নিঃসন্তান দম্পতি কীভাবে কমাবেন মানসিক চাপ?

নিঃসন্তান দম্পতি কীভাবে কমাবেন মানসিক চাপ?

infertility

দাম্পত্য জীবনে সন্তান না হওয়ার নানা কারণ থাকতে পারে। সেটা তাদের অনিচ্ছা, দম্পতির মতের মিল-অমিল এবং সবচাইতে বড় ব্যাপার হচ্ছে শারীরিক অক্ষমতার কারণে ঘটতে পারে। তাই বলে সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে হতাশ হয়ে গেলে চলে না! সন্তান না হওয়া যদি অবশ্যম্ভাবী হয় তাহলে তার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়াই শ্রেয়। কারণ সন্তান না হওয়া মানেই দাম্পত্য জীবনের শেষ নয়! সন্তান ছাড়াই আপনি আপনার সঙ্গীর সাথে জীবন কাটাতে পারেন। তাই এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে নিঃসন্তান দম্পতি কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন সেটাই আজ আপনাদের জানাবো।

নিঃসন্তান দম্পতি যেভাবে মানসিক চাপ কমাবেন

অনেক সময় সঠিক চিকিৎসার অভাবে বা প্রবলেম আইডেন্টিফাই না করার কারণে ইনফার্টিলিটি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে কাপল কাউন্সেলিং খুবই ইম্পরট্যান্ট। শারীরিকভাবে আপনি সন্তান জন্মদানের জন্য ফিট কিনা, বা কেন দীর্ঘদিন ট্রাই করেও বেবি কনসিভ হচ্ছে না, কারণগুলো অনুসন্ধান করার চেষ্টা করুন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে যাবতীয় টেস্ট করুন, চিকিৎসা নিন। এরপরও যদি কনসিভে ব্যর্থ হন, সেক্ষেত্রে মানসিকভাবে আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। এই সময়ে মানসিক চাপ আসবেই, কিন্তু ভেঙে পড়লে চলবে না!

১. আপনার অনুভূতিগুলো ব্যক্ত করুন

যখন আপনি নিশ্চিত হবেন যে আপনাদের দাম্পত্য জীবনে সন্তান আসার সম্ভাবনা নেই, তখন সবার আগে যে কাজটি করণীয় সেটা হচ্ছে আপনার ভেতরে যদি কোন হতাশা, ক্রোধ, দুঃখ থেকে থাকে সেগুলো ঝেড়ে ফেলুন। সেলফ মোটিভেশন অনেক বড় একটা বিষয়। মনে রাখবেন, বার বার যেন আপনার জীবনে চলার পথে এসব জিনিস বাধা হয়ে না দাঁড়াতে পারে। দরকারে আপনার সঙ্গীর সাহায্য নিন ও তার সাথে আপনার অনুভূতি শেয়ার করুন।

২. বাস্তবতাকে মেনে নিন

যখন ভেতরের সব হতাশা, দুঃখ নিঃশেষ হয়ে যাবে, তখন মাথা ঠান্ডা করুন। তারপর ব্যাপারটির গভীরতা চিন্তা করুন। তারপর বাস্তবতা মেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন। কী হতে পারতো কিংবা কী হয় নি সেগুলো চিন্তা না করে বর্তমানে কী হচ্ছে সেদিকে নজর দিন। তারপর সন্তান ছাড়া আপনার ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে সেটা ভাবুন এবং ঠিক সেইভাবে প্রস্তুতি নিন। আর একটা ব্যাপার যদি সন্তানের জন্য কোন ধরনের খেলনা বা অন্যান্য জিনিসপত্র কিনে থাকেন সেগুলো প্যাক করে দূরে সরিয়ে দিন। সবচাইতে ভালো হয় যদি জিনিসগুলো এমন কাউকে দিয়ে দিন যার কাজে লাগতে পারে।

৩. আপনার শরীরের খেয়াল রাখুন

জীবনে যেটা হয়েছে সেটা হয়েছেই। তার জন্য নিজের জীবন বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়ার মানে নেই। তাই মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার জন্য সুস্থ শরীর প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুমান, ঘুম না আসলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন ও পাশাপাশি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করুন। মানসিক চাপ কমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। তবে এসব মেডিসিনের সাইড ইফেক্ট থাকে, তাই এগুলো থেকে দূরে থাকাই বেটার।

৪. নেতিবাচক আবেগ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখুন

এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে হতাশা ঘিরে ধরবে এইটাই স্বাভাবিক। তাই আগে থেকে সাবধান হওয়াই ভালো। দাম্পত্যের শুরুতে বা মাঝামাঝি হতাশা ঘিরে ধরলে খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কখনো ভাববেন না আপনি ব্যর্থ। কেবল মাত্র সন্তান হলেই সফল হবেন এই ধরনের চিন্তা ভাবনা মাথায় আনার মানে নেই। তার পাশাপাশি রাগ, ভয় এই ধরনের অনুভূতিগুলোও সরিয়ে রাখুন। কারণ রাগের মাথায় নেওয়া কোনো সিদ্ধান্তই কখনো ভালো হয় না। এছাড়া ইনসোমনিয়া (Insomnia), অরুচি, মাথাব্যথা এই ধরনের শারীরিক অসুস্থতার ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

৫. বন্ধু-বান্ধবের সাথে সময় কাটান

আপনার এই সময়টাতে বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সময় কাটানো অনেকটাই জরুরি। এতে আপনার মধ্যে থাকা একাকীত্ব, হতাশাজনক অনুভূতিগুলো অনেকাংশেই কমে যাবে। তবে যারা জাজমেন্টাল কমেন্ট করে বা অযথা কথা বার্তা শোনায়, তাদের থেকে দূরে থাকুন। যদি মনে হয় আপনি আর নিতে পারছেন না তাহলে সবার সাথে মেশার পাশাপাশি মেন্টাল কাউন্সেলিং (Mental Counseling) করতে পারেন। চাইলে ধর্মীয় অনুশাসনও মানতে পারেন। এতে আপনার ভেতরে প্রশান্তি আসবে।

৬. যদি সামর্থ্য থাকে, তাহলে কোনো অনাথ শিশুর দায়িত্ব নিন 

সন্তান জন্ম দিলেই পিতামাতা হওয়া যায় এমন ভাবার কোন কারণ নেই। সেক্ষেত্রে নিঃসন্তান দম্পতি যদি চান তাহলে অনাথ শিশুদের প্রতিষ্ঠান থেকে সন্তান দত্তক নিতে পারেন। তবে যদি তা না চান তাহলে শিশুদের কাছাকাছি থাকার আরো পথ আছে। আপনার বন্ধু বা আত্মীয়-স্বজনের বাচ্চাদের সাথে সময় কাটান কিংবা এমন কোথাও কাজ করতে পারেন যেখানে শিশুদের সরাসরি যোগাযোগ আছে যেমন কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও শিশু বিষয়ক সামাজিক প্রতিষ্ঠান। আর যদি মনে হয়, এগুলো থেকে দূরে থাকবেন, তাহলে সেভাবে লাইফ গোল সেট করুন। ক্যারিয়ার বা পরিবারের কাজে মন দিন।

৭. সবশেষে নিজেকে সময় দিন

নিঃসন্তান দম্পতি চাইলে ক্যারিয়ারে মনোযোগ দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করতে পারেন যেমন অনলাইন বুটিক হাউজ, কেক শপ এই ধরনের। বাগান করতে পারেন, বই পড়তে পারেন। এতে আপনি ব্যস্ত থাকবেন। মনে রাখবেন, জীবন থেমে থাকে না। সন্তান থাকার পরও কিন্তু শেষ বয়সে এসে অনেকে সন্তানকে কাছে পায় না, তাই সন্তান না থাকলে জীবন বৃথা এসব চিন্তা মাথায় আনবেন না। আপনি নিজের মতো করে জীবন উপভোগ করুন।

সব মিলিয়ে সন্তান জন্ম না দিতে পারা একটি দুঃখের বিষয়। কিন্তু তাই বলে নিজের জীবন এই জন্য ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার মানে নেই। জীবন একটাই, নিজেকে শক্ত করুন ও আত্মবিশ্বাস আনুন। সঙ্গীর সাথে সুখী জীবনযাপন করুন। দিনশেষে নিজের খেয়াল কিন্তু নিজেকেই রাখতে হয়, তাই নিজের মতো বাঁচুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

ছবি – সংগৃহীত: সাটারস্টক

13 I like it
4 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort