চুলের যত্নের প্রাচীন ইতিহাস - Shajgoj

চুলের যত্নের প্রাচীন ইতিহাস

hair care2

এখনকার দিন এ চুলের যত্ন মানেই আমরা বুঝি, চকচকে বোতলে ভরা শ্যাম্পু, কনডিশনার, সিরাম, জার ভর্তি হেয়ার মাস্ক বা পার্লারে গিয়ে কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট। কিন্তু ১০০ বছর আগেও কি এরকম ছিল? বা তারও আগে? কেমন ছিল প্রাচীন কালের চুলের যত্নের নিয়ম কানুন? চলুন তো জেনে নেই।

জাপান এবং চায়না

এশিয়ার এই অংশে ক্যামেলিয়া অয়েল-এর ব্যাপক চাহিদা ছিল প্রাচীন সময়ে। ভিটামিন এ, বি, সি ও ই সমৃদ্ধ এই তেল ছিল জাপান ও চায়নার নারীদের ঘন কালো চুলের মূল রহস্য। জাপানে এই তেল প্রচলিত Tsubaki (সুবাকি) নামে আর চীনে একে বলা হয় টি-সিড অয়েল। এর ব্যবহার যে একবারেই ফুরিয়ে গেছে তা কিন্তু নয়, এখনো জাপানে এই তেলটি ব্যবহার করা হয়। বেশ নামি জাপানী ব্র্যান্ড এখনো তাদের প্রোডাক্ট-এ এই তেলের নির্যাস ব্যবহার করে থাকে।

পশ্চিম আফ্রিকা

সাবান বললেই আমরা সাধারণত বুঝি, ঝকঝকে সাদা বা হালকা কোন রঙের সাবান। কিন্তু আফ্রিকাতে চুল ধোয়ার জন্যে ব্যবহার হত এক ধরনের কালো সাবান, যা কিনা তৈরি হত নারকেল, পাম অয়েল, কোকো পড আর কাঁচা কলার খোসা দিয়ে। এটি চুলের স্ক্যাল্প-কে পরিষ্কার  করতো কিন্তু ওভার ড্রাই করতো না।

ভারত

ভারতবর্ষের মেয়েদের ঘন কালো চুলের প্রশংসা সারা পৃথিবী জুড়েই রয়েছে। সেই প্রাচীনকাল থেকে সেখানে ব্যবহৃত করা হয় নারকেল তেল। নারকেলকে কিন্তু ‘ইন্ডিয়ান নাট’-ও বলা হত। খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০-তে নারকেল আবিস্কৃত হয় বলে শোনা যায়। নারকেলের দুধ ফুটিয়ে জ্বাল দিয়ে নারকেল তেল তৈরি করা হত। পরম যত্নে বিলি কেটে স্ক্যাল্পসহ পুরো চুলে তেল দেয়াটা সেখান থেকেই যে এসেছে। ন্যাচারাল সানস্ক্রিন, ময়েশ্চারাইজার ও কন্ডিশনার হিসেবে চুলের যত্নে ভুমিকা রাখার মত তেল হিসেবে নারকেল তেলের আর কোন তুলনা আসলেই হয় না! এছাড়াও ব্যবহৃত হত আমলকীর তেল। এই তেলের গুণ বলে শেষ করা যাবে না। চুল ঘন করা, চুলকে কালো করা, দ্রুত বৃদ্ধি করা- কি নেই এতে। আর চুল ধোয়ার জন্যে ব্যবহার হত শিকাকাই। শিকাকাই চুলের খুশকি দূর করে, চুল সাদা হয়ে যাওয়া কমিয়ে আনে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এখনো অনেক হারবাল শ্যাম্পু খুঁজে পাওয়া যাবে, যার মূল উপাদান হল শিকাকাই। আপনি নিজেই বানাতে পারবেন এই শ্যাম্পু।। শিকাকাই আর রিঠা সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে সেটা ফুটিয়ে নিয়ে ঐ পানিটা দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। শ্যাম্পুর চেয়ে কম নয় বরং বেশিই কাজে দেবে।

মিশর

প্রাচীন মিশরে কদর ছিল হেনার। তখন হেনা ব্যবহার করা হত চুলকে একটা লালচে রঙ দেয়ার জন্য। তবে চুলকে রঙ করা ছাড়াও, হেনার রয়েছে আরও অনেক গুণাগুণ। যেমন ড্যামেজ চুলকে সারিয়ে তোলা, চুলে প্রাণ ফিরিয়ে আনা ও চুলের গোঁড়া শক্ত করা। এছাড়াও হেনা মাথার স্ক্যাল্প-এর জন্যে অনেক ভালো কাজে দেয়।

মরক্কো

মরক্কোতে এক ধরনের গাছ পাওয়া যায়, যা পৃথিবীর আর কোথাও খুব একটা জন্মায় না। সেটা হল আরগান প্ল্যান্ট। এর থেকে তৈরি তেল মরক্কোর নারীরা ব্যবহার করে আসছেন সেই বহুকাল থেকে। কালের বিবর্তনে সেই তেলের গুণাগুণ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। এখন আপনিও চাইলে সেই তেল ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু দেখতে হবে তেলটা আসল কিনা।

এই ছিল বিভিন্ন দেশে কিভাবে প্রাচীন কালে চুলের যত্ন হত সেইসব কথা। এভাবে খুঁজতে গেলে দেখবেন অ্যালোভেরা, হেনা, শিকাকাই, রিঠা, বিভিন্ন রকম তেল- এই জিনিস গুলোই ব্যবহার হত চুলের যত্নে। তবে সে সময়েও যে অদ্ভুত উপায়ে চুলের স্টাইলিং হত না , তা কিন্তু না! শোনা যায়, রেনেসাঁর সময়ে টিকটিকি অলিভ অয়েল-এ সেদ্ধ করে সেই তেল মাথায় দেয়া হত! তাতে কি উপকার হত তা অবশ্য জানি না। আবার ১৭০০ শতকের দিকে চুলকে সেট করতে ব্যবহার হত প্রাণীর চর্বি! ভাবা যায়??

পরের কোন লেখায় আবার আসবো প্রাচীন কালের হেয়ার কেয়ার প্যাক নিয়ে। ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন।

 

লিখেছেন- মাহবুবা মিমি

ছবি- সাটারস্টক

12 I like it
2 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort