এতকাল ধরে তো জানতাম শাওয়ার জেল ও বডি ওয়াশ একই জিনিস! তাহলে, মাঝে আবার “ও” কেন? কি! টাইটেলটি পড়ে আপনিও কনফিউসড হয়ে যাননি তো? যদি মাথায় এমন কিছুই এসে থাকে তাহলে আজকের লেখাটি আপনার জন্যেই! স্কিন কেয়ারে কত কিছুই তো ব্যবহার করছি! প্রবলেম এর যেমন শেষ নেই, তেমনি তার সল্যুশনে মার্কেটে প্রোডাক্টেরও কমতি নেই। তাই বলে কি সব প্রোডাক্টই আমাকে ব্যবহার করতে হবে? না কিন্তু! আমরা শুধু সে সকল প্রোডাক্টই ব্যবহার করবো যা আমার জন্যে প্রয়োজন। স্কিন কেয়ারে সাবান, ময়েশ্চারাইজার, লোশন, ক্রিম, জেল এর পাশাপাশি খুব বেশি যে প্রোডাক্টটির নাম শোনা যায়, তা হলো শাওয়ার জেল ও বডি ওয়াশ। শাওয়ার জেল নাকি বডি ওয়াশ, কোনটি আপনার জন্য পারফেক্ট চয়েজ সেটা জেনে নিন তাহলে।
শাওয়ার জেল কী?
শাওয়ার জেল মূলত তরল সাবানের মতো যার ঘনত্ব অনেকটাই জেলির মতো, আবার থকথকেও হয়ে থাকে। এটি সাধারণত আমরা আমাদের শরীরের স্কিনে ব্যবহার করি। শাওয়ার জেলগুলো ওয়াটারি টাইপের হয়, প্রচুর ফেনা হওয়ার পাশাপাশি এটি হালকা সুগন্ধযুক্ত হয়ে থাকে।
বডি ওয়াশ কী?
বডি ওয়াশও একদম লিকুইড সাবানের মত, অনেকটাই পাতলা টেক্সচার এর হয়। স্কিনকে ক্লিন করার পাশাপাশি এটি আমাদের স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখতেও হেল্প করে। স্কিনে ড্রাইনেস এর প্রবলেম এর সল্যুশন হিসেবে কাজ করতে পারে বডি ওয়াশ। এটা স্কিনের পি এইচ ব্যালেন্সও ঠিক রাখে।
শাওয়ার জেল এবং বডি ওয়াশ এর মধ্যে পার্থক্য কী?
শাওয়ার জেল এবং বডি ওয়াশ এর মধ্যে পার্থক্য খুবই সুক্ষ। যদিও দুটোর মেইন কাজ একই। দুটোই আমাদের স্কিনকে ক্লিন করতে হেল্প করে। কিন্তু যে উপায়ে ক্লিন করে তাদের ধরণ একটি হতে অন্যটির আলাদা। তাই চলুন এদের মধ্যের পার্থক্যগুলো কী কী তাই জেনে নেয়া যাক চট করে।
- ছেলে, মেয়ে বা বেবী সকলেই শাওয়ার জেল এবং বডি ওয়াশ ব্যবহার করতে পারবেন। তবে, এর মধ্যে পার্থক্য দেখা যায় বিশেষ করে ইনগ্র্যাডিয়েন্ট এর মধ্যে।
- প্রথমেই যে পার্থক্যটি দেখবেন, সেটি হল এদের টেক্সচার। শাওয়ার জেল এর টেক্সচার বডি ওয়াশ এর তুলনায় অনেক বেশি ঘন এবং ফার্ম টেক্সচার। অনেকটাই জেলির মতন। অন্যদিকে বডি ওয়াশ একদম লিকুয়িড সাবানের মতন।
- ত্বককে ময়েশ্চারাইজড এবং হাইড্রেটেড রাখতে পারবে এমন অনেক উপাদান রয়েছে বডি ওয়াশ-এ। যেমন, পেট্রোলিয়াম জেলি বা মিনারেল অয়েল জাতীয় উপাদান।
- বডি ওয়াশ এর তুলনায় শাওয়ার জেলে তুলনামূলক ভাবে বেশি সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়।
- শাওয়ার জেল ব্যবহারে বডি ওয়াশ এর তুলনায় অনেক লম্বা সময়ের জন্যে রিল্যাক্স ফিল করা যায়। এবং এটি বডি ওয়াশ এর চেয়ে অনেকে বেশি সুদিং।
- রেগুলার ব্যবহারের জন্যে বডি ওয়াশ ব্যবহার করতে পারবেন সহজেই। তবে শাওয়ার জেল সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করলেই যথেষ্ট।
তবে জেনে রাখা ভালো
- ড্রাই স্কিন বা শুষ্ক ত্বক যাদের তারা চেষ্টা করবেন খুব বেশি সুগন্ধযুক্ত শাওয়ার জেল না ব্যবহার করতে।
- নরমাল স্কিন বা সাধারণ ত্বকের জন্য যেকোনো ধরণের শাওয়ার জেল ব্যবহার করতে পারেন নিশ্চিন্তে।
- অয়েলি স্কিন বা তৈলাক্ত ত্বক যাদের, তাদের জন্যে শাওয়ার জেল সর্বাধিক কার্যকরী। কারণ শাওয়ার জেল আমাদের স্কিনের অতিরিক্ত তেল সহজেই ক্লিন করে ফেলে এবং একটি রিফ্রেশিং ফিল দেয়।
শাওয়ার জেল এর বেনিফিটস
১) বডিকে প্রোপারলি এক্সফোলিয়েট করে
শাওয়ার জেল এ থাকা এক্সফোলিয়েটিং উপাদান আমাদের স্কিনে থাকা ডেড সেলস বা মৃত কোষ প্রোপারলি ক্লিন করতে সাহায্য করে।
২) বাবল বাথ প্রোডাক্ট এর পরিবর্তে ব্যবহার করা যাবে
হাতের কাছে বাবল বাথ প্রোডাক্ট না থাকলে এর পরিপূরক হিসেবে শাওয়ার জেল ব্যবহার করতে পারেন। যা আপনাকে খুবই সুদিং এবং আরামদায়ক একটি ফিল এনে দিবে।
৩) প্রয়োজনীয় অয়েল, সুগন্ধি এবং ভিটামিনের সংমিশ্রন
সুগন্ধির পাশাপাশি শাওয়ার জেলে পাওয়া যায় স্কিনের জন্যে প্রয়োজনীয় অয়েল এবং ভিটামিন। যেগুলো আমরা নরমাল কোন বার সোপ-এ একসাথে সাধারণত পাই না।
৪) স্বাস্থ্যসম্মত এবং হাইজিন মেইনটেইন করা যায়
শাওয়ার জেল একবার নিয়ে একবারই ব্যবহার করে ফেলা হয়। বোতলে সুন্দর ভাবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সংরক্ষণ করা হয় বলে, হাইজিন মেইনটেইন করে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায়।
৫) স্কিনকে সুদিং এবং রিফ্রেশিং ফিল দিতে হেল্প করে
যেহেতু শাওয়ার জেলে নানা রকম অয়েল এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়, তাই গোসলের পর আপনি আপনার স্কিনে খুবই আরামদায়ক সুদিং এবং রিফ্রেশিং ফিল পাবেন।
বডি ওয়াশ এর বেনিফিটস
১) স্কিনকে ক্লিন করার পাশাপাশি ময়েশ্চারাইজড রাখে
বডি ওয়াশ আমাদের স্কিনকে ভিতর থেকে পরিষ্কার করার পাশাপাশি ত্বকের ভিতরের আর্দ্রতা ধরে রাখে। এছাড়াও স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড এবং হেলদি রাখতে সাহায্য করে।
২) ক্ষারের পরিমাণ থাকে অনেক কম
বডি ওয়াশের সব চেয়ে বড় সুবিধা হল, সাবান বা সোপ বারের তুলনায় এতে ক্ষারের মাত্রা অনেক কম থাকে। তাই এটি স্কিনের জন্যে একদমই ক্ষতিকারক নয়।
৩) সংরক্ষনে ঝামেলা কম এবং সহজেই ব্যবহার করা যায়
বডি ওয়াশ ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এটি সংরক্ষণে আলাদা কোন ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়না। এছাড়াও, যখন তখন ব্যবহার করা যায়। এমনকি বাইরে কোথাও গেলে সহজেই সাথে ক্যারি করা যায়।
৪) স্কিনকে ড্রাই করে না
অনেকের স্কিন খুব অল্পতেই ড্রাই বা শুষ্ক হয়ে যায়। যেহেতু, বডি ওয়াশ স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড এবং হেলদি রাখতে সাহায্য করে তাই যাদের ড্রাই স্কিন তাদের জন্যে বডি ওয়াশ হতে পারে রাইট চয়েজ।
৫) প্রতিদিন ব্যবহার করা যায়
বডি ওয়াশ যেহেতু সাবান বা সোপ বারেরই একটি লিকুইড ফর্ম। তাই, গোসলে যেমন আমরা প্রতিদিন সাবান ব্যবহার করতে পারি তেমনি, বডি ওয়াশও প্রতিদিন ব্যবহার করা যায়।
শাওয়ার জেল এবং বডি ওয়াশ ব্যবহারের নিয়ম কী?
যারা শাওয়ার জেল এবং বডি ওয়াশ ব্যবহারে একদমই নতুন, তারা অনেক সময় কনফিউজড হয়ে যান কীভাবে এগুলো ব্যবহার করবেন তা নিয়ে। অথচ, ব্যবহারের নিয়ম একদমই সহজ। প্রতিদিন গোসলে যেমন আমরা সাবান বা সোপ বার ইউজ করি তেমনি শাওয়ার জেল এবং বডি ওয়াশ ব্যবহারের নিয়মও খুবই সিম্পল। চলুন জেনে নেয়া যাক স্টেপগুলো।
স্টেপ ১
প্রথমেই গোসলের জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি নিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন, পানি যেন খুব বেশি গরম না হয়। খুব বেশি গরম পানি ব্যবহারে আমাদের স্কিন শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
স্টেপ ২
এবার আপনার চুল পরিষ্কার করা দিয়ে শুরু করুন। শ্যাম্পু, কন্ডিশনার যা যা প্রয়োজন তা দিয়ে চুল ভালোভাবে ক্লিন করে এবার শরীর ক্লিন করার জন্যে শাওয়ার জেল অথবা বডি ওয়াশ নিয়ে নিন।
স্টেপ ৩
দুই থেকে তিন চা চামচ শাওয়ার জেল অথবা বডি ওয়াশ আপনার ব্যবহিত স্পঞ্জ, লোফাহ বা পরিষ্কার কাপড়ে ঢেলে নিন। ভালোভাবে ফেনা তৈরি করুন।
স্টেপ ৪
এবার সার্কুলার মোশনে হাত, গলা এবং একে একে পুরো শরীর পরিষ্কার করে নিন।
স্টেপ ৫
শেষ স্টেপে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে পুরো শরীর ভালোভাবে ধুয়ে ক্লিন করে নিন।
তবে যারা বাথটবে গোসলের জন্যে শাওয়ার জেল অথবা বডি ওয়াশ ব্যবহার করবেন, তারা বাথটবটি পানি দিয়ে পূর্ণ করে তাতে ৩ থেকে ৪ চামচ শাওয়ার জেল অথবা বডি ওয়াশ দিয়ে ফেনা করে নিতে পারেন। অথবা প্রয়োজন অনুযায়ী এর চেয়ে একটু বেশি পরিমাণেও ব্যবহার করতে পারেন।
বেশ কিছুদিন ধরেই অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চাচ্ছিলেন কোনটি ভালো হবে, শাওয়ার জেল নাকি বডি ওয়াশ? দুটো প্রোডাক্ট-ই ভালো এবং দুটোর কাজই আমাদের স্কিনকে প্রোপারলি ক্লিন করা। আজকের লিখাটি মুলত এজন্যেই যেন, শাওয়ার জেল অথবা বডি ওয়াশ কেনার আগে নিজেরাই বুঝে নিতে পারেন কোনটি কোনটি আপনার ত্বকের জন্য প্রয়োজন! আশা করছি এ লেখাটি পরে শাওয়ার জেল এবং বডি ওয়াশ নিয়ে আপনাদের কিছুটা হলেও কনফিউশন দূর হবে। তবে যেটাই ব্যবহার করুন না কেন, শেষে ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
সবগুলো প্রোডাক্টই পেয়ে যাবেন সাজগোজে। অনলাইন শপিংয়ের জন্য শপ.সাজগোজ.কম আছে আপনার পাশে। আর যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত সম্ভারে আউটলেট থেকেও কিনতে পারবেন আপনার সেলফ কেয়ারের প্রোডাক্টগুলো। ভালো থাকবেন।
ছবি- সাজগোজ