শিশুর জন্মগত হৃদরোগ | এর কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা কী হতে পারে?

শিশুর জন্মগত হৃদরোগ | এর কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা কী হতে পারে?

Thumbnail

একটি শিশুর জন্ম থেকেই হৃদযন্ত্রের কোনো গঠনগত বা কার্যগত ত্রুটি থেকে থাকলে তাকে শিশুর জন্মগত হৃদরোগ বলে। মাতৃগর্ভে ভ্রূণের বৃদ্ধির সময় হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক বিকাশের ফলে এটি ঘটে। শিশুর জন্মগত হৃদরোগ বা কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ (Congenital Heart disease/CHD) হল সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটি, যা বিশ্বব্যাপী জন্ম নেওয়া প্রতি ১০০ শিশুর মধ্যে প্রায় ১ জনের হয়ে থাকে। এই ধরনের ত্রুটির ফলে হৃদযন্ত্রের মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহের ধারা পরিবর্তন হতে পারে। কিছু কিছু জন্মগত হার্টের ত্রুটি কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না, বয়সের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যায় ,তবে কিছু ক্ষেত্রে জটিল কোনো ত্রুটি থাকলে প্রাণ নাশের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। ছোট্ট শিশুর এই রোগ সম্পর্কে তাই চলুন জেনে নেই বিস্তারিত।

শিশুদের জন্মগত রোগ

শিশুর জন্মগত হৃদরোগ এর লক্ষণ ও উপসর্গ সমুহ

কখনো কখনো শিশু প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত জন্মগত হৃদরোগের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যায় না। আবার কখনো কখনো শিশুর জন্মের কিছু সময়ের মধ্যেই কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। যেমন,

  • রক্তে অপর্যাপ্ত অক্সিজেনের কারণে ত্বক, ঠোঁট ও নখ নীলাভ বা ধূসর বর্ণ ধারন করে। একে সায়ানোসিস বলে।
  • মায়ের দুধ খাওয়ার সময় শিশু হাঁপিয়ে যায়, ক্লান্ত হয়ে যায়, শ্বাসকষ্ট হয়, শরীর অতিরিক্ত ঘেমে যায়। শিশু নীল হয়ে যেতে পারে।
  • ওজন বৃদ্ধি না হওয়া বা শিশু দিন দিন দুর্বল হয়ে যাওয়া।
  • পায়ে, পেটে বা চোখের চারপাশে ফোলাভাব।
  • শিশু সবসময় পরিশ্রমে দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
  • অনিয়মিত ও দ্রুত হৃদস্পন্দন।
  • ঘন ঘন ফুসফুসের ইনফেকশন।
  • একটু বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বুকে ধড়ফড় করা, অজ্ঞান হওয়া বা মাথা ঘোরা।

ডাউন সিনড্রোম হতে পারে এই রোগের কারণ

জন্মগত হৃদরোগ যে কারণে হতে পারে

জন্মগত হৃদরোগ ভ্রূণের বিকাশের সময় ঘটে এবং প্রায়শই জেনেটিক ও পরিবেশগত কারণগুলোর সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়। যদিও অনেক ক্ষেত্রে CHD এর সঠিক কারণ অজানা থেকে যায়, তবে কিছু সাধারণ ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে,

১) পরিবারে বা বংশে কারো জন্মগত হৃদরোগ থেকে থাকলে নতুন শিশুরও জন্মগত হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

২) কিছু জেনেটিক রোগ যেমন ডাউন সিনড্রোম, CHD এর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

৩) গর্ভাবস্থায় ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন ও কিছু কিছু ওষুধ সেবন শিশুর জন্মগত হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৪) গর্ভাবস্থায় মায়েদের কিছু সংক্রামক রোগ, যেমন রুবেলা, CHD-এর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

৫) গর্ভাবস্থায় বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শে থাকলে শিশুর নানা রকম জন্মগত ত্রুটি হতে পারে। জন্মগত হৃদরোগের ক্ষেত্রেও এটি ভূমিকা রাখতে পারে।

নিয়মিত টিকা দিন

এই রোগ প্রতিরোধের উপায় যেগুলো হতে পারে

জেনেটিক কাউন্সেলিং

পরিবারে পূর্বে কারো জন্মগত হৃদরোগের ইতিহাস থেকে থাকলে নতুন করে পরিবার পরিকল্পনা করার আগে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে জেনেটিক কাউন্সেলিং করা প্রয়োজন।

প্রসবপূর্ব যত্ন

গর্ভাবস্থায় নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন সময়ে অ্যানোমালি স্ক্যান এর মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর গর্ভকালীন কোনো ত্রুটি ধরা পরলে অনেক সময় আগে থেকেই পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রস্তুত থাকা যায়, প্রয়োজনে মেডিকোলিগ্যাল এবরশন পর্যন্ত করা যায়। গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল, তামাক ও কিছু ওষুধ এড়িয়ে চলা ঝুঁকি কমাতে পারে।

নিয়মিত টিকা দেয়া

রুবেলা সহ যাবতীয় সংক্রামক রোগের টিকা গর্ভধারনের আগে থেকে নিয়ে থাকলে শিশুর হৃদরোগসহ আরও নানারকম জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করা যায়।

স্বাস্থ্যকর জীবনধারা

সুষম খাদ্য ও নিয়মিত ব্যায়াম একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারার মূল চাবিকাঠি। এই ধারা বজায় রাখলে কিছু ক্ষেত্রে জন্মগত হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো যায়।

জন্মগত এই রোগের চিকিৎসা কী হতে পারে

এই জন্মগত হৃদরোগের চিকিৎসা রোগীর শারীরিক অবস্থা, এর তীব্রতা এবং রোগীর বয়সের উপর নির্ভর করে। কিছু ত্রুটি প্রায়শই শৈশবে সফলভাবে চিকিৎসা করে অনেকটাই ঠিক করা যায়। নিয়মিত কিছু ঔষধ সেবন ও ফলোআপে থাকলে শারীরিক অবস্থার উন্নতি-অবনতি বোঝা যায়। আবার কিছু হার্টের ত্রুটি শৈশবেই নিরাময় করার জন্য যথেষ্ট গুরুতর নাও হতে পারে, তবে বড় হওয়ার সাথে সাথে সেগুলো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তখন ওপেন হার্ট সার্জারি থেকে শুরু করে হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট এর মত গুরুতর অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

প্রাথমিকভাবে এই রোগ নিরাময় করা সম্ভব

শিশুর জন্মগত হৃদরোগ এমন একটি জটিল অবস্থা যা জন্ম থেকেই শিশুর জীবনে অনেক বড় প্রভাব ফেলে। এই রোগের লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধের কৌশল ও চিকিৎসা পথ জানা থাকলে প্রাথমিক পর্যায়েই সনাক্তকরণ এবং পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়। বর্তমানে রোগ নির্ণয়ের অভিনব পদ্ধতি এবং উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় ভালোভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। তাই কোনো শিশুর যদি জন্মগত হৃদরোগ থাকে তাহলে সারা জীবন তার বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হবে। কত ঘন ঘন চেকআপ করা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।

ছবিঃ সাটারস্টক।

3 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort