আগেকার দিনে দাদি নানীদের রূপচর্চার প্রধান উপাদান হিসেবে এবং বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে মধুই ছিল যেন একমাত্র ভরসা। আধুনিক কালে আমরা সবাই যেন মধুর ব্যবহার ভুলতে বসেছি। মধুর ব্যবহার আজকাল কমে গেলেও এর গুনাগুণ কিন্তু কমেনি এক ফোঁটাও। ভিটামিনস, মিনারেলস, এন্টি অক্সিডেন্ট এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ এ সমৃদ্ধ এই মধু দৈনন্দিন জীবনের মোটামুটি সব সমস্যা সমধানে ব্যবহার করা যেতে পারে। আজ তাই আপনাদের মধুর কিছু অতুলনীয় গুনাগুণ এবং ব্যবহার সম্পর্কে জানাতেই এই লেখা।
– মধু খুব ভালো প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বককে ভিতর থেকে এক্সফলিয়েট করে ময়লা এবং মরা কোষ দূর করে ত্বককে স্বাস্থ্যজ্জ্বল করে তোলে। নিয়মিত মধু দিয়ে মুখ পরিষ্কার করার ফলে ত্বক হয়ে উঠে দাগহীন এবং সুন্দর। এক চামচ মধু এবং এক চামচ লীজান উপটান মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ফেইস ওয়াশ এর বদলে এটি দিয়ে সকাল এবং রাতে মুখ পরিষ্কার করুন। কয়েকদিনের মধ্যেই লক্ষ্যনীয় পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
[picture]
– ময়েশ্চারাইজার হিসেবে মধু বেশ কার্যকরী। নিমিষেই এটি ত্বককে নরম ও মসৃণ করে তোলে। যাদের ত্বক শুষ্ক তারা মুখে মধু লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক নরম ও উজ্জ্বল হবে।
– বয়স কমিয়ে তারুণ্যকে ধরে রাখতে মধুর জুড়ি নেই। মধুতে থাকা বিভিন্ন উপকারী উপাদান ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং ত্বক টানটান রাখে। তাই প্রতিদিন এক চামচ মধু খেতে ভুলবেন না যেন।
– মধু প্রাকৃতিক এন্টি-সেপটিক হিসেবেও খুব ভালো কাজ করে। খাঁটি মধুতে রয়েছে ‘ইনহিবিন’ যা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী এজেন্ট। পোড়া বা কাটা জায়গায় মধু লাগানোর মাধ্যমে ব্যথা কমে যায় এবং এটি ক্ষত স্থান থেকে ব্যাকটেরিয়া দূর করে যার ফলে ইনফেকশন হয় না। এছাড়াও এটি খুব দ্রুত ক্ষত স্থানের কোষ গঠনে সাহায্য করে।
– চুল সিল্কি রাখতে ও চুলের ফ্রিজি ভাব দূর করতে শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনারের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে চুলের নিচের অংশে ভালো মতো লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর চুল ভালো মতো ধুয়ে ফেলুন। চাইলে কন্ডিশনারের বোতলে পরিমাণমত মধু মিশিয়ে রেখে দিতে পারেন।
– মুখের দাগ দূর করতে মধু, আমণ্ড অয়েল, গুঁড়া দুধ এবং লেবুর রস পরিমাণমত মিশিয়ে ফেইস মাস্ক হিসেবে লাগান। ১০-১৫ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ বা রোদে পোড়া দাগ দূর করতে এই প্যাকটি বেশ কার্যকরী।
– দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে এক চা চামচ মধু ও ২ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। তবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে খাবেন না বা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিবেন।
– লিপবাম হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন মধু। এক চামচ আমণ্ড অয়েল এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে লিপ বাম পটে সংরক্ষণ করুন। এটি ঠোঁট ফাটা রোধ করে এবং ঠোঁটে গোলাপি আভা নিয়ে আসে।
– দুই চামচ মধু, আধা চামচ চিনি এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে তৈরি করুন হানি স্ক্রাব। এই স্ক্রাবটি ২-৩ মিনিট মুখে হালকা ভাবে ম্যাসাজ করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। চিনি খুব ভালো এক্সফলিয়েটিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে, লেবু ত্বকের দাগ দূর করে এবং মধু ত্বকে পুষ্টি জুগিয়ে একে নরম ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল করে তোলে।
– চুল ন্যাচারালি হাইলাইট বা কালার করতে চুলের লম্বা অনুযায়ী মধু নিন এবং এতে টক দই দিন যাতে মধুর আঠালো ভাবটা দূর হয়। এবার চুলের যে জায়গা হাইলাইট করতে চান সেখানে মিশ্রণটি ভালো মতো লাগান এবং ২ ঘণ্টা এভাবে রেখে দিন। এরপর চুল ধুয়ে ফেলুন। ফলাফল পেতে কমপক্ষে ৩-৪ দিন লাগান।
– ২ চামচ মধু, ৩ চামচ অলিভ অয়েল এবং টক দই একসাথে ভালো মতো মিশিয়ে চুলে ভালো মতো লাগান। ৩০ মিনিট রেখে চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি চুলের রুক্ষভাব দূর করে এতে প্রয়োজনীয় ময়েশ্চার জোগায় এবং হেয়ার ফলিকল উজ্জীবিত করে চুলের বৃদ্ধি তে সহায়তা করে।
লিখেছেন – নাহার
ছবি – বোল্ডস্কাই.কম