ঢাকা টু মৈনটঘাট | কলাকোপা ও বান্দুরাও হয়ে যাক ট্যু্রের অংশ!

ঢাকা টু মৈনটঘাট | সাথে কলাকোপা ও বান্দুরাও হয়ে যাক ট্যু্রের অংশ!

মৈনটঘাট ভ্রমণ - shajgoj

ঢাকা মানেই সবুজহীন এক দালানকোঠার জঞ্জাল। যেখানে একদিন একটু লম্বা সময় পেলে কোথায় যাব, কোথায় যাব চিন্তা করতে করতেই সময় পার হয়ে যায়। এই যান্ত্রিক শহরে একদিনের জন্য হাফ ছেড়ে বাঁচার জন্য চিন্তা করলে সিনেপ্লেক্স-এ সিনেমা দেখা আর ক্যাফে বা কফি শপে যাওয়া ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই বললেই চলে। তবে যারা একদিনের জন্য হাফ ছেড়ে বাঁচতে চান, তাদেরকে আজ বলবো ঢাকার ঠিক পাশের অপরূপ সুন্দর এক জায়গার গল্প। আর সেই মনোরম জায়গাটার নাম ‘মৈনটঘাট’! লোকে আবার মিনি কক্সবাজারও বলে! কথা হবে ঢাকা টু মৈনটঘাট ট্যুর নিয়ে।

 

Sale • Bath Time, Pigmentation, Sun Protection

    ঢাকা টু মৈনটঘাট ট্যুর প্ল্যান

    তো কয়েকদিন ধরে মৈনটঘাট যাব যাব করছি কিন্তু সঙ্গী-সাথী পাচ্ছি না বলে যাওয়া হচ্ছিলো না। হঠাৎ করে বন্ধু জুনায়েদের সাথে ফেসবুকে কথা বলতে বলতে ঠিক হল যে আগামীকাল মৈনটঘাট ঘুরে আসি। তারপর কয়েক ঘন্টায় প্রায় ২০ জন রেডি হয়ে গেল! কিন্তু ঐদিকে যেহেতু যাব তাহলে শুধু মৈনটঘাট কেন? কলাকোপা আর বান্দুরার মহাদেব সাহার মিষ্টি না খেলে যে খুব অন্যায় হবে! তো আর কী? তৈরি হয়ে গেল ট্যুর কলাকোপা, বান্দুরা এবং মৈনটঘাট!

    ১. যাত্রা শুরুর স্থান

    ট্যুরের আগের রাতেই আমরা সবাই গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ডই মিলিত হবার স্থান ধার্য করলাম। পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় উপস্থিত থাকার কথা সকাল ৯ টায়। সবাই এসে পৌঁছালে যমুনা ডিলাক্স বাসে করে রওনা দিলাম আমরা!

    ২. প্রথমেই কলাকোপা

    দুইপাশে অপরূপ সুন্দর সবুজ ক্ষেত আর  নদী দেখতে দেখতে দেড় ঘন্টার বাস জার্নি করে যখন কলাকোপায় পৌছালাম, তখন মাথার উপর সূয্যিমামা রেগে আগুন!

    ঢাকা টু মৈনটঘাট ভ্রমণের অংশবিশেষ কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ি - shajgoj.com

    তার মধ্যে নেমে প্রথমেই আমরা কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ি আর বৌদ্ধমন্দির (যদিও বৌদ্ধ মূর্তির মাথা নাই এবং মন্দিরও ভাঙা, কথিত আছে যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বোমার আঘাতে এই পুরাতন মন্দিরটি ভাঙে) দেখে আন্দারকোটা দেখার উদ্দেশ্যে গ্রামের পাশ দিয়ে হাঁটা দিলাম।

    ঢাকা টু মৈনটঘাট ভ্রমণের সময় দেখা বৌদ্ধমন্দির - shajgoj.com

    তখন দেখি পুরা গ্রামটাই প্রাচীন স্থাপনায় সমৃদ্ধ। একটা দুইটা বাড়ি পরপরই পুরাতন স্থাপনা। তার মধ্যে জমিদার বাড়ি দেখে একটু যেতেই খুবই সুন্দর পুরাতন স্থাপনা যা তেলেবাড়ি নামে পরিচিত।

    ঢাকা টু মৈনটঘাট ভ্রমণে দেখা তেলেবাড়ি - shajgoj.com

    জায়গাটা অনেক বড় কিন্তু এখন এখানে আনসার ক্যাম্প তাই আর ভিতরে যাওয়া হয় নাই।  আর একটু পথ হাঁটা মাত্রই পাওয়া গেল সুন্দর ইছামতি নদী!

    ঢাকা টু মৈনটঘাট ট্যু্রের সময় দেখা ইছামতি নদী - shajgoj.com

    নদীর তীর ধরে একটু পথ এগুতেই দেখা গেল খুব অসাধারণ একটা সংস্কার করা বাড়ি যা রাধানাথ সাহার বাড়ি নামে পরিচিত। বর্তমানে আদনান নামে এক ভদ্রলোক কিনে এটাকে সংস্কার করেছে আর নতুন নাম দেওয়া হয়েছে আদনান প্যালেস। এই প্যালেস ঘুরে দেখতে প্রবেশমূল্য দিয়ে ঢুকতে হবে। আদনান প্যালেস ঘুরে তারপর ৩ বার রাস্তা ভুল করে পৌছালাম আন্দারকোটায়। আন্দারকোটা আবার খেলারামের বিগ্রহ মন্দির নামেও পরিচিত। সবদিক থেকে দেখতে একই রকম এই মন্দিরটির ভিতরে যাওয়া যায় না। মন্দিরটির পাশেই বিশাল পুকুর! প্রচলিত আছে, মাকে বাঁচাতে খেলারাম দাতা এই পুকুরে নেমেছিলেন। আর উঠে আসেন নি। এলাকাবাসীর এখনো বিশ্বাস যে খেলারাম একদিন ঠিকই ফিরে আসবেন। তারপর আমরা সবার শেষে গেলাম জজ বাড়িতে

    ঢাকা টু মৈনটঘাট ট্যু্রের সময় দেখা জজ বাড়ি - shajgoj.com

    এটা প্রাইভেট সম্পত্তি হওয়ায় জনসাধারণের প্রবেশের অনুমতি নেই। আমরা পরিচিত একজনের মাধ্যমে অনুমতি নিয়ে ঢুকলাম। খুব সুন্দর এই বাড়িটি দেখে আমরা ব্যাটারি চালিত অটো-তে করে রওনা দিলাম বান্দুরার উদ্দেশ্যে।

    ৩. এবার যাব বান্দুরা!

    কলাকোপা থেকে বান্দুরা অটো স্ট্যান্ড-এ নেমেই খোঁজ নিলাম বিখ্যাত মিষ্টির দোকান কোনটা? সবাই বলল- “মিষ্টি খেতে হলে মহাদেব সাহার মিষ্টি খান”।  গেলাম মহাদেব সাহার দোকানেই। দোকানে ঢুকে মালাইচপ দেখেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল! কিন্তু এর সব আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। কী আর করা! অন্যান্য দোকানে খোঁজ নিলাম, কিন্তু দুঃখের বিষয় সব দোকানেই মালাইচপ শেষ!  অভাগা যে মিষ্টি খেতে চায়, কেন তার সব শেষ হয়ে যায়! ইতোমধ্যে আমাদের জাফর ভাই মৈনটঘাট যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে। ভাইয়ের তাড়াহুড়াতে ভাঙা মসজিদে যাওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছি! কথিত আছে এই মসজিদটি গায়েবিভাবে এক রাতে তৈরি হয়! যাই হোক আর দেরি না করে আবার অটো চেপে রওনা হলাম মৈনটঘাট!

    ঢাকা টু মৈনটঘাট ট্যু্রের সময় দেখা বান্দুরা অটো স্টেশন - shajgoj.com

    ৪. সবশেষে মৈনটঘাট

    গ্রামের ভিতরের ছিমছাম অপরূপ সুন্দর সবুজে ঘেরা রাস্তা দিয়ে অবশেষে মৈনটঘাট গিয়ে পৌছালাম। তবে কলাকোপা, বান্দুরার প্রত্যেকটি গ্রাম, বাড়ি খুবই সুন্দর করে সাজানো এবং ছিমছাম। এমনটা আমি ঢাকার আশেপাশে অন্য কোন জেলায় দেখি নাই! বেলা ৩টার দিকে মৈনটঘাটে নামামাত্র এতো সুন্দর জায়গা দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম!

    মৈনটঘাট - shajgoj.com

    আর বলতে লাগলাম-“ঢাকার কাছে এতো সুন্দর জায়গা,আর আমরা এতো দিন কেন আসি নাই”। ঘাট থেকে নামার পরই আপনার চোখ যেদিকে যাবে ততদূর চোখে পরবে শুধুই পদ্মার ঢেউ। আর একপাশে বিশাল বালুর বিচ! এজন্যই সবাই একে বলে ‘মিনি কক্সবাজার’

    মৈনটঘাট এ স্টিমার - shajgoj.com

    কক্সবাজারের মত বড় বিচ না হলেও ঢাকার পাশে নিঃসন্দেহে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসার জন্য মৈনটঘাট অন্যতম সুন্দর জায়গা! পানির কাছে এসেই সবাই পানিতে নেমে গেল। কেউ আবার প্রকৃতির ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেল। এতক্ষণ যে প্রকৃতির মুগ্ধতায় দুপুরের খাবার না খেয়েই ঘুরছিলাম, সে আমাদের কারও মাথাতেই ছিল না! এবার তো পেটে টান পরেছে! তাই মৈনটঘাটের পাশেই পদ্মার ইলিশ দিয়ে সেইরকম ভুড়িভোজ সেরে নিলাম। তারপর আবার কিছুক্ষণ কেউ ছবি তুলে, রিল্যাক্সড হয়ে  রিভারবিচ-এ হেঁটে দেখলাম।

    মৈনটঘাট রিভারবিচ - shajgoj.com

    ৫. নৌকা ভ্রমন শেষে ঘরে ফেরা

    মৈনটঘাট এসে নৌকা ভ্রমণ না হলে কি হয়? তাই, যেই কথা সেই কাজ! সাথে সাথেই নৌকা ভাড়া করে সবাই মিলে রওনা দিলাম পদ্মার মাঝ বরাবর! যদিও আমরা নদী পাড়ি দিতে চাইলেও সময়ের অভাবে ঐপাড়ে আর যাওয়া হল না। নদীর মাঝে নৌকা দুলছে আর ব্লু-টুথ স্পিকার-এ হালকা আওয়াজে ভাটিয়ালি গান চলছে… এ যেন এক অনন্য পরিবেশ! ইচ্ছে করে সেই সময়টিকে যদি থামিয়ে দিতে পারতাম! কিন্তু সময়তো থেমে থাকে না।  ঝুপ করে সন্ধ্যা নামা শুরু হল। আমরা তাই দ্রুত পাড়ে ফিরে এলাম। যমুনা ডিলাক্স-এর সর্বশেষ ট্রিপ, সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ মিনিটের বাসে করে ঢাকা টু মৈনটঘাট ট্যুর শেষে আবার সেই ইট কাঠুরির ঢাকায় ফেরত আসলাম।

    ৬. রুট ডিরেকশন ও যাবতীয় খরচ

    ঢাকা টু মৈনটঘাট রুট - shajgoj.com

    ঢাকা টু মৈনটঘাট সরাসরি যেতে চাইলে গুলিস্তান থেকে যমুনা ডিলাক্স-এ চলে যাবেন! আর ভাড়া? মাত্র ৯০/- টাকা। ঢাকা থেকে যমুনা ডিলাক্স এবং এন মল্লিক দুইটা বাস সার্ভিস ঢাকার গুলিস্তান থেকে ছাড়ে।  আর কলাকোপা হয়ে যেতে চাইলে যমুনা ডিলাক্স অথবা এন.মল্লিক-এ গেলে ভাড়া ৬০/- টাকা। কলাকোপা থেকে বান্দুরা একা অটো ভাড়া ২০/- টাকা। আর রিজার্ভ নিলে ১০০/- টাকায় নেওয়া যায়। এক অটোতে ৮ জন যেতে পারবেন। বান্দুরা থেকে মৈনটঘাট একা অটো ভাড়া ৪০/- টাকা, রিজার্ভ নিলে ১৬০-২০০/- টাকায় পাওয়া যায়। আর বড় নৌকার ভাড়া ঘন্টা প্রতি ৬০০-৯০০/- টাকা। জানিয়ে রাখি, খাবারের দাম কিন্তু মৈনটঘাটে একটু বেশী।

    ব্যস্ত জীবনে একদিন ছুটি পেলে দূরে কোথাও চাইলেও যাবার উপায় নেই। ডে ট্যুর হিসেবে কম খরচে তাই মৈনটঘাটই আমার কাছে বেস্ট অপশন মনে হয়েছে। তো হয়ে যাক ঢাকা টু মৈনটঘাট ট্যুর, ঘুরে আসুন একবার। মাইন্ড ফ্রেশ হওয়ার তো দরকার আছে, নাকি?

     

    ছবি- বেদিশা

    1 I like it
    0 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort