শীতে খুশকি মুক্ত ঝলমলে চুল - Shajgoj

শীতে খুশকি মুক্ত ঝলমলে চুল

Sanzida Tonni

খুশকি আমাদের সবার কাছেই অনেক বড় আতঙ্কের নাম। শুধু তৈলাক্ত স্কাল্প নয়, যাদের শুষ্ক স্কাল্প তারাও এর শিকার হয়ে থাকেন। গুটি গুটি পায়ে শীত এগিয়ে আসছে। এ সময়ে খুশকি যেন বাঁধ ভেঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে পুরোটা চুল জুড়ে। ফলাফল মাথা থেকে প্রচুর পরিমাণে চুল ঝরে যাওয়া। শীতকালে এর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো আমরা মোটামুটি সবাই শীতে গরম পানি দিয়ে গোসল করি যার কারণে মাথার স্কাল্প শুষ্ক হয়ে যায়। এ কথা হয়ত আমরা অনেকেই জানি না যে খুব বেশি শীত বা খুব বেশি গরমে খুশকির উৎপাত অনেক বেড়ে যায়। যদি আপনি কেমিকেল প্রোডাক্ট ব্যবহার না করে হাতের কাছে থাকা উপাদান দিয়ে প্রাকৃতিক ভাবে খুশকির হাত থেকে মুক্তি পেতে চান তবে ধৈয্য ধরে পুরোটা আর্টিকেল পড়ে ফেলুন,আপনি অবশ্যই উপকৃত হবেন।

মেথিঃ

২/৩ টেবিল চামচ মেথি সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন খুব ভালো ভাবে পিষে নিবেন। তারপর এর সাথে এক টেবিল চামচ টক দই ও ১ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে রাখুন ৩০/৩৫ মিনিট। পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করুন। সপ্তাহে একবার করে করুন।

নিম পাতাঃ

নিম পাতা খুশকির জন্য অত্যন্ত উপকারী ঘরোয়া উপাদান।এর ব্যবহারও খুব সহজ। ২ মুঠো নিম পাতা ৪/৫ কাপ গরম পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে পানিটি ছেঁকে চুল ধুয়ে নিতে পারেন অথবা আপনি যদি চান তাহলে কাঁচা নিম পাতা ব্লেণ্ড করে মাথার তালুতে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ বার করুন।

লেবুঃ

লেবু এমন এক উপাদান যা ত্বক, চুল সব কিছুর জন্য উপকারী। তবে সরাসরি লেবুর রস কখনই লাগাবেন না। কেননা লেবুর রসে থাকা এসিড উপকারের বদলে অপকার করতে পারে। ৩/৪টি লেবুর খোসা ছাড়িয়ে ৪-৫ কাপ পানিতে ২০ মিনিট সেদ্ধ করে নিন। ঠাণ্ডা হলে এই সলিউশন দিয়ে শ্যাম্পু করার পর চুল ধুয়ে ফেলুন। খুশকি থেকে মুক্তির জন্য আরেকটি প্যাকের কথা বলছি। ১ চা চামচ লেবুর রসের সাথে ৫ চ চামচ নারকেলের তেল ভালো করে ফেটিয়ে নিন। তারপর মাথার তালুতে লাগিয়ে ৩০-৩৫ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। লেবুর রস খুশকি দূরীকরণের জন্য খুবই উপকারী ঘরোয়া উপাদান। এটি স্কাল্প থেকে ফ্লেক পরিষ্কার করে দেয়।

টি-ট্রি অয়েলঃ

এই তেলটি যদিও আমাদের দেশে পাওয়া একটু কষ্টকর, তবে the body shop এ এই তেলটি পাবেন। যখন মাথার স্কাল্পে অনেক বেশি তেল নিঃসরণ হয় তখন খুশকির উপদ্রব দেখা দেয়। তবে কিছু তেল আছে যা এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। টি- ট্রি অয়েল তাদের মধ্যে অন্যতম। এই তেল এমন পাতা থেকে এক্সট্রাক্ট করা হয় যার ভেতর ফাঙ্গিসাইডাল প্রপার্টি আছে। এক টেবিল চামচটি- ট্রি অয়েল, ১ কাপ গরম পানি আর একটি স্প্রে বোতল লাগবে। স্প্রে বোতলে গরম পানি নিন। এর সাথে অয়েল দিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিন। শ্যাম্পু করার পর পুরো চুলে স্প্রে করে ম্যাসেজ করুন। অতিরিক্ত ময়েশ্চার শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন। কিন্তু পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন না।

ডিমের সাদা অংশঃ

এই মাস্কের জন্য আগে একটি কথা বলে নিই। মাস্কটিতে আমরা টক দই ব্যবহার করব কিন্তু এমন দই নিবো যেটি ২-৩ দিন ধরে ফ্রিজে না থেকে বাইরে খোলা অবস্থায় ছিল। প্রথমে একটি ডিমের সাদা অংশ ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এর সাথে ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ১ টেবিল চামচ মধু, ২ টেবিল চামচ দই। এই প্যাকটি চুলে লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট পর হার্বাল শ্যাম্পু দিয়ে চুলটা ধুয়ে ফেলুন।

ভিনেগারঃ

ভিনেগার খুশকির হাত থেকে মুক্তির অন্যতম প্রধান উপাদান। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে এতে থাকা পটাসিয়াম এবং এনজাইম ইচি স্কাল্প আর খুশকি সারিয়ে তোলে। একটি কটন প্যাডে ভিনেগার নিন। তারপর চুলে বিলি কেটে কেটে পুরো মাথায় লাগান। সপ্তাহে ২ দিন গোসলের ১ ঘণ্টা আগে লাগিয়ে রাখুন।

ক্যামফোরঃ

এই কম্পাউণ্ডটি আমরা অনেকে চিনি আবার অনেকে চিনি না। এটি মথ বল আর অ্যান্টি-ইচিং ক্রিম তৈরিতে ব্যবহার হয়। অল্প কিছু ক্যামফোর নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে মাথার স্কাল্পে দিন। প্রতিদিন এভাবে করতে থাকলে খুব দ্রুত আপনি খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

মেহেদিঃ

মেহেদি যদিও আমাদের অনেকের চুল রাফ করে দেয় তবুও মেহেদি পাতার রস চুলের অনেক সমস্যা দূর করে আর তারই রেশ ধরে খুশকির অত্যাচার থেকেও অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে এই প্যাকটি লাগানোর আগের দিন রাতে চুলে ভালো করে তেল ম্যাসেজ করে নেবেন এতে চুল রাফ হবে না। ২ চা চামচ চায়ের পাতা পানিতে ফুটিয়ে নিন। পানি ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর একে একে মেহেদি পাতার গুঁড়া বা কাঁচা মেহেদি পাতা, দই, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে নিন। তারপর এই পেস্ট চুলের গোঁড়ায় লাগিয়ে আধা ঘণ্টা পর চুল ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি মুক্ত চুলের জন্য ১৫ দিনে ১ বার প্যাকটি ব্যবহার করুন।

বেকিং সোডাঃ

বেকিং সোডা খুব ভালো অ্যান্টি-ফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে আর এর ব্যবহারও খুব সিম্পল। এক মুঠো শ্যাম্পুর সাথে এক টেবিল চামচ সোডিয়াম বাই কার্বনেট মিশিয়ে চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে একবার করে করবেন।

লেবু এবং রসুনঃ

এক টেবিল চামচ লেবুর রসের সাথে দুই টেবিল চামচ রসুন পেস্ট মিশিয়ে একটি প্যাক বানান। এই প্যাক ফ্লেক থেকে আমাদের দূরে রাখে। রসুন প্রাকৃতিক অ্যান্টি-বায়োটিক যা স্কাল্পের চারপাশে থাকা ব্যাকটেরিয়ার বংশ ধ্বংস করে। এই অ্যান্টিডেনড্রাফ ট্রিটমেন্ট চুলে ২০-৩০ মিনিট লাগিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।

পেঁয়াজের রসঃ

আমরা সবাই জানি পেঁয়াজের রস চুল গজাতে সাহায্য করে। এর আরেকটি উপকারী দিক হল খুশকি সারাতেও কিন্তু উপকারী। পেঁয়াজের পেস্ট মাথার তালুতে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন, পেয়াজের ঝাঁঝালো গন্ধ যদি আপনার জন্য অস্বস্তিকর হয় তাহলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রসও মিশিয়ে নিতে পারেন।

বেসন দইয়ের মিশ্রণঃ

খুশকি থেকে মুক্তির জন্য আরেকটি ঘরোয়া উপায় হলো ৪ টেবিল চামচ বেসনের সাথে ২ টেবিল চামচ দই মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। বেসন মাথার তালুর তেল শোষণ করে নেয়ার ক্ষমতা রাখে আর এভাবেই খুশকির সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। গোসলের আগে এই প্যাক লাগিয়ে ১ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলবেন। চাইলে শুধু মাত্র পানি দিয়েও ধুয়ে ফেলতে পারেন।

আপেলঃ

আপেলে থাকা এনজাইম ডেড স্কিন সেল দূর করে। দুই টেবিল চামচ ফ্রেশ আপেলের রস ১ চা চামচ পানির সাথে মিশিয়ে কটন প্যাডের সাহায্যে চুলের গোড়ায় লাগান। ১০-১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

জাঙ্ক ফুড খুব কম খাবেন কেননা এতে আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয়ে খুশকির আক্রমণের আশংকা থাকে। এসব ভাজা পোড়া খাবারের বদলে জিঙ্ক এবং ভিটামিন বি যুক্ত খাবার খান আর আপনার প্রাত্যহিক কিছু অভ্যাসেও পরিবর্তন আনতে হবে , যেমন- যতবার বার শ্যাম্পু করবেন তার পরপর সদ্য পরিষ্কার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে হবে। কেননা প্যাক লাগানোর পর আপনার চুল অনেকটা খুশকি মুক্ত হয়ে যায় কিন্তু আপনি যদি সেই আগের খুশকিযুক্ত বালিশের কাভার, চিরুনি আর তোয়ালে আবার ব্যবহার করেন তাহলে কিন্তু কোন লাভই হবে না।

লিখেছেনঃ রোজেন

ছবিঃ সানজিদা তম্বী

3 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort