মাত্র ১ ঘণ্টায় একদম সাশ্রয়ী উপায়ে ৪টি সহজ ধাপে নিজেই করে নিন হেয়ার কালার - Shajgoj

মাত্র ১ ঘণ্টায় একদম সাশ্রয়ী উপায়ে ৪টি সহজ ধাপে নিজেই করে নিন হেয়ার কালার

Hair-Color-comparism

আর কিছুদিন পরই আসছে ঈদ। সবার কেনাকাটা ও নিশ্চয়ই শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদমে। ঈদের দিনটিতে নিজেকে সুন্দর এবং পারফেক্ট দেখানোর ইচ্ছে সবারই থাকে।এবং এই পারফেকশনের জন্য ঈদের আগে সবাই-ই  কমবেশি নিশ্চয়ই স্কিন এবং হেয়ার কেয়ার নিয়ে খুব ব্যস্ত। আমার কাছে আমার চুল  এবং চুলের অ্যাপিয়ারেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ,  কারণ আমার চুল যখন সুন্দর দেখায় না তখন  আমি লক্ষ্য করেছি আমি অনেক সময় নিয়ে মেকআপ করলেও, বা আমার পছন্দের রঙের  জামাটি পড়লেও কেমন  যেন অসম্পূর্ণ দেখায়। এবার ঈদের আগে আমি আমার চুলটা রঙ করাতে চেয়েছিলাম  এবং ট্রিম ও  করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমার পার্লারে যাওয়ার মতো সময় একেবারেই নেই। তাই বলে কি চুল রঙ করবো না? অবশ্যই করেছি। সেটা  ঘরে  বসেই এবং নিজের হাতে মাত্র এক ঘণ্টায়। হেয়ার  কালারিং এখন অনেকের কাছেই শখ এবং সময়ের প্রয়োজন দুটোই।চুলের রঙটা  নতুন করে  করলে চুল তো সুন্দর দেখায়ই, সেই সাথে আজকাল অনেকেরই অল্পবয়সে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা আছে যেটা অনেকেরই ভালো নাও লাগতে  পারে, তাই হেয়ার কালারিং করতে হয়।পার্লারগুলোতে সুন্দর করে হেয়ার কালার করা যায়। কিন্তু সেটা সময়সাপেক্ষ  এবং অনেকের কাছেই ব্যয়বহুল। আমি  আমার  চুলের দৈর্ঘ্যের কথা যদি  বলি তাহলে  পার্লারে বেসিক হেয়ার কালার করাতেই  আমাকে কমপক্ষে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার  টাকা গুণতে হবে।আজকে আমি নিজে যেভাবে ঘরে  বসে হেয়ার কালার করি, সেটাই স্টেপ বাই স্টেপ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি। চলুন তাহলে একনজরে  দেখে  নেয়া  যাক, বাসায়  বসে চুলকে সম্পূর্ণ নতুন একটা লুক দিতে হেয়ার কালারিং  করতে  চাইলে আপনার কী কী লাগবে –

 [picture]

(১) হেয়ার কালার (আপনার পছন্দ মতো ব্র্যান্ডের  এবং  চুলের  দৈর্ঘ্য  অনুযায়ী ,  আমি  গার্নিয়ার  কালার  ন্যাচারালসের  ৩.১৬ বার্গেন্ডি শেইড-টা ব্যবহার  করেছি,  মূল্য ১২৯/- টাকা মাত্র)

(২) আয়না

(৩) মোটা এবং চিকন দাঁতের চিরুনি

(৪) অনেকগুলো হেয়ারক্লিপ

(৫) পুরাতন টি শার্ট এবং তোয়ালে

(৬) একটি নন মেটালিক বাটি/প্লাস্টিকের অথবা কাঁচের বাটি

(৭) চুলে রঙ করার উপযোগী ব্রাশ এবং একটি পুরোনো পরিষ্কার টুথব্রাশ

(৮) ওয়েট ওয়াইপস / ভেজা টিস্যু

(৯) ভ্যাসেলিন

(১০) শ্যাম্পু

(১১) কন্ডিশনার

তো সব উপকরণ হাতের কাছে নিয়ে রেডি? তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

স্টেপ ১ : পূর্ব প্রস্তুতি

আমি আগের রাতে আমার চুল শ্যাম্পু করে পরিষ্কার করে রেখেছিলাম, কন্ডিশনার দেইনি, কারণ পরিষ্কার চুল ছাড়া চুলে ভালোভাবে কালার বসবে না। আমার  চুল কোমর অব্দি লম্বা।আমি  তাই গার্নিয়ার কালার ন্যাচারালস এর ৩.১৬ বার্গেন্ডি শেইডের দুটো প্যাকেট কিনে এনে রেখেছিলাম।প্যাকেটের ভিতর ইন্সট্রাকশন মেন্যুসহ চারটি জিনিস আছে – ডেভেলপার, কালারেন্ট, কন্ডিশনার এবং এক জোড়া হ্যান্ডগ্লাভস। আমি  হেয়ারলাইন, কানের পাশে ভ্যাসেলিন দিয়ে নিলাম কোটিং এর জন্য যেন হেয়ার কালার থেকে আমার স্কিন-টা প্রোটেক্টেড থাকে। আমি পুরোনো একটা টিশার্ট পড়ে নিয়েছিলাম আগেই যাতে রঙ লেগে গেলেও অসুবিধে নেই। সেই সাথে তার উপর ভালোভাবে একটা পুরাতন তোয়ালেও জড়িয়ে নিয়ে গলার কাছে ছোট একটা  পাঞ্চক্লিপ দিয়ে আটকে  দিলাম এবং হাতে  হ্যান্ডগ্লাভগুলো পরে নিলাম।

garnier hair color 3

স্টেপ ২ : হেয়ার কালার প্রিপেয়ারিং

এবার আমি একটা প্লাস্টিকের বাটিতে প্যাকেটের ভেতরে থাকা ডেভেলপার এবং কালারেন্ট এর টিউব খুলে ভালোভাবে হেয়ার কালারিং ব্রাশের সাহায্যে মিক্স করে নিলাম।এবার মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুলের জট ছাড়িয়ে তারপর চিকন দাঁতের  চিরুনি দিয়ে চুলগুলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করে ছোট ছোট হেয়ারক্লিপ দিয়ে আটকে নিলাম।

garnier hair color 2

garnier hair color 1

স্টেপ ৩ : হেয়ার কালার অ্যাপ্লায়িং

আমি পেছন থেকে সামনের দিকে কালারিং করাটা প্রেফার করি, তাই পেছনের চুল থেকে স্টার্ট করলাম। ছোট ছোট সেকশনে চুল নিয়ে হেয়ার কালারিং ব্রাশে হেয়ার কালার লাগিয়ে আস্তে আস্তে চুলের গোড়ার কাছ থেকে আগা পর্যন্ত কালার করতে শুরু করলাম।মাথার স্কাল্পে যেন হেয়ার কালার না লাগে সেদিকে সতর্ক  থাকতে  হবে। এভাবে ছোট ছোট সেকশনে অল্প অল্প করে চুল নিয়ে সব চুল আস্তে আস্তে কালার করে  নিলাম। আমার সামনের চুলগুলো লেয়ার করে কাটা, তাই  সামনের  চুল  বেশি  দেখা  যায়  বলে  আরেকবার  কালার  অ্যাপ্লাই  করলাম ।  সেই  সাথে  চুলগুলো চিরুনি দিয়ে সোজা করে আঁচড়ে নিলাম। এক আধটু কালার তো এদিক সেদিক স্কিনে লেগেছেই, সেগুলো ওয়েট ওয়াপস দিয়ে মুছে নিলাম। কালার করা শেষ হলে ঘড়ি ধরে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।

স্টেপ ৪ : ওয়াশিং অ্যান্ড কন্ডিশনিং

৩০ মিনিট শেষ হবার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে সুন্দর করে চুল ধুয়ে নিলাম। এবার পালা কন্ডিশনার লাগানোর যেহেতু আমি আগেই বলেছি আমার চুল লম্বা, তো আমার কন্ডিশনার ও একটু বেশি লাগে। আমি বেশ কিছুদিন ধরে গার্নিয়ারের আল্ট্রা ব্লেন্ড সিরিজের শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার  ব্যবহার করছি,  যেগুলো প্যারাবেন ফ্রি।এই মুহূর্তে ইউজ করছি ওদের রয়াল জেলি অ্যান্ড ল্যাভেন্ডার ফ্লেভারের অ্যান্টি   হেয়ার ফল  শ্যাম্পু  এবং  কন্ডিশনার।  তো চুলের  গোড়া বাদে  পুরো মাথার  সব চুলে  কন্ডিশনার লাগিয়ে নিলাম এবং ৭-৮  মিনিট  পর  ঠাণ্ডা  পানি দিয়ে  ভালোভাবে  চুল  ধুয়ে  নিলাম ।  তারপর  পুরানো  টিশার্ট  দিয়ে  চেপে  চেপে  চুল  মুছে  ফ্যানের  বাতাসে  চুল  শুকিয়ে নিলাম। All done!

