প্রকৃত সৌন্দর্য আসলে কী - Shajgoj

প্রকৃত সৌন্দর্য আসলে কী

real beauty

সৌন্দর্য ! ! ! শব্দটি যতই ছোট; এর তাৎপর্য তেমনি বিশাল। সকলেই নাকি সুন্দরের পূজারী, তাই বলতে শোনা যায়, ”আগে দর্শনধারী পরে গুণ বিচারী ।” বাক্যটিতে সৌন্দর্যকে সম্পূর্ণভাবে বাহ্যিকতার আড়ালে লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। ভালো করে একটু ভেবে দেখুন তো আসলেই কি সৌন্দর্য কেবলমাত্র বাহ্যিক চাক-চিক্যের পিঞ্জরে আবদ্ধ? আমাদের চিন্তা, চেতনা,বুদ্ধিমত্তা কি আমাদেরকে অনুমতি দেয় এমন ধারণা পোষণ করতে? তবুও যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশে তথা সমগ্র বিশ্বে এমনটিই প্রচলিত হয়ে আসছে; যা মোটেও কাম্য নয়। সৌন্দর্যের পুরো ব্যপারটিই আপেক্ষিক; স্থান, কাল, পাত্র ভেদে এর সংজ্ঞাও ভিন্ন। চলুন তবে সৌন্দর্যের বিভিন্ন পরিধি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাকঃ

বাহ্যিক না অভ্যন্তরীনঃ
শুরুর কথাগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে আমিও প্রথমেই বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়েই বলতে চাই যাতে করে এতদিন যারা বাহ্যিক সৌন্দর্যকেই  সৌন্দর্যের মাপকাঠি বলে মনে করছেন তারা যেন তাদের সেই ধারণার আরো গভীরে তলিয়ে দেখতে পারেন।
সৌন্দর্যের অনেক রকম রূপ রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক সকলকেই তাদের নিজ নিজ সৌন্দর্য, গুণাবলী ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দান করেছেন; যা এক জন থেকে অন্যজনকে আলাদা করতে সাহায্য করে। বাহ্যিক সৌন্দর্যর কোন সীমারেখা বা আদর্শ মানদণ্ড নেই । আগেই বলেছি যে তা ব্যক্তি ও তাদের প্রয়োজনের খাতিরে পরিবর্তিত হয় । সবার চোখে কিংবা মস্তিষ্কে একই রকম জিনিস সুন্দর মনে হবে তা কিন্তু নয়। আমি যেভাবে এর ব্যাখ্যা দেব আপনি হয়ত তার সাথে একমত নাও হতে পারেন আবার আপনার চিন্তার সাথে অন্যের চিন্তা নাও মিলতে পারে ।একেক জনের চোখে সৌন্দর্য্য একেক রকম।
যেমন একটা উদাহরণ দেখাই , আমরা তথা এশীয়-দক্ষিণ এশীয় যারা আছি আমাদের কাছে বাহ্যিক সৌন্দর্য বা সৌন্দর্য মানে হচ্ছে ফর্সা ত্বক; এখনো পুরো জনসংখ্যার একাংশ মানুষ এমনটাই বিশ্বাস করে-চেহারা,উচ্চতা,চলন-বলন যেমনই হোক না কেন । এখনো অনেক শিক্ষিত, বুদ্ধিমতী, আত্ম-প্রত্যয়ী নারীদের মনেও কোথাও কোথাও ফর্সা হওয়ার বাসনা থেকেই যায়-যা খুবই দুঃখজনক হলেও সত্যি । এর কারণ আমাদের সমাজ ব্যবস্থা । আমাদের দেশে ছোটবেলা থেকেই মেয়েদেরকে এমনভাবে বেড়ে উঠানো হয়। তাদের মনে বদ্ধমূল ধারণা গড়ে উঠে যে সেহেতু আর গায়ের রঙ ফর্সা নয় আর মানে তিনি সুন্দরী নন।

অপরপক্ষে পশ্চিমা দেশ গুলোর দিকে লক্ষ করলে দেখব তারা সান-বাথ করে নিজেদের রঙ কে শ্যামলা করতে বেশি পছন্দ করছে। অন্য যে কোন দিক যেমন ফ্যাশন, কালচার এসব ক্ষেত্রে আমারা পশ্চিমাদের সাথে তাল মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, তাহলে  এ দিক দিয়ে কেন আমরা পিছিয়ে?
এটা হচ্ছে সৌন্দর্যের ভৌগোলিক তারতম্য, যা প্রমাণ করে ফর্সা বা কালো ত্বক কখনোই সৌন্দর্যের পথে বাঁধা হতে পারে না । তবে কেন যুগ যুগ ধরে ফর্সা-কালো রঙকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমরা আমাদের ব্যক্তিত্ব, নৈতিকতা কিংবা মানসিকতার নিম্ন স্তরকে প্রদর্শন করে চলেছি; বাস্তবিক রূপে যা সম্পূর্ণ অমূলক ও ভিত্তিহীন । ঠিক তেমনি ভাবে গায়ের রঙের সাথে সাথে ছোট চোখ, বোঁচা নাক, মোটা বা পাতলা ঠোঁট, সোজা বা কোঁকড়া চুল, লম্বা কিংবা খাটো , মোটা বা পাতলা দৈহিক গড়ন আপনার সৌন্দর্যের অন্তরায় নয়।
এবার নিশ্চয়ই আপনারা সকলে  আমার সাথে একমত হবেন যে আপাত দৃষ্টিতে মনে হলও সত্যিকার অর্থে সৌন্দর্যের সাথে গায়ের রঙের তথা অন্যান্য শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কোন সম্পর্ক নেই। আসলে সত্যি তো এটাই যে সৌন্দর্যকে এসব ক্ষণস্থায়ী (রূপ,যৌবন,বয়স) বিষয়য়াদির আদলে বাঁধা যায় না বরং সৌন্দর্য বলতে আপনার ব্যক্তিত্ব,মনুষ্যত্ব,আত্মবিশ্বাস, পরোপকারী মনোভাব এবং নিজের প্রতি ও অন্যদের প্রতি আপনার ভালোবাসাকেই বোঝায়।  তাই যাদের মনে নিজেদের গায়ের রঙ বা চেহারার খুঁত নিয়ে বিন্দুমাত্রও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল আজ-এখন থেকে তার সমূল উৎপাটনের কাজ শুরু করে দিন এবং আপনার চিন্তার জগতকে বিস্তৃত করে নিন; কেননা  সৌন্দর্যের অনুভব  আমাদের দেখার দৃষ্টিতে, আমাদের হৃদয়ে আর সর্বোপরি আমাদের মস্তিষ্কে।

মানসিকঃ
সম্প্রতি চালানো একটা গবেষণায় উঠে এসেছে যে সৌন্দর্য আসলে মানসিক ।বিউটি জগতের স্বনাম ধন্য ব্র্যান্ড ‘ডাভ’ দ্বারা পরিচালিত একটা জরিপে এমনটিই প্রকশিত হয়েছে । বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন বয়সের ও বিভিন্ন কমপ্লেক্সনের প্রায় ২ হাজার মহিলার উপর  ডক্টর অ্যান কিয়ারনী কুকে এর তত্তাধানে এ জরিপটি চালানো হয়।
ডক্টর অ্যান কিয়ারনী কুকে একজন বিখ্যাত সাইকোলজিস্ট ও বগি ইমেইজ এক্সপার্ট ,তিনি বিগত ৩০ বছর ধরে মহিলাদের উপর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন । সাম্প্রতিক এ গবেষণায় তিনি মহিলাদেরকে ‘বিউটি প্যাচ’ সম্পর্কে জ্ঞাত করেন এবং গবেষণায় অংশ গ্রহণকারী নারীদের সবার বাহু তে সাদা, গোলাকৃতির একটা বস্তু আটকে দেন যাকে তিনি ‘বিউটি প্যাচ’ বলেছেন । এই প্যাচের সাথে ঐ মহিলাদেরকে কিছুদিন থাকতে বলেন এবং এরপরে তার সাথে পুনরায় দেখা করতে বললেন । নির্দ্দিষ্ট দিন শেষে প্রত্যেকেই তার সাথে দেখা করলেন এবং বেশির ভাগ মহিলা জানালেন যে তারা ‘বিউটি প্যাচ’ লাগানোর পরের দিন থেকেই বিশেষ  কিছু অনুভব করেছেন, কেউ কেউ বলেছেন তাদের ক্লান্তি কমে গেছে, কারো আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে, কারো কারো ত্বকের সমস্যা দূর হয়েছে এবং আরো অনেক কিছু। অবশেষে  ডক্টর অ্যান তাদেরকে তথাকথিত বিউটি প্যাচের একটি প্যাকেট দিলেন এবং দেখতে বললেন। প্যাক এর উলটো দিকে লেখা ছিল ‘কিছুই না’ ।
তিনি যখন সবাই কে ব্যপারটি বুঝিয়ে বললেন তখন এটাই স্পষ্ট হল যে সৌন্দর্য একধরণের মানসিক অনুভূতি । যখন আপনি নিজের মন থেকে বিশ্বাস করবেন ও মেনে নিতে শুরু করবেন যে আপনি সুন্দর তখন সমগ্র  পৃথিবীর চোখেই আপনি সুন্দর। তবে দুঃখের কথা এটাই যে মাত্র ৪% নারী এমনটি বিশ্বাস করে থাকেন। বাকিরা নিজেদের অসুন্দর ভাবে কিংবা নিজের সৌন্দর্য আবিষ্কারে ব্যর্থই থেকে যান ।প্রতিনিয়তই আমরা নিজেদের নিয়ে চিন্তিত থাকি, চেহারার কোথায় কী খুঁত রয়েছে তা খুঁজে বেড়াই, অন্যের রূপ দেখে ঈর্ষান্বিত হই; যার কোনটাই সমীচীন নয় । দুশ্চিন্তা না করে আয়নায় দাঁড়িয়ে আপনার আপনাকে নতুন করে মিলিয়ে নিন, রোজ সকালে ঘুম থেকে জেগে সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া আদায় করুন আর আয়নার নিজেকে দেখে বলুন ‘বাহ !তুমি তো অনেক সুন্দর; তোমার নিজের মত করে সুন্দর’ । ব্যাস তাহলেই আর ছোট-খাট খুঁত গুলো আপনার  সৌন্দর্যের চেয়ে বড় রূপে আপনার নজরে আসবে না বরং তা আপনার সৌন্দর্যে যোগ করতে পারে নতুন মাত্রা-যা আপনাকেই খুঁজে নিতে হবে; এতদিন ধরে নিজের যে খুঁতকে লুকানোর চেষ্টা করে  চলেছেন আজ থেকে তার বদলে নিজের ভালো দিকটিকে সবার সামনে তুলে ধরুন আর অন্যদেরকেও এ ব্যপারে উদ্বুদ্ধ করে তুলুন । দেখবেন এতদিন ধরে জেনে আসা আপনার সৌন্দর্যের সংজ্ঞা আপনি নিজেই পাল্টে দিয়েছেন ।

লিখেছেনঃ রোজা স্বর্ণা

ছবিঃ ডেইলিমেইল.কো.ইউকে

5 I like it
1 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort