সোনামণির প্রথম স্কুলে যাওয়া - Shajgoj

সোনামণির প্রথম স্কুলে যাওয়া

AirBrush_20170711171107

প্যারেন্টিং খুব আপেক্ষিক একটা ব্যাপার । একেকজন একেকভাবে তার সন্তানদের হ্যান্ডেল করেন, কারণ প্রতিটা বাচ্চাই ভিন্ন, তাদের স্বভাব এবং ব্যক্তিত্বও ভিন্ন । জরুরী না যে আমার সন্তান যে পদ্ধতিতে একটা জিনিস শিখবে, আপনার সন্তানের উপর ও একই পদ্ধতিতে প্রয়োগ করলে আপনার বাচ্চাটা শিখে যাবে । তবুও প্যারেন্টিং এর বেসিক কিছু ব্যাপার আছে, যেটা কমবেশি সব বাবা-মা-ই করে থাকেন। প্রথম সন্তানের জন্মের পর কিন্তু বাবা-মায়েরও নতুন করে জন্ম হয় । বাচ্চাটার সাথে সাথে বাবা-মাও আস্তে আস্তে বড় হন, আমাদের বাচ্চাদের মতো আমরাও কিন্তু ভুল করতে করতে প্যারেন্টিং শিখি। আমার আজকের লেখাটি আমার মতো ভুল করে করতে করতে ধীরে ধীরে শেখা প্রথমবার প্যারেন্ট হয়েছেন এমন প্যারেন্টসদের জন্য ।

[picture]

সন্তানকে কবে স্কুলে ভর্তি করাবেন, সেই সিদ্ধান্ত শুধুই প্যারেন্টসের । তারাই জানেন তাদের সন্তানটি স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত কি না । তবে আমাদের দেশে সাধারণত বাচ্চারা ৩-৪ বয়স থেকে স্কুলে যাওয়া শুরু করে । স্কুলে যাওয়ার পর প্রথম যে সমস্যাটা হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটা হলো বাচ্চার স্কুলের প্রতি অনীহা এবং কান্নাকাটি । এই nagging-টা পোহাতে হয়নি এমন প্যারেন্টস বেশ কমই আছেন । স্কুলে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর কমপক্ষে মাসখানেক আগে থেকে বাচ্চাটাকে স্কুলে যাবার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করার চেষ্টা করাটা খুব জরুরী । আমার স্বল্প জ্ঞান আর ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকেই আজকের এই লেখাটা লিখছি । আমি বলছি না সবাইকেই এইসব মেইনটেইন করতে হবে । তবে যদি ভালো লাগে তবে অবশ্যই ট্রাই করে দেখতে পারেন ।

  • বাচ্চার ঘুমের রুটিন মেইনটেইন করা

কর্মদক্ষতার জন্য ভালো ঘুম কিন্তু বড় মানুষের জন্যেও খুব জরুরী । তো বাচ্চাদের জন্য তো এটা জরুরী হবেই, তাই না? বাচ্চার ঘুমের একটা রুটিন তৈরি করে ফেলার চেষ্টা করুন । আমি নিজে যেটা করতাম সেটা হলো রাত ৯টার ভিতর আমার বেবিকে ডিনার করিয়ে ব্রাশ করিয়ে আমার যত কাজই থাকুক না কেন, মশারী টানিয়ে সাড়ে ৯টার ভিতর সোজা বিছানায়, ফলে দেখা যেত কি আমার বেবি যতই দুষ্টুমি করুক না কেন, আমি লাইট ও জ্বালাতাম না এবং আল্টিমেটলি ও হার মেনে ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার ভিতর ঘুমিয়ে যেত । ফলাফল = সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টায় উঠে আমার বেবি আমাকে বলে- মা গুড মর্নিং! বাচ্চাদের early to bed, early to rise এই পদ্ধতি মেইনটেইন না করলে যেটা হয় সেটা হলো পরে স্কুলে ভর্তি করালে সকালে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হয় আর বাচ্চা স্কুলে না যাবার জন্য কান্নাকাটি করে । তাই ছোট অবস্থাতেই ঘুমের একটা রুটিন তৈরি করতে পারলে আপনার জন্যই ভালো হবে ।

  • ব্রেকফাস্ট অবশ্যই করতে হবে

বাচ্চা নাস্তায় কি খেতে পছন্দ করে এমন কিছু দরকার হলে আগের রাতে বানিয়ে রাখবেন যেন সকালে উঠে শুধু গরম করে অল্প করে হলেও খাইয়ে তারপর স্কুলে পাঠাতে পারেন । খালি পেটে ব্রেকফাস্ট স্কিপ করে স্কুলে চলে গেলে আধ-এক ঘণ্টার ভিতর প্যানপ্যান করার সম্ভাবনা কিন্তু প্রবল! কারণ বাচ্চারা তো আর বোঝে না যে তাদের পেট-টা খালি বলেই মেজাজটা খিটখিট করছে!

  • বইয়ের সাথে সখ্য

এই ইন্টারনেট আর স্মার্টফোনের যুগে বাচ্চাদের বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলা খুব কঠিন কাজ আমরা জানি । কিন্তু বই এর সাথে সখ্য তৈরি করার দায়িত্ব কিন্তু প্যারেন্টস-এরই । বাচ্চাকে একদম ছোটবেলা থেকেই বই কিনে দিতে হবে । বই পড়ে শোনাতে হবে । অনেকেই হয়তো বলবেন, ‘অনেক বই কিনি আপু, আমার বেবি তো ধুমধাম করে ছিঁড়ে ফেলে! আর কত বই কিনবো!’ কিন্তু বাচ্চা বই ছিঁড়ে ফেললেও তাকে আবার বই কিনে দিন, বাচ্চাদের কালারফুল বইগুলোর দাম ও কিন্ত খুব বেশি না । Immediately না হলেও eventually বেবি বইকে ভালোবাসতে শিখে যাবে । এবং যখন আপনি তাকে স্কুলে দিবেন তখন বই ওর কাছে কোন ভীতিকর এলিয়েন বস্তু হবে না ।

সোশ্যালাইজেশন

এখন আমরা সবাই খুব আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছি । প্রতিবেশির বাড়ি যাই না, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি যাওয়ার সময় বের করতে পারি না, উপরের ফ্লোরের ফ্ল্যাটে কারা থাকেন তাও জানি না । আর সেফটি ইস্যু তো আছেই । কিন্তু এতে করে আমাদের বাচ্চারা সোশ্যালাইজেশনের সুযোগ পাচ্ছে না । এমনিই একালে আমরা বাচ্চাদের সবুজ ঘাস আর খোলা মাঠ দিতে পারছি না। বিশেষ করে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির বাচ্চারা কারো সাথেই মেশার সুযোগ পায় না । সম্পূর্ণ একা একা বড় হবার কারণে দেখা যায় কি স্কুলে গিয়ে হঠাৎ করে এত্তগুলো নতুন মানুষ, আরো অনেক বেবি দেখে অনেক বাচ্চাই একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। তাই বাচ্চাদেরকে নিয়ে একটু কষ্ট করে হলেও আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশিদের বাড়িতে বেড়াতে যান । বাসার কাছে পার্ক থাকলে হাঁটাতে নিয়ে যান, রেস্টুরেন্টের প্লেজোনে ও নিয়ে যেতে পারেন যেখানে আরো বাচ্চারা খেলে । এইটুক সোশ্যালাইজেশন কিন্তু সব বাচ্চারই দরকার ।

  • কোয়ালিটি টাইম

বাবা-মা যত ব্যস্তই থাকুন না কেন, বাচ্চাদের জন্য কিছুটা কোয়ালিটি টাইম বের করুন যেখানে কোন ডিভাইসের ডিস্ট্র‍্যাকশন থাকবে না । সেই সময়টা তাকে নিয়ে গল্প করুন, স্কুলে গেলে কী কী হবে, ওর নতুন বন্ধু হবে, ও সবার সাথে খেলবে পড়বে এইগুলো গল্প করতে করতে গুছিয়ে বলুন যেন ওর কাছে স্কুলে যাওয়ার বিষয়টা ইন্টারেস্টিং হয়ে ওঠা ।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি । সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আর প্যারেন্ট-রা কিন্তু ডেমিগড না, আমরা সবাই ভুল করতে করতেই শিখি। best of luck for your kid’s first day at school!

মডেল – যারইয়াব ও ফারহানা প্রীতি

লিখেছেন – ফারহানা প্রীতি

1 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort