সোনামনির খাবার নিয়ে বায়না, আর না আর না! - Shajgoj

সোনামনির খাবার নিয়ে বায়না, আর না আর না!

pic

বাচ্চাকে খাবার খাওয়ানো একটি কঠিন কাজ বলেই জানি আমরা সবাই। পৃথিবীতে মনে হয় এমন কোন মা নেই যিনি তার বাচ্চাকে খাবার খাওয়ানো নিয়ে সমস্যায় পড়েননি। সমস্যা নানাবিধ হতে পারে। এমনকি দেখা যায়, সোনামনির ভালো করতে গিয়ে মায়েরা নিজেই সমস্যা হয়ে বসে আছেন। অথচ তিনি তা বুঝতে পারছেন না। যাই হোক চলুন আলোচনা করা যাক, সোনামনির খাবার খাওয়া নিয়ে সমস্যা, এ থেকে উত্তরণের পথ ও আমাদের কৌশলময় করণীয়ঃ

কারণ জানাটা জরুরীঃ

আপনি যদি একটি সমস্যার সমাধান করতে চান তাহলে আপনাকে আগে সমস্যাটাকে ভালো ভাবে জানতে হবে, তাই না? আপনার প্রিয় সোনামনির কেন খাবারে এত অনীহা তা বোঝাটা জরুরী। বেশ কিছু কারণেই বাচ্চার খাবার খেতে অনীহা হতে পারে। বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা জনিত কারণেও এমনটা হতে পারে। কিছু কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে ক্ষুধা কম হওয়ার কারণেও অনীহা হতে পারে। পারিবারিক অশান্তিময় পরিবেশে বড় হওয়ায় শিশুদের খাবারের ইচ্ছাবোধ হারিয়ে যেতে পারে। আবার এমনটি হতে পারে যে, আপনার ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়, জানা বা অজানায় বাচ্চাটি হালকা অপুষ্টিকর খাবার খেয়ে ফেলেছে যার কারণে ওর আর মূল খাবার খেতে ইচ্ছা করছে না। যাই হোক আপনার সোনামনির খাবার না খাওয়ার কারণ আপনাকেই বের করতে হবে।

খাওয়ানো নিয়ে যত কৌশলঃ

খাবার খাওয়ানো নিয়ে নানাবিধ যন্ত্রণার কথা বাবা-মায়েরা সব সময়ই বলে থাকেন। এ সব অভিযোগের শেষ নেই। বাচ্চারা গোঁ ধরে বসে থাকে – সে খাবে না, আর মাও হাল ছাড়েন না। শুরু হয় যুদ্ধ! এ যুদ্ধে কার কতটুকু উপকার হলো বলা মুশকিল। এ ব্যাপারে আমাদের করনীয় কী হতে পারে চলুন তা নিয়ে আলোচনা করা যাক –

• বাসায় সবাই নিয়মিত একই সময়ে খাবার খেতে চেষ্টা করুন। কেননা প্রতিদিন একই সময়ে খেলে, ঠিক ঐ সময়টাতে শরীরে এক ধরনের হরমোন ক্ষরণ হয়ে জানান দেয় যে – “তুমি না এ সময়ে খাবার খেতে, এখন কেন খাচ্ছ না? আমাকে খেতে দাও।” এ কথাটা শিশুর জন্যও প্রযোজ্য। তাই ওকেও সময়মত খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। দেখবেন ও নিজে থেকেই খেতে চাইবে।

• খুব খেয়াল রাখতে হবে মূল খাবার খাওয়ার আগে যেন বাচ্চাটি ক্ষুধা নষ্ট করে এমন কোন খাবার না খায়। চিপ্স, চকলেট, মিষ্টি এ জাতীয় খাবার গুলো হালকা হলেও খুব দ্রুত ক্ষুধা নষ্ট করে ফেলে। বাচ্চা খেতে চাইলেও ওকে এগুলো দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। একান্তই যদি মূল খাবার দিতে দেরি হয়, তাহলে ওকে ফল বা ফলের জুস খেতে দিতে পারেন। ফল দ্রুত হজম হয়ে যাবে। এ কারণে মূল খাবার খেতেও বিরক্ত করবে না।

• খাবার খাওয়ানোর সময় আপনি কি খুব রাগারাগি বা চিৎকার চেঁচামেচি করেন? বাচ্চাটি কি আপনার ভয়েই খাবার খেয়ে থাকে? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে আপনি আপনার বাচ্চার বেড়ে উঠার স্বাভাবিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্থ করছেন। ভয় দেখিয়ে কিছু ফল হয়ত আপনি পাচ্ছেন! তবে ভেবে দেখুন, এক বেলা না খেলে বা কম খেলে আপনার বাবুটি হয়ত কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়বে অথবা কিছুই হবে না। কিন্তু ওর ঠিক ঠাক বেড়ে উঠায় সমস্যা হলে আপনার প্রিয় সন্তানটি সারা জীবনই ভুগবে। যদিও কিছু কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে খাবার খাওয়ানোর সময় মাথা ঠাণ্ডা রাখাই কঠিন হয়ে পরে। তবুও!

• আপনার আদরের সোনাবাবুটি কোনমতেই খাবার খেতে চায় না, তাইতো? খাওয়াতে গেলে জোর করা ছাড়া আর কোন বিকল্পই থাকে না? তাহলে এভাবে একটু চেষ্টা করে দেখুন, ওর ক্ষুধা লাগা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আর এটা নিশ্চিত করুন, ক্ষুধা লাগার আগ পর্যন্ত হালকা কোন খাবার যেন না খায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মায়েরা এটা বিবেচনায় রাখেন না যে বাচ্চাটির আদৌ কোন ক্ষুধা লেগেছে কিনা। বাবুটি যদি কখনও নিজের মুখে বলে ফেলে তার ক্ষুধা লেগেছে, তাহলে সাথে সাথে তাকে খেতে দিন। দেরি করবেন না, কেননা তাতে ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

• বাচ্চাদের খাবার খাওয়ানোর জন্য মায়েরা অনেক সময় অনেক রকমের প্রমিজ করে থাকে বাচ্চাদের সাথে। যেমন – তুমি যদি ডিনার ভালো ভাবে শেষ কর, তাহলে তোমাকে অমুক জিনিস দেয়া হবে। হ্যাঁ, এটা একটা ভালো কৌশল হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, যে প্রমিজটি আপনি করেছেন তা যেন রাখতে পারেন। না হলে আপনার প্রতি ওর স্বাভাবিক বিশ্বাসে ঘাটতি হতে পারে। পরে তখন আপনার এই পদ্ধতি আর কাজ করবে না।

• ক্ষুধা লাগার জন্য বাচ্চাকে খেলতে দিন। নানা রকম শারীরিক শ্রমের খেলা রয়েছে যা আপনার সন্তানের ক্ষুধা বাড়াতে এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। দেখবেন সে তখন গাপুস-গুপুস করে খাবে।

• বাচ্চাটির ঠিকঠাক ঘুম যেন হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। কারণ ভালো ঘুম না হলে, ও নানা ভাবে জ্বালাবেই। অনেক সময় বাচ্চারা ক্লান্ত থাকায়, না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। অনেক মায়েরা এই অমানবিক কাজটি করেন যে, ওর ঘুম ঘুম অবস্থায় বা ঘুম থেকে টেনে তুলে জোর করে খাওয়াতে চেষ্টা করেন। এটা না করে, ওর ঘুম থেকে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। দেখবেন উঠেই খাবার খেতে চাইবে।

• গল্প শোনার ব্যাপারে বাচ্চাদের সবসময়ই আগ্রহ থাকে। তাই গল্প শোনাতে শোনাতে ওকে খাওয়াতে পারেন। যে কোন ধরনের গল্প শুনতে শুনতে দেখবেন ও খাবে।

• খাবার সাজানোতে একটু ভিন্নতা আনুন। একই খাবার একটু ভিন্নভাবে সাজিয়ে দিন, দেখবেন ও মুগ্ধ হয়ে খাবে। খাবার সাজানোতে যেমন ভিন্নতা আনবেন, তেমনি খাবারে আনতে হবে ভিন্নতা। নতুন খাবার তৈরি করে দিন দেখবেন মজা করেই আপনার বাচ্চাটি খাচ্ছে।

• অনেক বাচ্চা আছে, যে খাবার ব্যাপারে কোন অভিযোগ নেই। দেখতে বেশ নাদুস-নুদুস। এমন বাচ্চার বাবা-মায়ের মনে রাখা দরকার, দেখতে নাদুস-নুদুস মানে কিন্তু সুস্থতা নয়। ওর এই বাড়তি ওজনই কিন্তু ওর কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই আগে থেকেই সর্তক হওয়া উচিত, তাই নয় কি?

খাবার খাওয়ানো নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা বন্ধ করুনঃ

রুবেল হোসেন ও তার স্ত্রী ভীষণ বিপদে পড়েছেন তাদের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে। খাবার ব্যাপারে বাচ্চাটির খুব অনীহা। সারাদিন সে হাবিজাবি খাবে কিন্তু মূল খাবার তার গলা দিয়ে নামে না। মাও ছাড়েন না। তাইতো মা সারাদিন খাবার প্লেট নিয়ে বাচ্চার পিছে পিছে ঘুরেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! অবশেষে তারা ডাক্তারের কাছে গেলেন বাচ্চাকে নিয়ে……

ডাক্তারঃ কী সমস্যা বাচ্চার?

বাবা-মাঃ বাচ্চা কিছুই খাতে চায় না।

ডাক্তারঃ বাচ্চার কিছুদিনের মধ্যে কোন প্রকার জ্বর হয়েছে?

বাবা-মাঃ না।

ডাক্তারঃ বাচ্চা কি খুব কান্নাকাটি করে?

বাবা-মাঃ না।

ডাক্তার সব ভালো ভাবে চেক-আপ করলেন। কিছু প্রয়োজনীয় টেস্ট করালেন। সব কাজ শেষ করে তারপর বাবা-মাকে বললেন,

ডাক্তারঃ আপনাদের কি সুখে থাকতে ভূতে কিলায়?

বাবা-মাঃ মানে?

ডাক্তারঃ ও তো পুরাপুরি সুস্থ। এরকম সুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে হসপিটালে আসছেন কেন?

এরকম ঘটনা আমরা প্রায়ই দেখে থাকি। সত্যি-ই অযথা বাচ্চার খাবার খাওয়া নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বন্ধ করুন। হ্যাঁ, চেক আপের জন্য ডাক্তার দেখাবেন। তবে সেটা যেন বাড়াবাড়ি না হয়।

সবশেষে আপনার অতি আদরের সোনামণির সার্বিক সুস্থতা এবং ব্যক্তি জীবনের সফলতা কামনা করছি।

লিখেছেনঃ মৌনতা

ছবিঃ ওমেনওয়ার্ল্ড.অর্গ

10 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort