মাইগ্রেনের অসহনীয় যন্ত্রণা কীভাবে কমানো যায়?

মাইগ্রেনের অসহনীয় যন্ত্রণা কীভাবে কমানো যায়?

migrain-pain

কাজের চাপে কিংবা মানসিক চাপে অনেকেরই মাথাব্যথা হয়। প্যারাসিটামল খেয়ে নিলে বা একটু বিশ্রামে সেটি ভালো হয়ে যায় বেশিরভাগ সময়। কিন্তু মাইগ্রেন নামের ভয়ানক মাথাব্যথা মোটেও সাধারণ মাথাব্যথা নয়। অথচ সাধারন মাথাব্যথা মনে করে অনেকেই দিনের পর দিন মাইগ্রেন-কে অবহেলা করেন। চলুন জেনে নেয়া যাক মাইগ্রেন সম্পর্কে জরুরী কিছু তথ্য।

মাইগ্রেন কী?

মাইগ্রেন মূলত একধরনের মাথাব্যথা। তবে সাধারণ মাথাব্যথার থেকে মাইগ্রেনের পার্থক্য হলো মাইগ্রেন-এ ব্যথা হয় মাথার একদিকে। অর্থাৎ মাইগ্রেন-এ আক্রান্ত হলে আপনার মাথার বাম কিংবা ডানদিকে ব্যথা হবে, আর অন্যদিকে তেমন কোনো ব্যথাই অনুভব করবেন না। মাইগ্রেন-এর ব্যথা হলে শব্দ, আলো এবং গন্ধের প্রতি সহনশীলতা কমে যায়। খুব অল্প শব্দ বা আলোয় অসহ্য অনুভূতি হয়।

কাদের হয়? কখন হয়?

বয়ঃসন্ধির আগে মেয়েদের থেকে ছেলেদের মাইগ্রেন হবার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও পরবর্তীতে ছেলেদের থেকে ২-৩ গুণ বেশি মেয়েদের মাইগ্রেন হয়। আবার অনেক মেয়েদের ক্ষেত্রে রজঃচক্র (menstrual cycle) শেষ হবার পর মাইগ্রেন-এ আক্রান্ত হবার হার অনেক কমে যায় বলেও দেখা গেছে। তবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মধ্যবয়সে (৩৫-৪০ বছর) মাইগ্রেন-এ আক্রান্ত হবার হার অন্য বয়সের থেকে অনেক বেশি।

মাইগ্রেন-এর কারণ

ঠিক কী কারণে মাইগ্রেন হয় তা পুরোপুরি জানা যায় নি। তবে এটি বংশগত বা অজ্ঞাত কোন কারণে হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আক্রান্ত ব্যক্তির বংশে মাইগ্রেন-এ আক্রান্ত অন্য কেউ রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হরমোনের প্রভাব রয়েছে বলেও কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে। এই কারণেই বিভিন্ন বয়সে নারী-পুরুষের আক্রান্ত হবার হারের পার্থক্য দেখা দেয়।

এর বাইরেও বিকট শব্দ, তীব্র আলো, প্রচন্ড গরম কিংবা বিশেষ কিছু খাবারের কারণেও মাইগ্রেন হতে পারে। জন্মবিরতিকরণ ওষুধ, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ভ্রমণ, ব্যায়াম, অনিদ্রা, অনেকক্ষণ টিভি দেখা, দীর্ঘসময় কম্পিউটার-এ কাজ করা, মোবাইলে কথা বলা ইত্যাদি কারণেও এ রোগ হতে পারে।

লক্ষণসমুহ

এ মাথাব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাইগ্রেন-এর মূল লক্ষণ মাথার এক দিকে ব্যথা হলেও ব্যথা শুরুর আগে থেকেই কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। অনেকের চোখে আলোর ঝলকানি দেখা দিয়ে শুরু হয় তারপর ধীরে ধীরে ব্যথা বাড়তে থাকে। আবার মাইগ্রেন-এর তীব্রতার উপরও লক্ষণের পার্থক্য দেখা যায়। তবে সবার এরকম হয় না। মাইগ্রেন-এর সাধারণ কিছু লক্ষণ-

  • আলো বা শব্দের প্রতি সহনশীলতায় পরিবর্তন
  • চোখের পেছন দিকে ব্যথা
  • বমি বমি ভাব
  • বমি

মাইগ্রেন এর লক্ষণসমুহ

চিকিৎসা

মাইগ্রেন সমস্যা চিরতরে দূর করার কোন উপায় এখনো আবিষ্কার হয় নি। তবে ব্যথা হলে তা কমানোর জন্য বেশ কিছু ওষুধ রয়েছে। সাধারণ প্যারাসিটামল-এও অনেকের ব্যথা কমে যায়, তবে ব্যথার তীব্রতা অনুযায়ী এসপিরিন, ডাইক্লোফেনাক, আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ব্যথার তীব্রতা অনুযায়ী ওষুধের ধরণ ও মাত্রা পরিবর্তন করা হয়। বমি ভাব নিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্টেমেটিল বা ভার্গন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে কোন ওষুধ খাওয়া উচিত সে ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনই কোন ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। মাইগ্রেন-এর ব্যথা হলে কোন ওষুধ খেতে হবে তা সাধারণত চিকিৎসক আগেই বলে দেন। সে অনুযায়ী চললেই হবে।

তবে ওষুধের পাশাপাশি মাইগ্রেন-এর ব্যথার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যথাসম্ভব অন্ধকার ও শব্দবিহীন পরিবেশে ঘুমানো, অন্তত কয়েক ঘণ্টা। যেহেতু মাইগ্রেন-এর ব্যথায় আলো ও শব্দের প্রতি সহনশীলতা অনেক কমে যায়, সেক্ষেত্রে খুব অল্প শব্দ বা আলোতেও ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

প্রতিরোধ

বয়সের সাথে মাইগ্রেন-এর তীব্রতা বা ঘন ঘন আক্রমণ কমে গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সারাজীবন মাইগ্রেন-এর ব্যথা হবার ভয় থেকেই যায়। কোনো প্রকার ওষুধ ছাড়াই একটু নিয়মানুবর্তী হলেই মাইগ্রেন-এর আক্রমণ অনেকটা কমিয়ে ফেলা সম্ভব। চলুন জেনে নেয়া যাক মাইগ্রেন প্রতিরোধের কিছু উপায়।

  • খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন যেমন, ডার্ক চকলেট, কফি, ইত্যাদি এড়িয়ে চলা ভালো।
  • জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি যারা সেবন করেন, মাইগ্রেন-এর ব্যথার প্রকোপ বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বড়ি সেবন বন্ধ করে দিতে হবে।
  • দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে হবে।
  • দীর্ঘক্ষণ যাবত টিভি দেখা, কম্পিউটার-এ কাজ করা, মোবাইলে কথা বলা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • অনিদ্রা জনিত সমস্যা বা রাত জাগার বাজে অভ্যাস থাকলে তা পরিবর্তন করতে হবে।
  • কড়া রোদ বা তীব্র ঠাণ্ডা পরিহার করতে হবে।
  • মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা (বিশেষ করে বমি হয়ে থাকলে), বিশ্রাম করা, ঠান্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা উচিত।
  • গর্ভাবস্থাতেও মাইগ্রেন-এর সমস্যা হতে পারে ঘন ঘন। সেক্ষেত্রে ডাক্তারকে প্রথমেই মাইগ্রেন-এর ব্যাপারে জানিয়ে রাখা দরকার।
  • হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে, জীবনের আনন্দকে উপভোগ করতে হবে।

আরো কিছু কথা-

মাইগ্রেন-এর ব্যথা সাধারণত মাথার যে কোন একপাশে হয়ে থাকলেও একবার ব্যাথা একপাশে শুরু হলে কিছুদিন পর অন্যপাশেও হতে পারে। অনেকেই আছেন সাইনুসাইটিস বা সাইনাস এবং মাইগ্রেন-এর ব্যথা মিলিয়ে ফেলেন। আদতে তা নয়, বরং দুটি সম্পুর্ন ভিন্ন অসুখ। তাই চিকিৎসা শুরু করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে যে আসলে কোনটি হয়েছে।

মাথা যখন আছে, ব্যথা তখন হবেই। কিন্তু মাথাব্যথা সবার হলেও মাইগ্রেন-এর তীব্রতা বেশীরভাগ মানুষকেই সহ্য করতে হয় না। মাইগ্রেনের ব্যথা যে সাধারণ মাথাব্যথা নয় আর এটি যে জীবন্ত অবস্থায় নরকের শাস্তির মতো, সেটি মাইগ্রেন-এ আক্রান্ত যে কেউ বিনা বাক্যে মেনে নেবেন। তাই নিজের সুবিধার জন্যই আশেপাশের মানুষকে মাইগ্রেন-এর ব্যাপারে সচেতন করাটা অত্যন্ত জরুরী।

 

লিখেছেন- ডাঃ মারুফা আক্তার

ছবি- সাটারস্টক

5 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort