা যায়, মানে ফিনিশিং ডিউয়ি হয়। তাই ড্রাই স্কিনের অধিকারীদের জন্য ক্রিম ফাউন্ডেশন একদম পারফেক্ট। তাছাড়া অনেকেই কমপ্লেইন করেন ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাইয়ের পর আন্ডার আই বা ঠোঁটের দু’পাশের এরিয়া ড্রাই হয়ে ফাউন্ডেশন ক্র্যাক করে। তাদের জন্যেও ক্রিম ফাউন্ডেশন হতে পারে বেস্ট অপশন।
সিলিকন বেইজড ফাউন্ডেশন
সিলিকন বেইজড ফাউন্ডেশনের ফর্মুলা লিকুইড ও ক্রিম ফাউন্ডেশনের মাঝামাঝি হয়ে থাকে। সাধারণত এই ফাউন্ডেশনের কনসিসটেন্সি লিকুইড ফাউন্ডেশনের মতো হয় এবং ব্লেন্ড করার পর এটি ভেলভেটি ফিনিশ দেয়ার পাশাপাশি স্কিন হাইড্রেটেডও রাখে। তাছাড়া এটি স্কিনে ম্যাটিফাইং ইফেক্টও দিয়ে থাকে। যদি আপনার স্কিন টাইপ নরমাল টু কম্বিনেশন হয়ে থাকে, তাহলে এই ফাউন্ডেশন বেছে নিতে পারেন। এছাড়াও অয়েলি স্কিনেও ব্যবহার করা যায়।
পাউডার ফাউন্ডেশন
এখন প্রেসড বা লুজ পাউডার ফর্মে ফাউন্ডেশন পাওয়া যায়। এই ফাউন্ডেশন পিগমেন্ট ও মিনারেলের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। পাউডারি কনসিসটেন্সির এই ফাউন্ডেশনে অয়েল অ্যাবজর্বিং প্রোপার্টিজ থাকায় এবং এটি পোরস ক্লগ করে না বলে অয়েলি বা একনে প্রন স্কিনে এটি খুব ভালো স্যুট করে।
৩) আন্ডারটোন
সাধারণত ফাউন্ডেশনের শেইডগুলো ওয়ার্ম, কুল ও নিউট্রাল আন্ডারটোনের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। তাই যদি নিজের সঠিক আন্ডারটোন না জানেন, তাহলে কখনোই ফাউন্ডেশনের সঠিক শেইড খুঁজে পাবেন না!
এখন আন্ডারটোন কীভাবে বুঝবেন? খুব ইজি! প্রথমেই ন্যাচারাল লাইটে আপনার হাত রাখুন। এবার হাতের ভেইনের কালারের দিকে খেয়াল করুন।
- ভেইনের কালার যদি গ্রিন হয়, তাহলে আপনার আন্ডারটোন ওয়ার্ম
- যদি ভেইনের কালার ব্লু মনে হয়, তাহলে আপনি কুল আন্ডারটোনের অধিকারী
- ভেইনে ব্লু ও গ্রিন দু’টোয় ভিজিবল হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে আপনার আন্ডারটোন নিউট্রাল
৪) ফাউন্ডেশন শেইড
যখন ফাউন্ডেশন পারচেজ করবেন, তখন অবশ্যই নিজের স্কিনটোনের সাথে সবচেয়ে কাছাকাছি যে শেইডটি ম্যাচ করবে, সেটিই পারচেজ করুন। তা না হলে বেইজ মেকআপ তো ফ্ললেস হবেই না, বরং দেখতে আরো আনন্যাচারাল লাগবে!
তবে হ্যাঁ, অনেকসময় দেখা যায়, ফাউন্ডেশনে থাকা বিভিন্ন ইনগ্রেডিয়েন্টের কেমিক্যাল রিঅ্যাকশনের কারণে অক্সিডাইজেশন হয়। তখন মেকআপে অরেঞ্জিশ বা অ্যাশিটোন চোখে পড়ে। এক্ষেত্রে সাজেস্ট করবো এক শেইড লাইট ফাউন্ডেশন বেছে নিতে। এতে অক্সিডাইজ করার পরেও স্কিনটোন ন্যাচারাল থাকবে, অর্থাৎ অনেকটা ব্যালেন্স হবে।
এবার সঠিক ফাউন্ডেশন শেইড খুঁজে পাওয়ার একটি সিম্পল ট্রিক শেয়ার করি। যখন আপনারা ফাউন্ডেশন সোয়াচ করবেন, তখন সরাসরি গালে বা চিন এরিয়াতে সোয়াচ করুন। অনেকেই হয়তো সাজেস্ট করবে গলায় সোয়াচ করতে, কিন্তু এই কাজটি কখনোই করবেন না।
৫) ফাউন্ডেশনের কভারেজ
সঠিক ফাউন্ডেশন বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশনের কভারেজ খুবই ইম্পরট্যান্ট রোল প্লে করে। ফাউন্ডেশনের মূল কাজ হলো যেকোনো স্পট বা পিগমেন্টেশন কভার করে স্কিনটোন ইভেন আউট করা। সাধারণত ফাউন্ডেশনের কভারেজ তিন ধরনের হয়ে থাকে। যেগুলো হলো লাইট, মিডিয়াম ও ফুল কভারেজ।
ফাউন্ডেশনের কভারেজের ক্ষেত্রে আপনি কোন পারপাসে ফাউন্ডেশন কিনতে চাইছেন তা শুরুতে ডিসাইড করুন এবং তারপর সে অনুযায়ী ফাউন্ডেশন সিলেক্ট করুন। যেমন: যদি রেগুলার ইউজের জন্য ফাউন্ডেশন পারচেজ করতে চান, সেক্ষেত্রে লাইট কভারেজের ফাউন্ডেশন বেছে নিতে পারেন। আর যদি কোনো ইভেন্টে বা পার্টিতে গ্ল্যাম মেকআপ লুক ক্রিয়েট করতে চান, সেক্ষেত্রে মিডিয়াম বা ফুল কভারেজ ফাউন্ডেশন সিলেক্ট করুন।
আশা করি এখন থেকে নিজের জন্য সঠিক শেইড, ফর্মুলা ও কভারেজের ফাউন্ডেশন চুজ করতে আপনাদের আর স্ট্রাগল করতে হবে না। যদি ফাউন্ডেশন পারফেক্ট হয় আর অ্যাপ্লিকেশন টেকনিক ঠিক থাকে, তাহলে আপনার মেকআপ ফ্ললেস হবে। তাই চেষ্টা করবেন একটু রিসার্চ করে ফাউন্ডেশন পারচেজ করার।
ফাউন্ডেশনসহ অন্যান্য মেকআপ, স্কিন কেয়ার বা হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টের জন্য সাজগোজ সবসময়ই আমার মোস্ট ট্রাস্টেড শপিং প্লেস। তাই আপনারাও ভিজিট করুন সাজগোজের ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ফিজিক্যাল স্টোরে। সাজগোজের বেশ কয়েকটা ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। এ শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে ও চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টারে অবস্থিত। এই শপগুলোর পাশাপাশি চাইলে অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকেও কিনতে পারেন আপনার দরকারি বা পছন্দের সব প্রোডাক্ট।
ছবি- সাটারস্টক, সাজগোজ