ফুসফুসে ইনফেকশন | লক্ষণ ও ধরন জেনে সচেতন হচ্ছেন তো?

ফুসফুসে ইনফেকশন | লক্ষণ ও ধরন জেনে সচেতন হচ্ছেন তো?

coughing

বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীবের মাধ্যমে ফুসফুসের কোষগুলো আক্রান্ত হলে ফুসফুসে ইনফেকশন দেখা দেয়। এইসব অণুজীবের সাথে লড়াই করতে যেয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলো শ্বাসনালীতে প্রদাহের সৃষ্টি করে। যার ফলে ফুসফুসে ইনফেকশনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর। এটি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের কারণে হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ফুসফুসের সংক্রমণ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন অংশকে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নিউমোনিয়া ফুসফুসের বায়ু থলিকে প্রভাবিত করে, আবার ব্রঙ্কাইটিস বৃহত্তর শ্বাসনালী বা ব্রঙ্কাইকে প্রভাবিত করে। কিছু ক্ষেত্রে, একাধিক ধরনের জীবাণু ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। উদাহরণস্বরূপ, ভাইরাল ব্রঙ্কাইটিস থেকে ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফুসফুসের ইনফেকশন হালকা বা গুরুতর হতে পারে। যে কোনো বয়সী মানুষ এই সমস্যায় ভুগতে পারেন। সংক্রমণটি শ্বাসনালীর বিভিন্ন অংশে (যেমন- ব্রঙ্কাই, ব্রঙ্কিওল, অ্যালভিওলি) বা ফুসফুসের চারপাশের টিস্যুতে ঘটে। আজ আমরা ফুসফুসে ইনফেকশন সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানবো।

ফুসফুসের সংক্রমণের সাধারণ লক্ষণ

যেকোনো প্রকারের ফুসফুসের সংক্রমণ সে যে কারণেই হোক তা নির্দিষ্ট কিছু উপসর্গ সৃষ্টি করে।  এর কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে। যেমন-

ফুসফুসের ইনফেকশন এর সাধারণ লক্ষণ

১) কাশিঃ শুকনা বা কফ যুক্ত কাশি হতে পারে।

২) শ্লেষ্মা উৎপাদনঃ পরিষ্কার বা হলুদ, সবুজ, মরিচা রঙ এর দুর্গন্ধযুক্ত বা গন্ধহীন শ্লেষ্মা দেখা দিতে পারে।

৩) হুইজিংঃ সাধারণত শ্বাস প্রশ্বাস নেয়ার সময় শ্বাসকষ্ট হয়, শ্বাস ফেলার সময় বুকে ঘর ঘর শব্দও হতে দেখা যায়। শ্বাসের সাথে সাথে বাঁশির মত তীক্ষ্ণ এই শব্দকে হুইজিং বলে। শ্বাসনালী আংশিক বন্ধ থাকলে এরকম শব্দ হতে পারে। এই শব্দ আরো তীক্ষ্ণ হলে এবং শ্বাস নেয়ার সময় হলে তখন তাকে স্ট্রাইডর বলে। ফুসফুসের উপরের অংশে বা শ্বাসনালীতে ইনফেকশন হলে এই শব্দ পাওয়া যায়।

৪) জ্বরঃ হালকা থেকে উচ্চ মাত্রার জ্বর থাকতে পারে।

৫) ঠান্ডা ও কাঁপুনিঃ জ্বর বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ঠান্ডা ভাব থাকতে পারে বা ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়তে পারে।

৬) গলা ব্যথা ও মাথা ব্যথাঃ শ্বাসতন্ত্রের উপরের দিকে ইনফেকশন হলে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, গলা ব্যথা, গলা বসে যাওয়া, ল্যারিঞ্জাইটিস, মাথা ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এ ছাড়াও ফুসফুসের সংক্রমণের অন্যান্য সম্ভাব্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-

  • পেশি ব্যথা (মায়ালজিয়া)
  • জয়েন্টে ব্যথা (আর্থ্রালজিয়া)
  • ক্ষুধা মন্দা
  • ক্লান্তি
  • বমি বমি ভাব ও বমি
  • ডায়রিয়া
  • কাশির সাথে রক্ত পড়া, শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা, ঠোঁট-আঙুল-পায়ের নখে বেগুনী আভা দেখা যাওয়া, হাত পায়ের নখ উল্টানো চামচের মত ফুলে যাওয়া (ক্লাবিং) ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে

ফুসফুসের ইনফেকশন হলে বমি ভাব হতে পারে

চিকিৎসকের কাছে কখন যাবেন?

আপনার যদি ফুসফুসে ইনফেকশন হয়ে থাকে, তবে নির্দিষ্ট লক্ষণ ও উপসর্গগুলোর অর্থ হলো আপনার উন্নত চিকিৎসা ও যত্নের প্রয়োজন। যেমন-

  • উচ্চ মাত্রার জ্বর
  • দুই সপ্তাহের বেশি কাশি
  • কাশির সাথে রক্ত বের হওয়া, লালচে বা মরিচা রঙের থুতু বের হওয়া
  • বিশ্রামের সময়েও শ্বাসকষ্ট
  • বুকে ব্যথা
  • দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস
  • ছোট শিশুদের খাবারে অনীহা ও দুর্বলতা
  • শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় বুকের হাড় দেবে যাওয়া

ফুসফুসে ইনফেকশন এর ধরন

ফুসফুস ও শ্বাসনালীর ইনফেকশনের উপর ভিত্তি করে এদের কয়েক ধরনে ভাগ করা যায়। যেমন-

১) ব্রঙ্কাইটিসঃ ব্রঙ্কাইটিস হলো বড় শ্বাসনালী (ব্রঙ্কাই) এর একটি সংক্রমণ যা বায়ুনালী (শ্বাসনালী) এবং ছোট শ্বাসনালীগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রঙ্কাইটিস সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণের কারণে হয়। ১% থেকে ১০% ক্ষেত্রে, এটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।

২) ব্রঙ্কিওলাইটিসঃ ব্রঙ্কিওলাইটিস হলো ব্রঙ্কাই এবং ক্ষুদ্র অ্যালভিওলির মধ্যে ছোট শ্বাসনালীগুলির (ব্রঙ্কিওল) সংক্রমণ, যেখানে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। ব্রঙ্কিওলাইটিস সাধারণত দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এটি জীবনের প্রথম বছরে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির প্রধান কারণগুলোর একটি। এ ধরনের শিশুদের পরবর্তীতে শ্বাসের সমস্যা বা অ্যাজমা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

শিশুর শ্বাসকষ্ট

৩) সাধারণ সর্দি-কাশিঃ কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ সর্দি কাশিও ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে ফুসফুসে ইনফেকশনের কারণ হয়ে থাকে।

৪) নিউমোনিয়াঃ নিউমোনিয়া হলো ফুসফুসের এমন এক সংক্রমণ যেখানে ফুসফুসের সবচেয়ে ছোট বায়ুথলীগুলো আক্রান্ত হয়। এটি এমন এক রোগ যা চেষ্টা করলে বাড়িতেই চিকিৎসা করা যায় কিন্তু উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে জীবননাশক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

৫) নানা ধরনের ভাইরাসঃ এন্টারো ভাইরাস, করোনা ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হুপিং কাশি, যক্ষ্মা ইত্যাদির কারণে ফুসফুসে বিভিন্ন মাত্রার ক্ষতি সাধন হয়।

কাদের ঝুঁকি বেশি?

  • প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ (যারা ধূমপায়ীর আশেপাশে থাকেন) ধূমপায়ী
  • কর্মক্ষেত্রে বায়ু দূষণ বা ধূলিকণার সংস্পর্শে যারা থাকেন
  • যাদের আগে থেকে হাঁপানি বা অ্যালার্জির হিস্ট্রি আছে
  • যারা ঘিঞ্জি এলাকায় বসবাস করেন
  • নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থায় বাস করছেন এমন ব্যক্তি
  • যারা অপুষ্টিতে ভুগছেন
  • জন্মগত হার্ট অথবা ফুসফুসের রোগ আছে এমন যে কেউ
  • সাধারণত ৬ বছরের কম বয়সী শিশুরা, কারণ তারা বেশি সংবেদনশীল হয় (যেমন ব্রঙ্কিওলাইটিস প্রায়শই ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ঘটে)

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কী কী সমস্যা হতে পারে, লক্ষণ এবং কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আজ আপনাদের জানিয়ে দিলাম। যাদের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে তারা অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করবেন না। যারা এখনও সুস্থ আছেন, অবশ্যই হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলার চেষ্টা করুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

 

ছবিঃ সাটারস্টক

7 I like it
3 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort