শীতে শ্বাসকষ্ট এর লক্ষণ, উপসর্গ ও প্রতিরোধের উপায় কী হতে পারে?

শীতে শ্বাসকষ্ট এর লক্ষণ, উপসর্গ ও প্রতিরোধের উপায় কী হতে পারে?

Thumbnail

হাটি হাটি পা পা করে শীতের পাতলা চাদর তার হিমশীতল পরশে আমাদের আলিঙ্গন করছে। আসন্ন শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে ঠিক একই সাথে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও অ্যালার্জিক রাইনাইটিস এর মতো শ্বাসকষ্টের সাথে লড়াই করছে বহু মানুষ। ঠান্ডা, শুষ্ক বাতাস এবং ঘরে বাইরে উড়ে বেড়ানো ধূলিকণার কারণে শীতকালে এই রোগের প্রাদূর্ভাব বেশি দেখা যায়। তাই শীতে শ্বাসকষ্ট এর লক্ষণ, উপসর্গ, প্রতিরোধের উপায় ও চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে রাখা উত্তম।

শীতে শ্বাসকষ্ট এর লক্ষণ ও উপসর্গ

১) কারো যদি শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে থাকে তবে তার নিঃশ্বাসের দুর্বলতা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, বুকে আঁটসাঁট ভাব, দ্রুত শ্বাস–প্রশ্বাস ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

২) অ্যাজমা বা হাঁপানি থেকে থাকলে শীতের শুরুতে এর লক্ষণগুলো প্রকট আকার ধারণ করে। ঘন ঘন কাশির প্রবণতা বেড়ে যায় বিশেষ করে রাতে বা ভোরের দিকে। সেই সাথে বুকে টান ও চাপ ধরা ভাব থাকতে পারে।

৩) অ্যালার্জিক রাইনাইটিস এর সমস্যা থেকে থাকলে ক্রমাগত হাঁচি হতে পারে সেই সাথে সর্দি বা নাক বন্ধ থাকতে পারে। চোখে চুলকানি বাড়তে পারে, চোখ থেকে পানি ঝড়ার প্রবনতাও দেখা যায়।

মাস্ক ব্যবহার করুন

এই সমস্যার কারণসমূহ কী হতে পারে

১) শীতের বাতাস প্রায়শই শুষ্ক ও ঠান্ডা থাকে। নাকের ভেতর রক্তনালী রয়েছে যা ফুসফুসে পৌঁছানোর আগে বাতাসকে উষ্ণ এবং আর্দ্র করে, কিন্তু মুখ দিয়ে সরাসরি নেয়া বাতাস ঠান্ডা এবং শুষ্ক থাকে এতে শ্বাস নিলে শ্বাসনালীতে অস্বস্তি হয় যার ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

২) ঘরের অভ্যন্তরে অতিরিক্ত ধুলোবালি যেমন আসবাবপত্রের ধুলো, পোষা প্রানীর গায়ের লোম, অথবা নানান জাতের ছত্রাক বাতাসে উড়ে বেড়ায়। এই ধরনের ধুলোবালির মধ্যে থাকলে শ্বাসকষ্ট বেশি হতে পারে।

৩) ঠান্ডা এবং ফ্লু ভাইরাস শীতকালে বৃদ্ধি পায়, এবং শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় যা হাঁপানি এবং অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের প্রভাবকে খারাপ করতে পারে।

৪) শ্বাসনালী একধরনের প্রতিরক্ষামূলক শ্লেষ্মা বা মিউকাস স্তর দিয়ে আবৃত থাকে, যা ধূলিকণা ফুসফুসে প্রবেশ করতে দেয় না। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায়, শরীর বেশি মিউকাস তৈরি করে, তবে এটি স্বাভাবিকের চেয়ে ঘন এবং আঠালো হয়ে থাকে। অতিরিক্ত মিউকাস, সর্দি বা অন্য সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।

শ্বাসকষ্ট ঝুঁকির কারণ

  • পরিবারে রক্ত সম্পর্কিত কারো যদি হাঁপানি বা অ্যালার্জিক রাইনাইটিস এর ইতিহাস থেকে থাকে তাহলে এমন ব্যক্তিদের হাঁপানি বা অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
  • যারা নিয়মিত দূষিত পরিবেশে থাকে, তামাকের ধোঁয়া বা কর্মক্ষেত্রে বিষাক্ত কালো ধোয়ার সংস্পর্শে আসে তাদের শ্বাসনালী দুর্বল হয়ে যায় এবং শীতে বেশি সংবেদনশীল হয়ে পরে।
  • শিশু এবং প্রবীণদের শীতকালে শ্বাসকষ্ট জনিত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়।

ফ্লু ভ্যাকসিন নিন

এই রোগ প্রতিরোধের উপায়

  • ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে গরম পোশাক পরুন এবং নাক ও মুখ ঢেকে রাখার জন্য স্কার্ফ ব্যবহার করুন।
  • ঘরের ভেতর নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। বায়ু চলাচল করতে পারে এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে ঘরে ভ্যপসা ভাব না হয় বা ধূলো না জমে।
  • এখন বিভিন্ন রকম ফ্লু ভ্যাকসিন পাওয়া যায়, ফ্লুর ভ্যাকসিন নিলে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি কমতে পারে।
  • যতটা সম্ভব তামাকের ধোঁয়ার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। নিজে না খেলেও ধূমপায়ীদের থেকে দূরে থাকতে হবে। সিগারেটের ধোঁয়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে শ্বাসযন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি করে।
  • শ্বাসযন্ত্রের মিউকাস মেমব্রেনকে আর্দ্র রাখতে প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন।

এই রোগের চিকিৎসা

ঔষধ

হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের লক্ষণ থাকলে ব্রঙ্কোডাইলেটর ও কর্টিকোস্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।

অ্যান্টিহিস্টামিন

এই জাতীয় ঔষধগুলো হিস্টামিন নিঃসরণকে বাধা দিয়ে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস এর লক্ষণ উপশম করতে সাহায্য করে।

ইমিউনোথেরাপি

শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশি গুরুতর হলে, নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের প্রতি সহনশীলতা তৈরি করতে অ্যালার্জেন ইমিউনোথেরাপি নেয়া যেতে পারে।

শীতে শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে জীবনধারায় পরিবর্তন আনুন

জীবনধারা পরিবর্তন

যে সমস্ত কারণে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা শুরু হয় সেই কারণগুলোকে চিহ্নিত করে তা এড়িয়ে চলতে হবে। ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ ও ধুলাবালি মুক্ত রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখলে অনেকক্ষেত্রেই নিরাপদ থাকা যায়।

শীতে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, এবং অ্যালার্জিক রাইনাইটিস যাদের আছে তাদের জন্য শীত তার নিজস্ব চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। লাইফস্টাইল পরিবর্তন, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে শীতের মাসগুলোতে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হয়। যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ গুরুতর শ্বাসকষ্টের উপসর্গের সম্মুখীন হন, তবে ব্যক্তিগত সুরক্ষা এবং যত্নের জন্য একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ছবিঃ সাটারস্টক।

0 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort