আজকের সময়ের নারীরা তাদের সৌন্দর্য নিয়ে অনেক সচেতন।তারা সুন্দর এবং দীপ্তিময় ত্বক পাওয়ার জন্য বিউটি সেলুনে হাজার হাজার টাকা খরচ করতে পিছপা হন না।কিন্তু একটি কথা না বললেই নয় যে,এই কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের উপকারিতা স্বল্পমেয়াদী এবং অনেক ক্ষেত্রে তা ক্ষতিকারকও বটে।তাই আমরা নারীরা কি করতে পারি? প্রকৃতিমাতার দান গোলাপজল দিয়ে আমাদের সর্বাঙ্গীণ সৌন্দর্যের চর্চা করতে পারি।গোলাপ জল ত্বকের প্রশান্তি এনে দিতে পারে। সারা দিনের কর্মব্যস্ত শরীরকে ফুরফুরে করে তুলতে পারে। যুগ যুগ ধরে নারীর ত্বকের যত্নে গোলাপ জলের ব্যবহারের কথা জানা যায়। দাদি-নানিরা গোলাপ জলের বেশ গুণকীর্তন করবেন এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। গোলাপ জল হচ্ছে প্রাচীনতম রূপচর্চার উপাদান।কোমল ত্বকের জন্য এটি গোসলের পানির সঙ্গেও ব্যবহৃত হয়।আসুন জেনে নিই, গোলাপ জল কীভাবে আপনার ওপর বিষ্ময়করভাবে কাজ করে। গোলাপের সুবাস আপনার মনকে শান্তিময় করে দিতে পারে। এটি আপনার অনুভূতি এবং মনজগতের ওপর ভালো প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি, আপনাকে নিশ্চিন্ত করে তুলতে পারে।তাই আজকে আমি আলোচনা করবো গোলাপজল দিয়ে কিভাবে আপনি আপনার ত্বক,চুলের যত্ন নিতে পারেন।
-যাদের ত্বক তৈলাক্ত ও ব্রণ আছে, তারা প্যাক ধুয়ে ফেলে ময়েশ্চারাইজারের বদলে ব্যবহার করুন অ্যাসট্রিনজেন্ট। ঘরোয়া অ্যাসট্রিনজেন্ট হলো গোলাপজল ও শসার রস। এগুলো ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে নিলে আরও ভালো। গোলাপজল বরফ জমানোর পাত্রে রেখে আইস-কিউব করে নিতে পারেন। প্রতি রাতে রস একটি কিউব মুখে ঘষে নিন।
-ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কভাব কাটাতে মুলতানি মাটি, অলিভ অয়েল ও গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের শুষ্কতা ও খসখসে ভাব কমাতে এই মিশ্রণটির জুড়ি নেই।
-ত্বকের হারানো সজীবতা ফিরে পেতে মুলতানি মাটি, অ্যালোভেরার রস ও গোলাপজল একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন মিশ্রণটি তৈরি করে ব্যবহার করুন। এতে আপনার ত্বকের মলিনতা দূর হয়ে ত্বক হয়ে উঠবে সজীব ও সুন্দর।
– ত্বকের যত্নে নিয়মিত গোলাপজল ব্যবহার করলে ত্বকে ক্লান্তির ছাপ একেবারেই পড়ে না। আলট্রা ভায়োলেট রশ্মির কারণে ত্বকে হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতার যোগান দিতে গোলাপজলের বিকল্প নেই।এক্ষেত্রে ময়দা ও পাকা আমের তৈরী মিশ্রণে গোলাপজল মিশিয়ে মিশ্রণটি মুখে মিনিট পনেরো রেখে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন রোদ্রে পোড়া ত্বক ফিরে পেয়েছে তার হারানো পেলবতা ও উজ্জ্বলতা।
-প্রচণ্ড গরমের কারণে মুখে ক্লান্তির ছাপ পড়ে। গরম আবহাওয়ার মেজাজের সঙ্গে মোকাবেলা করে গোলাপজল দেয় তরতাজা আমেজ। ডাবের পানি, সামান্য গোলাপজল ও বরফ পানির সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে দেখুন, মুছে যাবে ক্লান্তির ছাপ।
-রোদের তাপ ছাড়াও ত্বকের শত্রু হিসেবে বিবেচিত হয় ধুলো ময়লা। আর এ ধুলো ময়লা দূর করে ত্বকের ক্লিনজিং হিসেবে বিবেচিত হয় গোলাপজল। আবার অত্যধিক পরিশ্রমের কারণে ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিক টিস্যু দুর্বল হয়ে গেলে ত্বকে ভাঁজ পড়ে যায়, যা বলি রেখা সৃষ্টি করে। বলি রেখা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গোলাপজল জুড়িহীন। এক চামচ দই, অলিভ অয়েল ও গোলাপজলের মিশ্রণ মুখে লাগান।
-১০থেকে ১৫টি তুলসী পাতার সাথে ২০০ মিলি গোলাপ জল যোগ করুন। একটি স্প্রে বোতলে এই তরল সঞ্চয় করে ফ্রিজে রাখুন। একটি দীর্ঘ ক্লান্ত দিন শেষে এটি স্প্রে করুন পুরো শরীরে।দেখবেন শরীর অনেক ঠাণ্ডা হবে।এই তরল রোদে পোড়ার প্রভাব রোধ করে এবং ত্বকে লাল ফুসকুড়ি থাকলে তা নিরাময় সহায়তা।
-ত্বকের ডেড সেল অর্থাৎ মৃত কোষ পরিষ্কারের জন্যও গোলাপ জল আদর্শ প্রাকৃতিক উপাদান। মৃত কোষ পরিষ্কার করে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে মুলতানি মাটি, গোলাপজল, কলা এবং মধু নিয়ে প্যাক তৈরি করে লাগান। টোনার হিসেবেও গোলাপজলের তুলনা নেই। আধা কাপ গোলাপজল, একটি পাতি লেবুর রস এবং এক ফোঁটা মধুর মিশ্রণ লাগান দেখবেন টোনার হিসেবে চমৎকার কাজ দিচ্ছে।
-ত্বকে বাড়তি উজ্জ্বলতা আনতে চাইলে এক পিস পাউরুটি দুধে ভিজিয়ে চটকে নিন। এতে মেশান দু’চামচ পেঁপে বাটা, এক চামচ আপেল বাটা, এক চামচ গোলাপজল, এক চামচ মধু। মিশ্রণটি মুখে লাগান। শুকিয়ে যাবার পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
-বিটরুট ছোট ছোট পিস করুন তারপর রোদে শুকিয়ে নিন।তারপর মিহি করে গুঁড়া করুন।আপনার ঠোঁটের প্যাক তৈরি করতে ১ চা চামচ এই বীটরুট গুঁড়া গোলাপ জলের সাথে মেশান। পুরো মিশ্রণটি ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। এই প্রক্রিয়া অবিলম্বে আপনার ঠোঁট নরম গোলাপী রঙের আভা এনে দিবে।
-গোলাপ জলের কয়েক ফোঁটা আপনার ত্বক নরম ও নমনীয় হতে সাহায্য করবে, তাই দৈনন্দিন ক্রিমে তা যোগ করা যেতে পারেন।
-চালের গুঁড়া দিয়ে স্ক্রাবিং সব ধরনের ত্বকের জন্যই ভালো। চালের গুঁড়ার সাথে গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখ এবং সারা শরীরে লাগান। এরপর ভালোভাবে ত্বক মাসাজ করুন। বিশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
-কিছু মেথি গুঁড়া নিন।এর সাথে আরও নিন গ্লিসারিন এবং গোলাপজল। চুলে খুশকি থাকলে এটি ব্যবহার করুন।গোলাপজলে ভিটামিন বি৩,সি,ডি এবং ই থাকে যা মাথার ত্বকের ছত্রাক নিরাময়ে সাহায্য করে।
-প্রাকৃতিক উপায়ে চুল কন্ডিশন করতে শ্যাম্পু করার পর চুলে গোলাপজল ম্যাসেজ করতে পারেন।
-প্রতিদিন শ্যাম্পুর সাথে গোলাপজল মিশিয়ে নিন এতে আপনার চুল হবে নরম এবং সতেজ।
-ব্রণ, র্যাশের হাত থেকে মুক্তি পাবার কার্যকরী একটি উপদান হলো গোলাপজল। তৈলাক্ত ত্বকে ধুলো, ময়লা, বালি, মটি ইত্যাদি জমে ব্রণ, র্যাশ তৈরি করে। এসব অনাকাংখিত যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অর্ধেক আপেল, দু’টেবিল চামচ বার্লি, ডিমের সাদা অংশ, এক লিটার গোলাপজল নিন। আপেল ও বার্লি গোলাপ পানিতে অল্প আঁচে সেদ্ধ করুন। ঘন হলে ডিমের সাদা অংশ দিয়ে নাড়তে থাকুন যতোক্ষণ না মসৃণ হয়ে যায়। এবার ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে নিন। ঠাণ্ডা হলে ব্রণের উপর লাগিয়ে নিন।
– ত্বকের লাল ফুসফুঁড়ি থেকে মুক্তি পাবার জন্য তরমুজের রস, চন্দন বাটা, ময়দা ও গোলাপজলের মিশ্রণ লাগিয়ে নিন। অল্প শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন।
-ব্ল্যাকহেডস প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে গোলাপজল। শসা, তুলসী, গোলাপজল ও নিম পাতার মিশ্রণ ব্যবহার করলে ব্ল্যাক হেডসের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।
-ত্বক শুষ্ক ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ত্বকে পুষ্টির যোগান দিয়ে, শুষ্কতা ও ফেটে যাওয়ার হাত থেকে আপনাকে পরিত্রাণ দিতে পারে গোলাপজল। এ ক্ষেত্রে তিন চামচ গাজর বাটা, দু’চা চামচ বেসন, দু’চা চামচ মধু ও এক চামচ গোলাপজলের মিশ্রণটি মুখে লাগান।
রূপচর্চায় প্রচলিত প্রসাধনী সামগ্রীর রাসায়নিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ত্বকের,চুলের নানা ধরনের ক্ষতি হয়। যে কারণে আজকাল প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারে অনেকেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন।এক্ষেত্রে রূপচর্চায় প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ গোলাপজলকে অনেকে খুব সহজেই নিয়মিতভাবে ব্যবহারের জন্য বেছে নিতে পারেন।
লিখেছেন – রোজেন
ছবি – সাটারস্টক