আমার অভিজ্ঞতা :

  • আমার একটা ছোট বেবি আছে যাকে রেখে আমি কোথাওই যেতে পারি না ,  তাই  পার্লারে  গিয়ে  ঘণ্টাখানেক  সময়  নিয়ে  হেয়ার  কালার করাটা  আমার অপশনের  ভিতরেই পড়ে না। তাই বাসায় বসে হেয়ার  কালারিং  আমার  কাছে খুব  কনভেনিয়েন্ট একটা অপশন।
  • মার্কেটে অনেক ব্র্যান্ডেরই এবং অনেক শেইডের হেয়ার কালার আছে, আপনার বাজেট এবং কোয়ালিটি অনুযায়ী  আপনার কাছে যেটা  ভালো মনে হবে আপনি ইচ্ছেমতো সেটা কিনে নিতে পারেন।  আমাদের দেশে এখন যে হেয়ার কালারগুলো কিনতে পাওয়া যায় সেগুলোর  মধ্যে  আমার  কাছে গার্নিয়ারের  কালার ন্যাচারালস রেইঞ্জের প্রোডাক্টগুলো কোয়ালিটি, অনেকগুলো শেইডের অ্যাভেইলেবিলিটি এবং প্রাইসের দিক থেকে বেশ ভালো মনে হয়েছে। এই প্রোডাক্টগুলোতে অলিভ অয়েল এবং সুইট আমন্ড অয়েল যোগ করা  হয়েছে  যেন  চুলগুলো বেটার নারিশমেন্ট পায়। আমার  ব্যক্তিগত  পছন্দের হচ্ছে  বারগেন্ডি এবং মেহগনি শেইড দুটো।
  • সময় এবং খরচ দুটোই বেঁচে যাচ্ছে এবং আমি হেয়ার কালারিং, শ্যাম্পুইং এবং কন্ডিশনিং এর জন্য আমার পছন্দের প্রতিটা প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারছি যা আমার হেয়ার  টাইপকে স্যুট করে। এ মুহূর্তে আমার গার্নিয়ারের হেয়ার কেয়ার  রেইঞ্জের প্রোডাক্টগুলো বেশ স্যুট  করছে এবং ওগুলো একদমই  বাজেট ফ্রেন্ডলি। যেহেতু হেয়ার কালারিং-র পর প্রতিবার শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরী, এবং হেয়ার কালারিং এর কারণে চুল পড়ার প্রবণতা ও কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে,  তাই বাড়তি  সতর্কতা  হিসেবে আমি নিয়মিত স্কাল্পে অর্গানিক এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল ম্যাসাজ করছি, মাঝেমাঝে ডীপ কন্ডিশনিং হারবাল  প্রোটিন  প্যাক  (ডিম+টকদই+কলা)  লাগাচ্ছি এবং গার্নিয়ার আল্ট্রা ব্লেন্ডস রয়াল জেলি অ্যান্ড  ল্যাভেন্ডার অ্যান্টি হেয়ারফল শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার  ব্যবহার করছি।

দেখলেন তো? কত অল্প সময় এবং স্বল্প খরচে বাসায় বসে সহজেই হেয়ার কালারিং এবং তারপর চুলের নিয়মিত যত্ন  নেয়া যায়? শুধু প্রয়োজন  একটু  ধৈর্য  আর  একটু  সময় ।  তবে  আপনার  চুল  যদি  অনেক  ভঙ্গুর  আর  ড্যামেজড  হয় ,  এবং আপনার যদি হেয়ার কালারে  অ্যালার্জি  থাকে  তাহলে  হেয়ার  কালার  না  করাই  শ্রেয় ,  কানের  পেছনের  স্কিনে  কটনবাডে অল্প হেয়ারকালার লাগিয়ে আগে দেখে নিবেন কোন প্রকার ইরিটেশন হচ্ছে কিনা,  না হলে নিশ্চিন্তে   ব্যবহার করতে পারেন।

তো এই ঈদের আগে আপনারা ও কিন্তু বাসায় বসে এটা ট্রাই করতে পারেন, এবং ঈদে নতুন রাঙানো ঝলমলে উজ্জ্বল  চুলে সবাইকে  তাক লাগিয়ে দিতে পারেন। আপনার চুল আপনার পুরো লুকটাকেই বদলে দিবে that’s for sure!

Stay Beautiful, Stay Gorgeous.

লিখেছেন – ফারহানা প্রীতি

 

4 I like it
3 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort