হিট ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার করার কি কোনো উপায় আছে?

হিট ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার করার কি কোনো উপায় আছে?

IMG_0964

গোসল সেরে চটজলদি ঘর থেকে বের হওয়ার আগে আমরা হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নেই, আবার চুল সেট করতে স্ট্রেইটনার বা কার্লিং আয়রন ব্যবহার করি। এতে আমাদের লুকে চেঞ্জ ভিজিবল হলেও চুলের কিন্তু ক্ষতি হয়ে যায়। কারণ এই ধরনের হিট চুলের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। তাই বলে তো স্টাইলিং করা বন্ধ থাকবে না, তাই না? হিট টুলস ব্যবহার করেও চুলকে কীভাবে রক্ষা করা যায় তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর যদি হিটের কারণে হেয়ার ড্যামেজ হয়েই যায় তাহলে? আজ আমরা জানবো হিট ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার করার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে।

হিটের কারণে চুল কীভাবে ড্যামেজ হয়?

ব্লো ড্রাইয়ার, ফ্ল্যাট আয়রন ও কার্লিং আয়রনের মতো অনেক হিট টুলস আমরা কমবেশি সবাই ব্যবহার করি। নিয়মিত এগুলো ব্যবহারের কারণে চুল ড্যামেজ হতে পারে। কিছু হিট টুলসে টেম্পারেচার কন্ট্রোল করা যায় না। সেগুলোতে শুধু লো, মিডিয়াম ও হাই এই তিনটি বেসিক অপশন থাকে। কিছু টুলসে হয়তো কন্ট্রোল করা যায়, সেগুলোতে সর্বোচ্চ ৪০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা ওঠে। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন তাপমাত্রা যত বেশি হবে, তত ভালো স্টাইলিং করা যাবে। তবে এটা মোটেও সত্যি নয়। হাই হিট আপনার চুলের কেরাটিন স্ট্র্যান্ডের শেইপ বদলে দিতে পারে। ৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি তাপমাত্রা হলে চুলের ইলাস্টিসিটি কমে গিয়ে চুল দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং ড্যামেজের মাত্রা বেড়ে যায়।

হিট ড্যামেজ চুলের যত্নে করণীয়

হিট ড্যামেজের কারণে চুল তার ময়েশ্চার অনেকটাই হারিয়ে ফেলে। চুলে ৪% ফ্যাট, অয়েল ও পিগমেন্ট, ১৭% পানি ও ৭৯% কেরাটিন প্রোটিনসহ কয়েক ধরনের বন্ড থাকে। হিট অ্যাপ্লাই করলে চুলের ন্যাচারাল অয়েল স্ট্রিপ হয় এবং হেয়ার প্রোটিন স্ট্রাকচার বদলে যায়। অতিরিক্ত তাপমাত্রা পানি দ্রুত শুকিয়ে ফেলে, যেটা প্রতিটি স্ট্র্যান্ডের স্ট্রাকচারে এফেক্ট করে এবং কিউটিকল ক্র্যাক হয়ে যায়। যার কারণে চুলের আউটার লেয়ার আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

হেয়ার বন্ড কী ও কেন জরুরি?

আমাদের চুল স্ট্রং, ফাইব্রাস প্রোটিন কেরাটিন দিয়ে তৈরি। এই কেরাটিনে দুই ধরনের বন্ড আছে।

১) হাইড্রোজেনঃ এই বন্ডগুলো স্থায়ী নয়। তাই যখন হিট অ্যাপ্লাই করা হয় তখন চুলের স্টাইল বদলে যায়। এই বন্ড আমাদের চুলের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখে।

২) ডাইসালফাইডঃ এই বন্ডগুলো স্থায়ী। এগুলো চুলের শেইপ মেনটেইন করে। আমাদের চুলকে স্ট্রং রাখতে এবং ব্রেকেজ থেকে সুরক্ষিত রাখে এই বন্ডগুলো।

হেয়ার বন্ড চুলের শেইপ, স্ট্রেন্থ, ইলাস্টিসিটি ও শাইন ধরে রাখে। একবার এই বন্ডগুলো ভেঙে গেলে চুল রাফ ও ড্যামেজ হয়ে যায়, ভেঙেও যায়। হেয়ার ড্রাইয়ার, কার্লিং আয়রন, স্ট্রেইটনার, ব্লিচ বা কেমিক্যালের অতিরিক্ত ব্যবহারে ডাইসালফাইড বন্ড ভেঙে যায়। তখন চুল হারায় তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য। তাই এই বন্ড ধরে রাখা জরুরি।

এমন চুল কি রিপেয়ার করা সম্ভব?

মাত্রাতিরিক্ত হিট ব্যবহার চুলের এতটাই ক্ষতি করে ফেলে যে, তা রিপেয়ার করা অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। প্রতিদিন হিট টুলস ব্যবহার করলে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। হিট ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার একবারে করা সম্ভব নয়, এটা শুধু কন্ট্রোল ও মেনটেইন করা যায়। হিট ড্যামেজের কারণে যে প্রোটিন লস হয় সেটা প্রোটিন ট্রিটমেন্ট ও ডিপ কন্ডিশনিং এর মাধ্যমে রিস্টোর করা যায়। চুলের ন্যাচারাল গ্লস ও স্ট্রেন্থ রিস্টোর করার জন্য নিয়মিত স্ক্যাল্প ম্যাসাজ এবং সপ্তাহে অন্তত একবার চুলে তেল দিতে হবে।

অতিরিক্ত হিট ব্যবহারের কারণে হেয়ার ব্রেকেজ দেখা দেয়, যার কারণে চুলের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া কমে যায় চুলের ময়েশ্চার ও ইলাস্টিসিটি। হিট ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার করার কিছু উপায় সম্পর্কে চলুন জেনে নেয়া যাক।

হিট ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার করার উপায় 

নারিকেল তেল ব্যবহার করুন

অন্য যে কোনো তেলের তুলনায় নারিকেল তেল চুলকে পেনিট্রেট বেশি করতে পারে। এই তেলের মলিকিউলার স্ট্রাকচারের কারণে খুব অল্প হলেও হেয়ার শ্যাফট বেশ ভালোভাবেই ময়েশ্চারাইজড হয়। চুলে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করে শাইনি, হেলদি ও সফট করে তুলতে এই তেলের জুড়ি মেলা ভার! আর তাই হিটের ফলে চুলের হারিয়ে যাওয়া সজীবতাকে ফিরিয়ে আনতে এবং ড্রাইনেস কমাতে এই তেল বেশ কার্যকর। ড্রাইনেস কমিয়ে হেলদি ও শাইনি চুল পাওয়ার জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে দু’দিন কোকোনাট অয়েল ব্যবহার করুন।

হিট ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার করতে নারিকেল তেলের ব্যবহার

ভালো ব্র্যান্ডের টুলস ব্যবহার করুন

অনেকের পেশা কিংবা কাজের প্রয়োজনে প্রতিদিন চুলে হিট টুলস ইউজ করতে হয়। যদি নিম্নমানের টুলস ব্যবহার করা হয় তবে চুলের ক্ষতি হতে পারে। তাই ভালো ব্র্যান্ডের স্ট্রেইটনার, কার্লিং আয়রন, হেয়ার ড্রাইয়ার ও হেয়ার স্টাইলার ব্যবহার করতে হবে। হিট রেগুলেট করা যায় এবং চুল ছিঁড়ে যাওয়ার চান্স থাকে না এমন টুলস বেছে নিতে হবে। হেয়ার স্ট্রেইটনার কেনার আগে খেয়াল রাখতে হবে সেটিতে সিরামিক প্লেট আছে কিনা। কারণ সিরামিক প্লেট চুলকে সুরক্ষিত রাখতে হেল্প করে৷

চুলের জন্য সঠিক প্রোডাক্ট বেছে নিন

চুলকে সুরক্ষা দেয় এমন প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে। যেমন- কন্ডিশনার, হেয়ার সিরাম বা হেয়ার মাস্ক। এগুলো চুলকে এক্সট্রা নারিশমেন্ট দিবে। শ্যাম্পু করার পর হেয়ার সিরাম ব্যবহার করলে চুল অনেক শাইনি লাগে। এতে চুলের ফ্রিজিনেস অনেক কমে যায়। চুলে হিট দেয়ার আগে হিট প্রোটেক্টিং সিরাম ব্যবহার করে নিতে হবে। এটি চুলের উপর ব্যারিয়ার তৈরি করবে যা হেয়ার ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা কমাবে। হিট প্রোটেক্টিং স্প্রে ব্যবহার করে চুল ড্যামেজ হওয়ার রিস্ক অনেকটা কমে যায় এবং চুল ড্রাই হয়ে যায় না। তাই চুলে হিট দেয়ার আগে কোনোভাবেই হিট প্রোটেক্টিং স্প্রে ব্যবহার করতে ভুলে যাওয়া যাবে না৷

হিট টুলস ব্যবহারের আগে চুল শুকিয়ে নিন

অনেকেই খুব প্রেশার দিয়ে স্ট্রেইট বা কার্ল করেন যা চুলের গোড়াকে নরম করে এবং চুলকে ফ্রিজি করে দেয়। তাই এই কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আবার অনেকের ধারণা আছে যে, স্টাইলিং করার জন্য ভেজা চুলেই হিট টুলস ইউজ করতে হয়। এটাও ভুল ধারণা। এতে হেয়ার ড্যামেজ হতে সময় লাগে না। তাই হেয়ার স্টাইল করার জন্য যে কোনো ধরনের হিট টুলস ব্যবহারের আগে অবশ্যই চুল শুকিয়ে নিতে হবে।

চুল শুকিয়ে নেয়া

প্রোটিন ট্রিটমেন্ট নিন

চুলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রোটিন৷ তাই মাসে একবার প্রোটিন ট্রিটমেন্ট নেয়ার চেষ্টা করুন। এই ট্রিটমেন্ট যে পার্লারে গিয়েই নিতে হবে এমন না, ঘরেই তৈরি করে ফেলা যায় প্রোটিন প্যাক৷ তার জন্য ঘরে শুধু ডিম, টকদই, মধু থাকলেই যথেষ্ট৷ মাসে অন্তত ১ বার এই ট্রিটমেন্ট নিলে হেয়ার ব্রেকেজ কমবে, চুল হয়ে উঠবে সিল্কি ও শাইনি।

হেয়ার ট্রিমিং করুন

হিটের কারণে চুলের আগা ফেটে যায়৷ তাই ২/৩ মাস পরপর চুল ট্রিম করতে হবে৷ তা না হলে ধীরে ধীরে চুল আরো ড্যামেজ হয়ে যাবে। যা রিপেয়ার করা কঠিন হতে পারে৷

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন

চুলের সুস্থতায় খাবারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। কারণ খাবার শরীরের ভেতর থেকে চুলে পুষ্টি যোগায়৷ ড্যামেজ হয়ে যাওয়া চুলকে রক্ষা করতে আমাদের খাবারের প্রতি নজর দিতে হবে। খাবারের তালিকায় রোজ প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখতে হবে৷ ডাল, গাজর, টমেটো, মাছ/মাংস, ডিম, ওটস, পনির ইত্যাদি চুলের জন্য উপকারী৷ স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পাওয়ার জন্য এসব খাবার নিয়মিত খেতে হবে৷

 

এই তো জানিয়ে দিলাম হিট ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার কীভাবে করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আশা করি আর্টিকেলটি হেল্পফুল ছিল। অথেনটিক হেয়ার কেয়ার, স্কিন কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্ট কিনতে পারবেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র‍্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।

ছবিঃ সাজগোজ

1 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort