মিনিমাম হেয়ার কেয়ার | একদম কিছুই কি করব না? - Shajgoj

মিনিমাম হেয়ার কেয়ার | একদম কিছুই কি করব না?

1

আমার মনে হত আমার একারই মনে হয় হোম রিমেডির বিভিন্ন সলিউশন, মানে কোন ত্বক, কোন চুলের জন্য আসলে কি ভালো কাজ করে সেটা বুঝতে সমস্যা হয়। কিন্তু আজকাল আমাদের বিভিন্ন পোস্টে রিডারদের কমেন্ট দেখে মনে হচ্ছে অনেকেরই  ঘরে থাকা জিনিসগুলো সব একত্রে মিক্স করে মেখে ফেলাটা ঠিক হবে কিনা সেটা নিয়ে অনেক অনেক প্রশ্ন আছে। আফটার অল অনেক সময় আমরা ফেসবুক খুলেই এই পেজ সেই পেজের হেয়ার অয়েল/ ফেস মাস্ক রেসিপি দেখি। যেখানে একেকটা রেসিপিতে ১০-১২ টা উপাদান ইউজ করা হয়। তাই না? রেসিপির উপাদান সংখ্যা দেখে হতভম্ব হয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। কিন্তু আসলেই ১০-১২ রকম দেশি বিদেশি তেল একত্রে মিশিয়ে মাখা অথবা ফল মূল সবজি সবকিছু দিয়েই মাস্ক বানিয়ে ফেলার কি দরকার আসলেই আছে?

[picture]

চলুন , সবকিছু একবারে বলার চেষ্টা না করে ধাপে ধাপে কথা বলি। চুলের ব্যাপারেই আসি আগে ? খুব কম কিছু উপাদান দিয়ে আমরা খুব বেশি হলে কেমন রেজাল্ট আশা করতে পারি বলুন তো ? ১/২ টা পিওর তেলই কি যথেষ্ট নাকি সব দাঁতভাঙ্গা জড়িবুটি চুলায় জ্বাল-টাল দিয়ে কামরূপ কাম্যাক্ষা থেকে পাওয়া রেসিপিতে চুল পড়ার অব্যর্থ সিক্রেট মলম তৈরি করতে না পারলে আপনি কোন রেজাল্টই পাবেন না…?

জানি এই পেজেই এ ধরণেরর খুব জটিল রেসিপি দেখে শুনে অনেকের এ ধরণেররই কিছু মনে হয়। কিন্তু চাচ্ছিলাম যারা ১৫ উপাদানের হারবাল রেসিপি দেখেই ভড়কে যান তাদের জন্য কিছু লিখতে।

খুবি সহজ কিছু টোটকার কথা বলব আজ, খুব কম সংখ্যক উপাদান ইউজ করে কীভাবে চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা যায় এবং ‘কেন’ এই পার্টিকুলার উপাদানগুলোর কথাই বলা হল এখানে সেটা জেনে নিই চলুন –

চুল পড়ার সমাধান :

মোটামুটি সবাই নিচের রেসিপিটি জানেন।

  • ক্যাস্টর অয়েল (১ চা চামচ)
  • নারিকেল তেল (১ চা চামচ)
  • রোজম্যারি এসেনশিয়াল অয়েল, অপশনাল (২ ফোঁটা)

জাস্ট মিক্স করে স্কাল্পে ম্যাসাজ করবেন। সপ্তাহে মিনিমাম ৩ বার ইউজ করবেন। মিনিমাম ২ ঘণ্টা চুলে রাখবেন। সবচেয়ে ভালো হয় সারারাত রেখে দিয়ে সকালে শ্যাম্পু করতে পারলে।

কী কী ভুল হতে পারে :

অনেকেকেই বলতে শুনি , ‘এতদিন ধরে ক্যাস্টর অয়েল দিচ্ছি কোন লাভ হয় না’ অথবা, ‘ক্যাস্টর আর নারিকেল তেল দিয়ে চুল আরও বেশি পড়ছে’ আসুন দেখে নিই, কিছু রিজন যেজন্য আপনি উল্টো ফল পাচ্ছেন-

  • পরিমাণে গণ্ডগোল

অনেকেই ১:১ রেশিওতে নারিকেল আর ক্যাস্টর ইউজ করেন না। মনে রাখতে হবে এটাই ক্যাস্টর অয়েলের ম্যাক্সিমাম রেশিও। এর থেকে বেশি ইউজ করা যাবে না।তাহলে শ্যাম্পু করে তেল দূর করতে পারবেন না। স্কাল্প আর চুল অয়েলি হলে ক্যাস্টর অয়েলের পরিমান এর থেকে কমিয়ে দেবেন। বাড়াবেন না। অয়েলি হেয়ারে নারিকেল তেল বেসি রাখলে অতিরিক্ত ক্যাস্টর অয়েল চুলের গরায় জমে থেকে চুল পড়ার পরিমান বাড়ার চান্স থাকে না।

  • বেশিক্ষণ রেখে দেয়া

অনেকেই তেল মেখে ২-৩ দিন চুলে রেখে দেন। মনে রাখতে হবে বেশিদিন রাখলেই বেশি ভালো রেজাল্ট পাবেন না। অনেককে আমি দেখেছি ৪ দিন ধরে নারিকেল তেল ক্যাস্টর অয়েল মিক্স করে মাথায় দিয়ে রেখে দিয়েছেন। তারপরে শ্যাম্পু করে দেখছেন গাদা গাদা চুল পড়ছে। অযথা তেল চুলের গোঁড়ায় রেখে নোংরা ময়লা জমা করাটাকে হেয়ার কেয়ার বলে না। সুতরাং নিয়ম ফলো করুন।

  • চুলে তেল মাখা

এই মিক্সচার মাথায় ইউজ করতে চাইলে শুধু স্কাল্পে ইউজ করবেন। চুলের বডিতে পিওর নারিকেল তেল দেবেন। ক্যাস্টর অয়েল দেবেন না। পুরো চুলে ক্যাস্টর অয়েল দিলে আধা বোতল শ্যাম্পু ইউজ করেও সেটা পুরোপুরি দূর করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না।

  • ক্যাস্টর অয়েলে চুল পড়া কমছে না

ক্যাস্টর অয়েল নারিকেল তেল চুলের গোঁড়ায় ফাঙ্গাস আক্রমণ দূর করে, চুলের গোঁড়ায় রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। রোজম্যারি অয়েল সরাসরি চুলের গোঁড়ার কোষ উজ্জীবিত করে চুলের ঘনত্ব বাড়াতে হেল্প করে। কিন্তু আপনার চুল পড়ার কারণ যদি অন্য কিছু হয়? তবে? যেমন আপনার কোন হেলথ প্রব্লেম আছে, রক্তে কোন পুষ্টির কমতি আছে, আপনার জেনেটিকালি এলপেশিয়া আছে। সেক্ষেত্রে বছরের পর বছর ক্যাস্টর অয়েল ইউজ করলেও আপনি কিন্তু কোন রেজাল্ট দেখবেন না। কারণ , গাছের গোঁড়া কেটে আপনি আগায় পানি দিচ্ছেন। সো if you never tried this remedy before ট্রাই করুন। কিন্তু যদি দেখেন কোন চেঞ্জ দেখছেন না, তাহলে মাথার বাকি চুলগুলো হারানোর আগে ডক্টর দেখান অবশ্যই প্লিজ। কারণটা খুঁজে বের করে তারপর সলিউশন খুঁজুন। উল্টোটা করবেন না।

 

ড্রাই ফ্রিজি চুলের সমাধান :

রেসিপি-

  • অলিভ অয়েল (১ টেবিল চামচ)
  • নারিকেল তেল (১ টেবিল চামচ)

নারিকেল তেল চুলের ভেতরে ঢুকে আদ্রতা বজায় রাখে। আর অলিভ অয়েল স্পেসালি যাদের চুল জন্মগতভাবে ড্রাই অথবা হিট স্টাইলিং বেশি করার দরুন ড্রাই তাদের জন্য খুবই ভালো কাজ করে। স্পেশালি আপনি যদি প্রায়ই চুলে ফ্ল্যাট আয়রন ইউজ করেন তাহলে কখনই এই তেলের ব্লেন্ড ইউজ না করে শ্যাম্পু করবেন না।

অতিরিক্ত তৈলাক্ত চুল এবং স্কাল্প :

রেসিপি-

  • তিলের তেল/ সিসেমি অয়েল (১ টেবিল চামচ)
  • নারিকেল তেল (১ টেবিল চামচ)

আমার চুল অয়েলি হওয়ায় আমি সবসময় এই রেসিপিটাই ইউজ করি। তিলের তেল আর নারিকেল তেলের সমান সমান রেশিও চুলকে জাস্ট যতটুকু দরকার তততুকুই ময়েশ্চারাইজ করে। কিন্তু ১-২ বার শ্যাম্পু করলেই চুল থেকে সম্পূর্ণ তেলের রেসিডিউ চলে যায়। চুল মাথার সাথে লেপটে থাকে না। এবং অনেক অয়েলি স্কিনের অধিকারীরা দেখবেন মাথায় তেল দিয়ে ওভারনাইট রাখলে কপালে ব্রণ/ হোয়াইটহেড দেখা দেয় , সেই প্রব্লেমটাও হবে না।

অলিভ, আমন্ড অয়েলের ভিড়ে তিলের তেল কেউ ইউজই করেন না। অয়েলি স্কিন যাদের তারাও একই অয়েলগুলো ইউজ করেন বলে তারা উল্টো চুলের আর ত্বকের ক্ষতি করে ফেলেন। সো আপনি যদি এমন কেউ হন যে অয়েলি চুলের যন্ত্রণায় চুলের যত্ন নেবেন কীভাবে বুঝতে পারছেন না , নারিকেল তেলের সাথে তিলের তেল মিক্স করে দেখুন একবার।

ফাটা চুলের সমাধান :

রেসিপি-

  • আরগান অয়েল (১-২ ফোঁটা)
  • নারিকেল তেল (১ ফোঁটা)

প্রতিবার শ্যাম্পু করার পরে জাস্ট তেলটুকু নিয়ে চুলের গোঁড়ায় হালকা হাতে ম্যাসাজ করে নিন। চুল তৈলাক্ত হলে আরগান অয়েলের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারেন। জানি কি ভাবছেন। না, আপনার চুলের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু তেল হালকা ম্যাসাজ করলে চুল অয়েলি হয়ে থাকবে না। বোঝাও যাবে না যে চুলে তেল আছে। জাস্ট আপনার চুলের জন্য কোন রেশিওটা কাজ করে সেটা আপনাকে চেষ্টা করে বার করতে হবে। আমি যে রেশিও বলেছি সেটা কোমর পর্যন্ত লম্বা চুলের জন্য। আর অয়েলি হেয়ার না চাইলে এর থেকে বেশি তেল নেবেন না। এটা ম্যাক্সিমাম তেলের পরিমাণ।

রিবন্ডিং / কালার করে সমস্যায় পড়েছেন?

সবাই জানেন এগুলো করলে চুলের অবর্ণনীয় ক্ষতি হবে। কিন্তু অনেকেই ঠিক মত বুঝে উঠতে পারেন না সেটা আসলে কতখানি! তারপর নিজের ফ্রাই হয়ে যাওয়া চুল দেখে কষ্টের সীমা থাকে না। অনেক ব্যস্ত নারী নিজের চুলের যত্ন নেয়ার সময় আছে কি নেই সেটা চিন্তা না করেই বিশাল কোন কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করে ফেলেন, আপনাদের জন্য নিচের রেসিপিটি-

  • ১ চা চামচ অলিভ অয়েল
  • ১ চা চামচ আমন্ড (almond) অয়েল
  • ২ চা চামচ নারিকেল তেল

সপ্তাহে ৩ বার অবশ্যই পুরো চুলে মেখে মিনিমাম ২-৪ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করবেন। চাইলে ওভারনাইট রাখতে পারেন। মনে রাখবেন তেল দিয়ে চুল ১০০ বার আঁচড়ানোর দরকার নেই/ টাইট করে বেনি/ খোপা করে ফেলবেন না। খুব হালকা হাতে তেল দেবেন, কোন রকম টানাটানি করবেন না চুল নিয়ে।

টিপস :

  • চুল পড়া এবং অন্য কোন সমস্যা থাকলে কি করবেন? চুলে ২/৩ নম্বর ব্লেন্ড ইউজ করে স্ক্যাল্পে ক্যাস্টর অয়েল ইউজ করতে পারেন।
  • কেন বাজারের ৬-৭ অয়েলের মিক্সচার যেগুলো বিভিন্ন ব্র্যান্ড বিক্রি করে সেগুলো ইউজ করতে না বলে আপনাদের আলাদা তেল মিক্স করে ইউজ করতে বলছি? সোজা ব্যাপার, আমি আজ পর্যন্ত তেলের মিক্সচার এমন একটিও পাইনি যেটায় সঠিক পরিমাণে পিওর নারিকেল তেলটাই একটু মিক্স করা হয়, অন্যান্য তেলের কথা তো বাদই দিলাম। বেশিরভাগ তেলে মিনারেল অয়েলে ট্রেস অ্যামাউনট অন্যান্য তেল মিক্স করে সেটা আপনার কাছে বড় বড় নামে বিক্রি করা হয়। না, আপনার চুলের সরাসরি কোন ক্ষতি এগুলো ইউজ করায় হবে না, কিন্তু যে রেজাল্ট আপনি চাচ্ছেন সেটাও পাবেন মোস্ট লাইকলি।
  • অনেকেই জানতে চান পিওর তেলের ব্র্যান্ড কোনগুলো?

বাজারে আমার জানা মতে যেসব ব্র্যান্ড নারিকেল তেল (অনলি নারিকেল তেল) সেল করে তারা সবাই পিওর তেলটাই সেল করে। নরমাল ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে আছে, প্যারাসুট, জুঁই ইত্যাদি। আর যদি অরগানিক ব্র্যান্ড খোঁজেন তবে বডিশপ রেইন ফরেস্ট/ স্কিনক্যাফে ট্রাই করতে পারেন। জাস্ট মনে রাখবেন, অরগানিক নন অরগানিক যাই ইউজ করেন না কেন, অ্যাটলিস্ট আসল তেল ইউজ করবেন। অমুক ১০ তেল তমুক ১৫ তেলের মিক্স কিনে নিয়ে আসার দরকার তেমন নেই।

অলিভ , আমন্ড, ক্যাস্টর এগুলোর জন্য কোন ব্র্যান্ড?

নাও (now), স্কিন ক্যাফে ব্র্যান্ডের অরিজিনাল তেলগুলো ইউজ করতে পারেন। অথবা ফার্মাসিতে খাওয়ার তেল (অলিভ, আমন্ড) পাওয়া যায় সেগুলো ইউজ করতে পারেন।

এবং জি হ্যাঁ, আপনি খাওয়ার তেল চুলে অথবা স্কিনে ইউজ করতে পারবেন।

কিন্তু, চুলের/স্কিনের তেল কিন্তু আপনি খেতে পারবেন না… ওকে?

জানি অনেকেই চুলের অনেক অনেক যত্ন নেন। অনেকে এঞ্জয় করেন নিজে নিজে অনেক কিছু মিক্স করে হারবাল তেল বানান অ্যান্ড ইউজ করার ব্যাপারটা। I have nothing against them কিন্তু মনে হল আজ যারা একেবারেই মিনিমাম কিছু করে চুলের যত্ন নিতে চান তাদের জন্য কিছু লিখি। এর থেকে বেশি কিছু করতে পারলে তো আরও ভালো। কিন্তু যদি না পারেন, সবাই অ্যাটলিস্ট এই মিনিমাম যত্নটুকু নিতে ট্রাই অবশ্যই করবেন প্লিজ। hope they work for you. আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টে জানাবেন। উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। আজ এ পর্যন্তই।

লিখেছেন – তাবাসসুম মিম

1 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort