অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পূর্বে সতর্কতা - Shajgoj

অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পূর্বে সতর্কতা

antibiotic

গ্রিক শব্দ ‘অ্যান্টি’ ও ‘বায়োস’ থেকে ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ শব্দটি এসেছে। অ্যান্টি অর্থ বিপরীত ও বায়োস অর্থ জীবন। অর্থাৎ এটি জীবিত মাইক্রোঅর্গানিজমের বিরুদ্ধে কাজ করে। যেসব রোগ সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়, তা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়ের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। এজন্য ভাইরাসজনিত রোগের বিপরীতে এন্টিবায়োটিক কার্যকরী । সবার মুখেই অ্যান্টিবায়োটিকের চর্চা শোনা যায় তবে অনেকেই সঠিকভাবে এর সাথে পরিচিত না। আজকের এই আলোচনা থেকে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে বিশদভাবে জানবো সেই সঙ্গে এর সাথে সম্পর্কিত সাইড এফেক্ট গুলোও জানবো।

অ্যান্টিবায়োটিক কী?

অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে সেই সব ঔষধ যা ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা পরজীবী ধ্বংস করে অথবা এদের বিষক্রিয়াকে নষ্ট করে। ব্যাকটেরিয়াজনিত বিভিন্ন রোগে অ্যান্টিবায়োটিক একটি বহুল ব্যবহৃত সফল ঔষধ।

এখন বলি, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্স সম্পর্কে।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স কী?

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলতে বোঝায় অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়া অর্থাৎ যদি এমন কোন ঔষধের বিরুদ্ধে জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে যার প্রতি একসময় জীবাণুটি সংবেদনশীল ছিল ( মানে ঔষধটি জীবাণুর বিষক্রিয়া নষ্ট করতে পারত) কিন্তু ওই জীবাণুর বিপক্ষে এটি এখন আর কাজ করতে পারছে না। যদি কোন জীবাণু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্ট হয়ে যায়, তখন তাকে সহজ ভাষায় বলা যায় ড্রাগ রেজিস্টেন্ট হয়ে যাওয়া। এর মানে হচ্ছে, তখন সেই জীবাণুর উপর সাধারণ কোন ঔষধ কাজ করতে পারবে না। এখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসবে কেন রেজিস্টেন্ট হয়ে যায়। অ্যান্টি বায়োটিক আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে বিভিন্ন জীবাণু বা ভাইরাস তার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে মানে জীবাণু গুলো অ্যান্টিবায়োটিক এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যাবস্থা গড়ে তোলে। ফলে তারা সাময়িক ভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং আমাদের শরীর সুস্থ হতে শুরু করে। কিন্তু জীবাণু বা ভাইরাস কিন্তু তখনো শরীরে থেকে যায় অ্যান্টিবডির মাধ্যমে। এখন আমরা যদি ঐ অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করে দেই তাহলে জীবাণু গুলো পুনরায় আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে এবং আবার রোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু সমস্যা হল আপনি যদি এখন আবার ঐ অ্যান্টি বায়োটিক খান তাহলে কিন্তু তা আর কাজ করবেনা। কারণ কী জানেন? ঐ যে আপনার শরীরে আগের অ্যান্টিবডি গুলো থেকে যায় তাই। তখন জীবাণু গুলো প্রথম থেকেই অ্যান্টিবায়টিক এর বিপরীতে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তখন আর ঐ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ হয় না। এমনকি ঐ অ্যান্টিবায়োটিক আপনার শরীরে আর কোনোদিন কাজ করবেনা। তাই আমাদের করনীয় হল যখনই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হবে, অবশ্যই পুরো কোর্সটি সম্পন্ন করতে হবে। এই জীবাণুরা ড্রাগ রেজিস্টেন্ট হয়ে গেলে কী ক্ষতি হবে জানেন?

১) সাধারণভাবে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক এদের উপর আর কাজ করবেনা।

২) নতুন ড্রাগ তৈরী করতে হবে যা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া এবং সমগ্র চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য হুমকি।

৩) চিকিৎসা হয়ে যাবে ব্যয়বহুল এবং জটিল, অনেকক্ষেত্রে সাধারণের হাতের নাগালের বাইরে।

৪) চিকিৎসা ফলপ্রসূ হবে না, রোগী দীর্ঘদিন যাবত সংক্রমিত থাকতে পারে, অন্যকে সহজে সংক্রমিতও করতে পারে।

৫) বড় বড় সার্জারি, অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট যা এখন অনায়াসে হচ্ছে, সেগুলো হয়ে যাবে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ।

সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ

ডায়রিয়াঃ

আপনি কি জানেন অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে আপনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন? আমাদের বডি সিস্টেমের মধ্যে ভালো এবং খারাপ উভয় ব্যাকটেরিয়া আছে। অ্যান্টিবায়োটিক শুধু খারাপ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে না সঙ্গে কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়াও ক্ষতিগ্রস্তও হয় আর আমাদের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল নালীর মধ্যে ভালো এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বিপর্যস্ত হলে অ্যান্টিবায়োটিক সংশ্লিষ্ট ডায়রিয়া দেখা দেয়।

বমি বমি ভাবঃ

সাধারণত সব ওষুধেই এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

আ্যালারজিক রিয়েক্সনঃ

এটি খুব কম মানুষের মাঝে দেখা যায়। নিতান্ত দূর ভাগ্যবান হলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পর আ্যালারজিতে আক্রান্ত হতে পারেন আপনি।

জিহবার উপর সাদা প্যাচঃ

জিহবার উপর সাদা ছোপের মত দেখা দিতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের পূর্বে নারীদের যা জানা উচিতঃ

দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে কমন কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াও মেয়েদের মাঝে আরও কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রতিটি নারীর জন্য অত্যন্ত জরুরী।

০১। যোনিতে চুলকানি বা স্রাবঃ

অ্যান্টিবায়োটিক এর কারণে vaginal yeast infection হতে পারে। কেননা অ্যান্টিবায়োটিক যোনিতে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলোকেও ধ্বংস করে। ফলশ্রুতিতে ইস্টগুলো দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে এবং ইস্টসেল যোনির মধ্যকার টিস্যু আক্রমণ করে। সাধারণত নিম্নলিখিত উপসর্গের একটি বা সবগুলো দেখা যায়। চুলকানি, জালাপোড়া, দৈহিক মিলনের সময় ব্যথা, স্রাব নির্গমন। এমনটি হলে দ্রুত চিকিত্সকের পরামর্শ নিবেন।

০২। জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ির কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়াঃ

আপনি যদি রিফামপিন বা গ্রিসিওফুলভিনের মত অ্যান্টিবায়োটিক অতিরিক্ত গ্রহণ করেন তবে তা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় বলে জানা গিয়েছে। এটি এমন এক হরমোন রিলিজ করে যা লিভারকে ইস্ট্রোজেন ভাঙার জন্য ইঙ্গিত করে আর ইস্ট্রোজেন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িতে থাকা একটি উপাদান, এটি ওভুলেসন প্রতিরোধ করে।

কোন কিছুর অতিরিক্ত প্রয়োগ ভালো নয়। বিশেষ করে ওষুধের ক্ষেত্রে। শারীরিক সমস্যা অনুভব করলে অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নিন। নিজেই নিজের ডাক্তারি করতে যাবেন না।

লিখেছেনঃ রোজেন

ছবিঃ হেলথট্যাপ.কম

1 I like it
1 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort