৩৫ বছরে মা হতে চাইলে করণীয় কী?

৩৫ বছরে মা হতে চাইলে করণীয় কী?

বাচ্চা নেয়ার ব্যাপারে চিন্তা করে ৩৫ বছরে মা হতে চাইলে করণীয়

মাতৃত্ব একজন নারীর জীবনে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান প্রত্যেক মা -বাবারই স্বপ্ন। কিন্তু আমাদের সমাজে মা হতে গেলে একজন মেয়েকে অনেক সময় অনেক প্রতিকূল ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে যদি মা এর বয়স যদি ৩০ বা এর বেশি হয়ে থাকে। যদিও একবিংশ শতাব্দীর এই দিনে চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং এর চিকিৎসা পদ্ধতিরও অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন বেশি বয়সেও স্বামী-স্ত্রীরা মা-বাবা হতে পারে। সাধারণত ২০-২৫ বছর বয়সের মধ্যে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। কারণ এই সময়ে মেয়েদের ডিম্বস্ফুটনের সম্ভাবনা যেমন বেশি থাকে তেমনি গর্ভপাতের ঝুঁকিসহ যেকোন ধরনের ঝুঁকিও কম হয়ে থাকে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিছু শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। তাই আজকে আলোচনা করবো ৩৫ বছরে মা হতে চাইলে করণীয় বিষয় নিয়ে। চলুন তবে দেখা যাক-

৩৫ বছরে মা হওয়া নিয়ে যত কথা

সাধারণত ৩২ বছর থেকে বন্ধ্যাত্ব দেখা  দিতে পারে। ৩৫ বছর থেকে এর হার বাড়তে শুরু করে। এ সময়ে ডিম্বস্ফুটনের হারও কমে। এক গবেষণায় দেখা গেছে ৩৭ বছর বয়সে মহিলাদের মাত্র ২৫০০০ ডিম্ব অবশিষ্ট থাকে স্ফুটনের জন্য। গর্ভপাত এবং বংশগত অস্বাভাবিকতাও মায়ের বয়স ৩৫ বা এর বেশি হয়ে গেলে দেখা দিতে পারে। এই বয়সে সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে গর্ভকালীন সময়ে বা এর পরবর্তীতেও বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে চিকিৎসকগণ মা ও তাঁর গর্ভের সন্তানের জন্য বাড়তি কিছু টেস্ট ও স্ক্রিনিং এর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

৩৫ বছরের বেশি অর্থাৎ ৪০ বছর বয়সে কি গর্ভধারণ সম্ভব?

প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট হাতে একজন

৪০ বছরের পরে স্বাভাবিকভাবেই  বন্ধ্যাত্বের সমস্যাটি আরো বাড়তে পারে। এ বয়সে ৩ মাস চেষ্টা করার পরেই প্রেগনেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ৭ শতাংশ যা কিনা ৩৫ বছরে এবং ২৫ বছরে যথাক্রমে ১২ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ। বেশি বয়সে মা হতে গেলে বাচ্চার ক্রোমোজোমাল (chromosomal) সমস্যা নিয়ে জন্মানোর সম্ভাবনাও অনেক বেড়ে যায়। ৪০ বছর বয়সে প্রেগনেন্সিতে যেসকল ঝুঁকিসমূহ থাকে-

১) সিজারিয়ান ডেলিভারি

একটা সময় সিজারিয়ান ডেলিভারি নিয়ে মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করলেও সময়ের সাথে সাথে সেটা অনেকখানিই কেটে গেছে।এর ভালো, খারাপ দিকগুলো জেনে মহিলারা এখন অনেক সময় নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয় সিজারিয়ান ডেলিভারি করানোর। কিন্তু একটু বেশি বয়সে মা হওয়ার সময় এই ডেলিভারির জন্য মা ও বাচ্চা দুজনেরই অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে।        

২)  প্রিম্যাচিউর বার্থ

৯ মাসের পূর্বেই বাচ্চার জন্মগ্রহণ।

৩) লো বার্থ ওয়েট

বাচ্চার ওজন ২.৫কেজির কম হওয়া।

৪) জন্মগত ত্রুটি

বাচ্চার ডাউন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।

এছাড়াও মৃত বাচ্চাও প্রসব হতে পারে।

আরো কিছু জটিলতা যেমন ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ ৩৫ বছরের অধিক বয়সী গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়। এ সমস্যাই পরবর্তীতে জেসটেশনাল ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes) যা শুধুমাত্র প্রেগনেন্সিতে যে ডায়াবেটিস দেখা যায় বা প্রি-ইক্ল্যাপমশিয়া (Pre eclampsia) এর মতো কঠিন পরিস্থিতির দিকেও ঠেলে দিতে পারে।

তবে এতো হতাশার মধ্যেও আশার কথা হলো ৩৫ বছরের পরেও মেয়েরা এখনও সুস্থভাবেই সন্তান জন্মদান করছে। আমেরিকার কেয়ার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (Centre for Disease Control and Prevention)এর এক তথ্য মতে, সকল অঞ্চলের ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী মায়েদের প্রথম সন্তান ধারণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পূর্বে ডাক্তাররা ৩৫ বছর বা এর বেশী বয়সের প্রেগনেন্সিকে জেরিয়াট্রিক প্রেগনেন্সি (Geriatric Pregnancy) বলে আখ্যায়িত করলেও এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের যথেষ্ট উন্নতির কারণে তারা ৩৫ বা এর বেশি বয়সের প্রেগনেন্সিকে অ্যাডভান্সড ম্যাটারনাল এজ (Advanced Maternal Age) বলে।

৩৫ বছরে মা হতে চাইলে করণীয়

বাচ্চা কোলে একজন মা

৩৫ বছরে বা তার পরে যদি আপনি কনসিভ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই দেরি না করে গাইনোকলোজিস্টের সাথে কথা বলতে হবে। গবেষণায় দেখা যায় মহিলাদের ধারণা প্রেগনেন্সিতে প্রসব যন্ত্রনা এবং সন্তান জন্মদানের কোন সমস্যা শুধুমাত্র  তাদের বয়সের কারণেই হয়ে থাকে। আর এই অহেতুক ভয়ের জন্য তারা অনেক সময় মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যায় প্রেগনেন্সির শেষের দিকে এবং তা থেকেই মাঝে মাঝে অনেক জটিলতার সূত্রপাত হয়। চলুন তবে দেখে নেই ৩৫ বছরে মা হতে চাইলে ফ্যাক্টর ও করণীয়সমূহ-  

১) স্বামীর বয়স

শুধুমাত্র স্ত্রীর বয়সই যে সন্তান ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, স্বামীর বয়সও এই ক্ষেত্রে অনেক বড় একটি ফ্যাক্টর।

২) টেস্ট ও স্ক্রিনিং

গর্ভধারণের পূর্ববর্তী টেস্ট ও স্ক্রিনিংগুলো করিয়ে নিতে হবে।

৩) হরমোন সার্পোট বা ভিটামিন

অনেক ক্ষেত্রে হরমোন সার্পোট বা ভিটামিন বি, সি লাগতে পারে।

৪) জন্মগত ত্রুটি

বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি দেখার জন্য (১২-১৩) সপ্তাহে ডাউন স্ক্রিনিং এবং (২০-২২) সপ্তাহে অ্যানোমালি স্ক্রিনিং খুব গুরুত্বপূর্ণ।

৫) কিছু নিয়মিত পরীক্ষা 

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে।

৬) ব্যায়াম 

নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

৭) ধূমপান বা মদ্যপান এড়িয়ে চলা

এ সময়ে ধূমপান বা মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।

 ৮) স্ট্রেস না নেয়া

বেশি মানসিক চাপও শরীরের জন্য খারাপ। অতিরিক্ত স্ট্রেস নেয়া যাবে না। পরিবারের  সহায়তা এ জন্য খুব জরুরি।

তাহলে জানলেনতো ৩৫ বছরে বা তার বেশি বয়সে মা হতে চাইলে আপনার পদক্ষেপসমূহ কেমন হবে! এছাড়া অবশ্যই ভালো গাইনোকোলজিস্ট এর সাথে পরামর্শ করে নিবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক

27 I like it
5 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort