রিভিল দ্যা নেক! - Shajgoj

রিভিল দ্যা নেক!

neck

আমরা কমেবশি সবাই নিজেদের সৌন্দর্য নিয়ে বেশ সচেতন। প্রতিদিন কতবার যে আয়নায় নিজেকে দেখি, নিজের চেহারার সব খুঁটিনাটি বিষয় লক্ষ করি। ১টা ব্রণ বা দাগ দেখলে আমাদের চিন্তার শেষ থাকে না। ত্বকের যত্ন, চুলের যত্ন, হাত ও পায়ের যত্ন, কতশত ফেসপ্যাক, প্রোটিন ট্রিটমেন্ট আরও কত কিছুই করি। কিন্তু প্রায় সবাই ১টা জায়গার কথা একদম ভুলেই যাই, সেটা হল আমাদের গলা  ঘাড় ও বুকের যতটুকু অংশ ড্রেস পরলে দেখা যায় সেটার কথা। যার ফলে মুখের ত্বকের সাথে গলার ত্বকের রং আর স্কিনের ধরন আলাদা হয়। কতবার এমন হয়েছে যখন কোন পার্টি বা ফাংশনে একটু বড় গলার শখের ডিজাইনার ব্লাউজটা পরতে অস্বস্তি লেগেছে! এখন ডিজাইনার বা সিম্পল, শাড়িটা যেমনই হোক, ব্লাউজটা অবশ্যই গর্জিয়াস পরতে চায় সবাই। একটু লো-নেক বা ডিপ ভি-নেক কলারের ব্লাউজ পরলে গলার উন্মুক্ত অংশটার দিকে চোখ যাবেই।

এছাড়াও কিশোরী, তরুণীদের মাঝে এখন অফ-শোলডার ড্রেস বেশ জনপ্রিয়। এসব টপস বা ড্রেস যারা পরে তাদেরও নিজেদের নেকলাইনের যত্ন নেয়া মাস্ট। গলা থেকে শুরু করে বুক/ক্লিভেজ পর্যন্ত অংশের স্কিনকে বলা হয় Décolletage

[picture]

আজকে আমি লিখবো কেন বা কী করলে এখানকার স্কিন ড্যামেজ হতে পারে এবং কীভাবে আপনি নিজের গলা ও চেস্ট এরিয়ার স্কিনের যত্ন নিবেন যাতে করে আপনি সবসময়ই যেকোনো কাটের পোশাক পরতে পারেন।

ডিকোলেটাজ বা নেকলাইনের স্কিন কেন তাড়াতাড়ি ড্যামেজ হয়?

  • সবচেয়ে বড় কারণ হল বয়স, সূর্যের রশ্মি, স্কিনের শুষ্কতা এবং ডায়েট। বয়স বলতে বলছি না যে আপনার বয়স ৪০ পার হলে স্কিনের যত্ন নিবেন, ইনফ্যাক্ট ২০ এর পর থেকে নিয়মিত গলার ও বুকের যত্ন না নিলে ৪০ এ আসার অনেক আগেই স্কিন বুড়িয়ে যেতে পারে। এই অংশের ত্বকের স্তর এত নাজুক এবং পাতলা হয় যে সবার আগে এখানে বয়সের ছাপ পড়ে যায়।
  • বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিন ড্যামেজ হওয়া শুরু হয়। আমাদের বয়স যখন বাড়তে থাকে, ত্বকের মধ্যম স্তরের কোলাজেন এবং ইলাস্টিন ভেঙে যেতে থাকে। কোলাজেন আর ইলাস্টিন আমাদের ত্বকের সাপোর্ট সিস্টেম হিসেবে কাজ করে এবং এরা ত্বককে দৃঢ় রাখে যার ফলে বয়সের ছাপ পড়ে না। ত্বকের কোলাজেন আর ইলাস্টিন ভেঙে গেলে ত্বকের কোষগুলো ভিতরের দিকে ডেবে যায় এবং চামড়া কুঁচকে বলিরেখা পড়ে যায়।
  • সূর্যরশ্মি হল ডিকোলেটাজ এরিয়ার সবচেয়ে বড় শত্রু। এটা বয়সের ছাপ পড়ার প্রক্রিয়া দ্রুত করে দেয়। সূর্যরশ্মিতে থাকা আলট্রা-ভায়োলেট রে স্কিনের কোলাজেন আর ইলাস্টিনকে ভেঙে দেয়। আমরা বাহিরে গেলে মুখে আর হাতে সানস্ক্রিন মেখে বের হলেও কেউ গলা ও বুকের উন্মুক্ত অংশটার দিকে গুরুত্ব দেই না। যার ফলে অনেকেরই গলায়, ঘাড়ে ও পিঠে বাদামি ও লাল লাল ছোপ, শিরা ও বলিরেখা দেখা যায়। হাত-পায়ের ত্বকের চেয়ে এখানকার ত্বক পাতলা হওয়ায় সূর্যরশ্মি সহজেই ত্বকের ডারমিস নামক স্তর ভেদ করে যার ফলে বলিরেখা স্পষ্ট বোঝা যায়।
  • আমাদের খাদ্য তালিকায় ফাস্টফুড, প্রসেসড খাবার, ভাজাপোড়া ইত্যাদি বেশি কিন্তু ফলমূল, সবুজ শাকসবজি এবং আঁশযুক্ত খাবার কম থাকলে এর প্রভাব দেখা যায় আমাদের ত্বকে। পর্যাপ্ত পানি পান না করাও ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার আরেকটা কারণ।

চিন্তায় পড়ে গেলেন? চিন্তার একদম কোন কারণ নেই, খুব সহজ কিছু নিয়ম মেনে চললেই আপনার গলা ও তার নিচের অংশের স্কিন থাকবে একদম স্মুথ আর ইয়াং।

(১) বাহিরে গেলে সবসময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। আমরা ভাবি যে শীতকালে তো রোদ উঠে না, উঠলেও তা কড়া হয় না, আর এখানেই আমরা সবচেয়ে বড় ভুলটা করে থাকি। রোদের প্রখরতা যত বেশি বা কম হোক, অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব একরকমই থাকে। সুতরাং বাহিরে যাবার সময় অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না। আমরা সাধারণত লোশন অথবা ক্রিম বেজড যেসব সানস্ক্রিন ইউজ করি সেগুলোর Sun Protection Factor(SPF) খুব কম থাকে। এগুলো ৩/৪ ঘণ্টা পর পর আবার অ্যাপ্লাই করতে হয়। সুতরাং অনেক লম্বা সময়ের জন্য কোথাও গেলে ব্যাগে ১টা সানস্ক্রিন রাখতে হবে।

(২) খুব কড়া রোদে সানস্ক্রিন ছাড়া বেরিয়ে যদি পড়েনই, তাহলে ওড়না বা স্কার্ফ গলায় পেঁচিয়ে নিবেন যাতে রোদ না লাগে।

(৩) প্রচুর পানি পান করতে হবে। দিনে কমপক্ষে ৬-৮ গ্লাস অথবা ১.৫/২ লিটার পানি পান করলে ডিহাইড্রেশন হবে না এবং স্কিন সতেজ থাকবে।

(৪) বাহির থেকে বাসায় ফিরে মুখের পাশাপাশি গলা ও ঘাড়ের স্কিনে জমে থাকা ধুলা-ময়লা, তেল ও মৃত কোষ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। স্ক্রাব দিয়ে এক্সফলিয়েশন করতে হবে এবং এরপর ভাল ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।

(৫) ঘুমানোর পজিশনের উপর অনেক সময় স্কিনের কন্ডিশন নির্ভর করে। উপুড় হয়ে ঘুমালে বুকে বেকায়দা চাপ লেগে সেখানকার স্কিন ড্যামেজ হয়ে যায় সহজেই। সবচেয়ে সেফ স্লিপিং পজিশন হল চিত হয়ে ঘুমানো। পাশ ফিরে ঘুমালে লক্ষ রাখবেন মুখ অথবা বুকের কোন একপাশে যেন বেশি চাপ না লাগে।

(৬) হেলদি স্কিন পেতে হলে ময়েশ্চারাইজিং এর বিকল্প নেই। ত্বককে প্রয়োজন মতো হাইড্রেট না করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং তাড়াতাড়ি বলিরেখা পড়ে যায়। তাই গোসলের পর ভালো মানের লোশন ব্যবহার করুন।

(৭) হেলদি ডায়েট মেনে চলার অভ্যাস আপনার স্কিনে অভাবনীয় প্রভাব ফেলতে পারে। পরিমিত সুষম খাবার ত্বককে ভেতর থেকে রিপেয়ার করে। বেশি বেশি শাকসবজি এবং ফল খেলে শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেল থাকে, যা স্কিনের তারুন্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।

(৮) প্রতিদিনের কর্মব্যাস্ত জীবনে আমরা খুব কম সময়ই নিজের জন্য ব্যয় করি। আমাদের শরীরের সাথে সাথে আমাদের ত্বক ও টায়ার্ড হয়ে যায়। তাই ত্বকেরও বিশ্রামের দরকার আছে। আজকাল বিভিন্ন বিউটি স্যালনে স্পা অথবা ফেসিয়ালের মাধমে আমরা মুখের পাশাপাশি গলা ও বুকের যত্ন নিতে পারি।

(৯) রাত জাগার বদভ্যাস আমাদের স্কিনকে বুড়িয়ে তোলে। কারন আমরা যখন ঘুমাই, তখন আমাদের শরীর করটিসল নামের স্ট্রেস হরমোনকে প্রতিরোধ করে। করটিসলের পরিমান শরীরে বেড়ে গেলে তা ত্বকের কোলাজেন ও ইলাসটিনের স্তর ভেঙে দেয় যা পরবর্তীতে ত্বকে বলিরেখা ফেলে। তাই শরীরকে বিশ্রাম দিতে দিনে কমপক্ষে ৭/৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।

সুতরাং দেখতেই পারছেন, ডিকোলাটেজ এরিয়ার স্কিন সতেজ এবং সুন্দর রাখতে হেলদি এবং নিয়মমাফিক জীবনযাপনই যথেষ্ট। সানস্ক্রিন, ক্লিনজার, স্ক্রাব, ময়েশ্চারাইজার ইত্যাদি ব্যবহার এবং পরিমিত পানি পান ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে আপনি স্কিনে বয়সের ছাপ দূর করতে পারবেন।

ছবি -সাটারস্টক

লিখেছেন – ফারহানা হক অনি

 

 

 

 

 

 

 

 

2 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort