চুলের বিভিন্ন সমস্যায় মাস্ক | ৫টি হেয়ার প্রবলেম ঘরোয়া উপায়েই দূর হবে

চুলের বিভিন্ন সমস্যায় মাস্ক | ৫টি হেয়ার প্রবলেম ঘরোয়া উপায়েই দূর হবে

conditioner

আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষই ডালনেস, খুশকিসহ আরও অনেক চুলের সমস্যায় জর্জরিত থাকে। বিশেষ করে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব,পলিউশন-এর কারণে চুল হয়ে ওঠে খসখসে ও রুক্ষ, ফ্রিজি এবং পরিবেশগত কারণে ধূলোবালি খুব সহজে আটকে যায় আর শুরু হয় চুল পড়া, ড্যামেজ হওয়ার মতো হাজার সমস্যা। সৌভাগ্যক্রমে কিছু ঘরোয়া উপাদানের মাধ্যমে আমরা রুক্ষ, নির্জীব চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। এসব ঘরোয়া উপাদান দিয়ে বানানো মাস্ক ড্যামেজ চুলকে মোলায়েম, মসৃণ আর রিজুভিনেট করে। আরেকটি কথা বলে রাখি চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের বিকল্প নেই। আজ তাই তেমনই কিছু প্রাকৃতিক এবং কার্যকরী উপাদান দিয়ে চুলের বিভিন্ন সমস্যায় মাস্ক তৈরি করার উপায় বলে দেয়া হলো। এবার তবে দেখেন নিন!

চুলের বিভিন্ন সমস্যায় মাস্ক যেভাবে ব্যবহার করবেন

১) চুলের গঠন পুনর্বিন্যাসে মাস্ক

যদি চুলগুলো খসখসে লাগে সেই সঙ্গে চুলের আগা ফাটা থাকে তবে কলা, জোজোবা অয়েল এবং মধু দিয়ে তৈরি মাস্ক ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত চুল রিপেয়ার হবে আবার রুক্ষ চুল হাইড্রেট হবে। আমরা অনেকেই জানি ড্রাই ফ্রিজি চুলের জন্য কলা খুবই আদর্শ উপাদান।

১. কলার মাস্ক

চুলের সমস্যা সমাধানে কলার মাস্ক - shajgoj.com

পাকা কলার অর্ধেক দুই আউন্স পানির সাথে ব্লেণ্ড করে নিন। এর সাথে ২ টেবিল চামচ মেয়োনেজ, ১ টেবিল চামচ করে নারকেল তেল, অলিভ অয়েল এবং জোজোবা অয়েল নিন। এর সঙ্গে আরও মিশিয়ে নিন ২ টেবিল চামচ মধু। তবে মনে রাখবেন মাস্ক-টি যেন একদম স্মুদ হয়। এবার এই মাস্ক-টি চুলে আপ্লাই করে ৪০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। জোজোবা অয়েল না পেলে চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই, এটি ছাড়াই মাস্কটি তৈরি করে ফেলুন!

২. নারকেলের মাস্ক

আরেকটি উপকারি প্যাক-এর কথা বলছি। নারিকেলের দুধ হচ্ছে প্রোটিন, আয়রন, পটাসিয়াম এবং অ্যাসেনশিয়াল ফ্যাট সমৃদ্ধ একটি উপাদান। এটি চুলের গঠন পুনর্বিন্যাস করে আপনাকে দিবে স্বাস্থ্যজ্জ্বল, সুন্দর চুল। সেই সঙ্গে চুল পড়া, চুল ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করবে নারিকেলের দুধ। নারিকেল কুড়িয়ে অল্প পানিতে ভিজিয়ে রেখে এরপর সেই নারিকেল চিপে এর দুধ বের করে নিন। এর সাথে একটু লেবুর রস আর টক দই মিশিয়ে স্ক্যাল্প-এ এবং চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে চুলের রুক্ষ ভাব কমে গিয়ে চুল নরম এবং সুন্দর হবে।

২) চুলের গোড়া মজবুতে মাস্ক

চুলে ঘন ঘন হিট বা কালার করালে চুলের নমনীয়তা হ্রাস পাওয়াটা স্বাভাবিক। তাই বলেতো চুলের স্টাইলিং বন্ধ করে রাখা যায় না। তাই চুলের গোড়া মজবুত করতে নিয়মিত যত্ন নিতে হয়।

১. ডিমের মাস্ক

চুলের যত্নে কলা, ডিম ও মধুর মাস্ক - shajgoj.com

যাদের চুলে রেগ্যুলার স্টাইলিং করা করা হয়, তাদের  চুলের জন্য দরকার বাড়তি যত্ন। এই ধরনের চুলের জন্য ডিমের প্রোটিন জাদুরমতো কাজ করে। ডিমের পুষ্টি চুলের ড্যামেজড কিউটিকল-কে মসৃণ করে এবং চুলকে পুনরায় স্বাস্থ্যজ্জ্বল ঝলমলে করে তোলে। এই মাস্ক-টি তৈরি করার জন্য লাগবে একটি ডিম, এক টেবিল চামচ নারকেলের তেল, জলপাইয়ের তেল এবং মধু এর সাথে ২ আউন্স পানিও মিশিয়ে নিন। চাইলে এই প্যাক-এর সাথেও একটি পাকা কলার অর্ধেক ম্যাশ করে নিতে পারেন। তারপর পুরো মিশ্রণটি ভালো করে মিশিয়ে একটি স্মুদ পেস্ট তৈরি করুন। এখন অ্যাপ্লাই করার পালা। চুলে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

২. মেথির প্যাক

চুলের গোড়া শক্ত করার জন্য মেথি হচ্ছে আরেকটি কার্যকরী উপাদান। এটি চুলের গোড়া শক্ত করে চুল পড়া কমিয়ে আনে এবং চুল দ্রুত বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি চুলের প্রাকৃতিক রঙ ধরে রাখে। এক চা চামচ মেথি গুঁড়া, ২ চা চামচ নারিকেলের দুধ একসাথে মিশিয়ে চুলে লাগান। ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২ দিন লাগান।

৩) চুলের সফটনেস-এ মাস্ক

চুলের সফটনেস এর জন্য চুলে ভিটামিন ই-যুক্ত উপাদানের ট্রিটমেন্ট দিতে হয়। তাই দেখে নিন চুল কোন প্যাক দিয়ে সফট ও মসৃন করতে পারেন!

১. অ্যাভোক্যাডো প্যাক

চুলের সমস্যা সমাধানে অ্যাভোকাডো মাস্ক - shajgoj.com

আমাদের দেশে পাওয়া মুশকিল কিন্তু এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই আছে। যারা হাতের কাছে পাবেন তাদের জন্য এই রেসিপিটি দেয়া হল। ব্লেন্ডার-এ একটি পাকা অ্যাভোক্যাডো-এর অর্ধেক, একটি ডিম, এক টেবিল চামচ নারকেলের তেল, জলপাইয়ের তেল, মধু এবং এক আউন্স পানি মিশিয়ে ব্লেণ্ড করে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন মিশ্রণটি একটি ক্রিমি টেক্সচার-এ পরিণত হয়। এরপর চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর চাইলে শ্যাম্পু করবেন নতুবা শুধু পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন আর যারা অ্যাভোক্যাডো পাবেন না তারা নীচের ২টি মাস্ক ট্রাই করতে পারেন।

২. অ্যালোভেরা- মেয়োনেজ প্যাক

চুল যদি অনেক রাফ হয়ে যায় তাহলে ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরার সাথে ১ টেবিল চামচ মধু আর আধা কাপ মেয়োনেজ মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা। তারপর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি ১ দিন শুধু পানি দিয়ে ধুয়েই রাখতে পারেন তাহলে খুব ভালো আর না হলে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৩. অ্যালোভেরা- কলা মাস্ক

ব্লেন্ডার-এ একটি কলা, ৩ চামচ অ্যালোভেরা জেল, ৫ চা চামচ টকদই, একটি ভিটামিন-ই ক্যাপসুল ভেঙে ব্লেন্ড করে চুলে লাগান ৩০ মিনিটের জন্য। পরে শ্যাম্পু করে ফেলুন!

৪) আর্দ্রতা রক্ষার মাস্ক

চুলের সমস্যা সমাধানে ডিম, মধু ও অলিভ অয়েলের মিশ্রণ - shajgoj.com

চুলের আর্দ্রতা রক্ষা করতে হাতের কাছের উপাদান দিয়ে সহজেই সুন্দর চুল পাওয়া সম্ভব। চলুন এবার ১টি উপযোগী মাস্ক দেখে নেই! আধা কাপ মধুর সাথে ১টি ডিমের কুসুম, ১ টেবিল চামচ নারকেল অথবা অলিভ অয়েল ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর ভেজা চুলে লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন। ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।

৫) চুলের যত্নে রুটিন মাস্ক

হেলদি চুলের জন্য মেয়োনেজ ও ডিমের মাস্ক - shajgoj.com

চুলের সৌন্দর্য রক্ষার্থে রুটিন মাফিক যত্নেরও প্রয়োজন আছে। সেই কথাটি মাথায় রেখে সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করার মতো একটি মাস্ক-এর কথা বলবো এখন। একটি ডিম, হাফ কাপ মেয়োনেজ, ২ টেবিল চামচ মধু এবং ১ আউন্স পানি ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর চুলের গোড়া থেকে আগা অবধি লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু করুন!

সবশেষে বলবো স্বাস্থ্যকর, সুন্দর ঝলমলে চুলের জন্য মাস্কের পাশাপাশি আমাদের শরীরের প্রয়োজন প্রোটিন, কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, মিনারেল এবং ভিটামিন। অপর্যাপ্ত পুষ্টি বা অতিরিক্ত ডায়েট চুল পড়ার জন্য দায়ী আর এভাবেই এক সময়কার ঘন চুল কোথায় যেন হারিয়ে যায়। আমরা যত খাদ্য গ্রহণ করি তার মিনেরাল এবং ভিটামিন প্রথমে কাজে লাগায় আমাদের শরীরের ভাইটাল অরগান-গুলো, তারপর হেয়ার ফলিকল এবং নখ বাদ বাকি নিউট্রিয়েন্ট গ্রহণ করে। তাহলে বুঝতেই পারছেন গ্রহণকৃত পুষ্টি চুলের গোড়ায় অনেক পরে গিয়ে পৌঁছে। তাই যথেষ্ট পরিমাণে আমাদের প্রোটিন, কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, মিনারেল এবং ভিটামিন গ্রহণ করা খুব জরুরী।

 

ছবি- সংগৃহীত: shutterstock

7 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort